নোনতা খাবার খাওয়া কমিয়ে কম ক্যালোরির সুষম খাবার খেতে শুরু করুন৷ ছবি: শাটারস্টক।
যে কোনও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে এক চা চামচের কম নুন খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ নুনের মূল উপাদান সোডিয়ামের উর্ধ্বসীমা দিনে ২ গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ, স্ট্রোকের চান্স অনেক কমে যায়৷ আবার এই সব অসুখের হাত থেকে মুক্তি পেতে দিনে কম করে ৩৫১০ মিলিগ্রা পটাশিয়াম খাওয়া দরকার৷ কিন্তু সমস্যা হল, সোডিয়াম যে কেবল নুনেই আছে এমন তো নয়, প্রায় সব পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারেই সে আছে বেশ ভাল মাত্রায়৷ যেমন ধরা যাক, দুধ বা আলু৷ অন্য সাধারণ খাবারের সঙ্গে ৪–৫টি মাঝারি মাপের আলু বা ৫–৬ গ্লাস দুধ খেলে পটাশিয়ামের এই বিপুল চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব৷
আবার সোডিয়াম কম খেতে চাইলে এত আলু বা দুধ খাওয়া একেবারে চলবে না৷ নুন বাদ দিয়ে অন্যান্য প্রায় সব খাবারের ক্ষেত্রেই এই একই কথা সত্যি৷ ফলে একটি উপাদানকে কমিয়ে আর একটিকে এতখানি বাড়ানো কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ ‘ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল’-এ প্রকাশিত ‘ডায়াটারি ন্যাশনাল সার্ভে’-তে দেখা যাচ্ছে আমেরিকাতে ১ হাজার জন মানুষের মধ্যে ৩ জন এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছোতে পারছেন৷ ফ্রান্সে পারছেন হাজারে ৫ জন, মেক্সিকোতে দু’হাজারে তিন জন ও ইংল্যান্ডে হাজারে এক জন৷ অর্থাৎ এক ঢিলে দু’পাখি মারতে পারছেন না অধিকাংশ মানুষই৷
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রয়োজন মতো পটাশিয়াম পেতে গেলে নুন ও নোনতা খাবার খাওয়া কমিয়ে কম ক্যালোরির সুষম খাবার খেতে শুরু করুন৷ এতেই সব দিক বজায় থাকবে৷
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের বিলে দেদার খরচ? এ সব কৌশলে মানলেই স্বস্তি পকেটের
পটাশিয়ামের খাতিরে সোডিয়াম
সুষম খাবার খেলে শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি হয় না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে এক–আধটু বেশি সোডিয়াম শরীরে এসে যেতে পারে৷ তাতে তত ক্ষতি নেই৷ কারণ তাকে ঝড়িয়ে ফেলতে দিনে ৪০–৪৫ মিনিট ঘাম ঝড়ানো ব্যায়াম করাই যথেষ্ট৷ আমাদের মতো গরমের দেশে এমনিও ঘামের কমতি নেই৷ ফলে কখনও আবার পরিস্থিতি এমন হয় যে আলাদা করে নুন খাওয়ার প্রয়োজন হয়৷ বিশেষ করে যাঁরা নানা রকম ওষুধপত্র খেয়ে হাইপ্রেশারকে বশে রাখেন, তাঁরা যদি প্রচুর ঘেমেনেয়ে যান, প্রেশার অনেক কমে যেতে পারে৷ তখন অতিরিক্ত নুন খেয়ে তাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে না নিয়ে এলে যথেষ্ট বিপদ৷ ডায়েরিয়া হলেও এক ব্যাপার৷ অতিরিক্ত নুন তখন প্রাণ বাঁচাতে কাজে আসে৷ কাজেই নুনের ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে পটাশিয়ামের জন্য কোনও দু’রকম নিয়ম নেই৷ কারণ সার্বিক সুস্থতার জন্য, বেশ কিছু অসুখবিসুখকে বশে রাখতে শরীরে এর পরিমাণ ঠিক রাখা একান্ত দরকার৷
২ গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন নুনের পরিমাণ। ছবি: শাটারস্টক।
পটাশিয়ামের কাজ
রক্তচাপ বশে রাখতে ওষুধ খাওয়া ও অন্যান্য নিয়ম মানার পাশাপাশি পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেলে ভাল কাজ হয়৷ রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সরাসরি পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের কোনও ভূমিকা না পাওয়া গেলেও দেখা গিয়েছে, যে সব খাবার খেলে কোলেস্টেরল কমে তাতে পটাশিয়াম বেশি থাকে৷ অর্থাৎ এই জাতীয় খাবার খেলে কোলেস্টেরলকে বশে রাখা সহজ হয়৷ হার্টও ভাল থাকে৷ অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা বা অ্যারিদমিয়া নামের রোগ থাকলে চিকিৎসার পাশাপাশি পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান৷ হৃদপেশির কার্যকারিতা বেড়ে চটপট রোগের উন্নতি হবে৷ হাড় ও পেশির স্বাস্থের জন্যও পর্যাপ্ত পটাশিয়াম খাওয়া দরকার৷ কারণ দেখা গিয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাবার, মাংস ইত্যাদি বেশি খেলে মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস নামে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যার পরিণতিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নাইট্রোজেন তৈরি হয় শরীরে৷ মাংসপেশির ক্ষয়–ক্ষতির মূলেও এর হাত থাকে৷ পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেলে এই ব্যাপারটা অনেকটাই ঠেকানো যায়৷
আরও পড়ুন: হেঁটেই ঝরবে মেদ, তবে হাঁটার সময় আর পদ্ধতি না জানলে উপকার নেই কিছুই!
পটাশিয়ামের উৎস
সোডিয়াম-পটাশিয়ামের পর্যাপ্ত উৎস ডাবের জল। এ ছাড়াও কিছুটা মেলে পালং শাক, আলু, মিষ্টি আলু, টমেটো, মাশরুম, স্কোয়াশ, বিট, মুলো, সোয়াবিন, ক্যান্ড সাদা বিন, মুগ ডাল, দুধ, দই, নাসপাতি, কলা, আম, জাম, কমলা, পেঁপে, অ্যাভোক্যাডো, পেস্তা, কিসমিস, অ্যাপ্রিকট, প্রন, মাছ, চিকেন, রেড মিট ইত্যাদিতে৷ অন্য শাকসব্জি–ফলেও আছে যথেষ্ট৷ কাজেই সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে শরীরে এর অভাব হবে না।