Eating Habits In Children

বাচ্চাদের চিবিয়ে খাওয়া জরুরি

খাবার ভাল ভাবে হজম হওয়ার জন্য চিবিয়ে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাই একদম ছোট বয়স থেকেই এই অভ্যেস তৈরি করতে হবে।

Advertisement

ঊর্মি নাথ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:০২
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাচ্চা চিবিয়ে খাচ্ছে না, অভিভাবকদের কাছ থেকে এই অভিযোগ পাননি এমন শিশুচিকিৎসক বা পুষ্টিবিদ কম। যুক্তি বলছে, একটি বাচ্চা তখনই চিবোবে, যখন শক্ত বা আধা শক্ত খাবার তার মুখে যাবে। তার মস্তিষ্ক তাকে চিবোতে বাধ্য করবে। না হলে খাবারটা সে গিলতে পারবে না। এই ভাবে সে চিবোতে শিখবে। কিন্তু এই শেখার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় বেশ কিছু অভ্যেস, যার সিংহভাগ দায় অভিভাবকের।

Advertisement

কিছু বাচ্চা কেন চিবিয়ে খেতে পারে না

দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু বাচ্চা একটা বয়সের পরেও ভাত, ফল, তরকারি চিবিয়ে খাচ্ছে না। বেগতিক দেখে মায়েরা তাদের সব খাবারই পিষে প্রায় তরল করে দেন, যাতে গিলে খেতে পারে। বাচ্চার না চিবোনো কি কোনও রোগ বা সমস্যা? উত্তরে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি বললেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে এটা রোগ। যাদের মস্তিষ্কে দুরারোগ্য কোনও সমস্যা রয়েছে, তারা চিবিয়ে খেতে পারে না। যেমন সেরিব্রাল পলসি দ্বারা আক্রান্তরা চিবোতে পারে না। এদের মুখে খাবার দিলে তারা গিলতে পারে। অনেকের গিলে খাওয়ারও ক্ষমতা থাকে না। এদের বাদ দিলে স্বাভাবিক সুস্থ বাচ্চা যদি একটা বয়সের পরে না চিবোয়, তা হলে সেটা তাদের বিহেভিয়োরাল বা ফাংশনাল প্রবলেম। ছোটবেলা থেকে অভ্যেস করানো হয়নি।” তবে অভিভাবকেরা সচেতন হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটাও স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিছু বাচ্চা (৩-৪ বছরের) ভাত-ডাল কিছুতেই চিবোতে চায় না। কিন্তু তাকেই চিপস, কেক, বিস্কুট, চকলেট দেওয়া হলে কামড়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।’’

Advertisement

অনেকে মনে করেন দাঁত দেরিতে বেরোনোর জন্য শিশুরা চিবিয়ে খেতে পারে না। ‘‘কিছু শিশুর দাঁত দেরিতে ওঠে এবং তার জন্য কিছু ক্ষেত্রে চিবিয়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাসে বিলম্ব হয়। কিন্তু এটা ঠিক যে, চিবোনোর অভ্যেস যদি একেবারেই তৈরি না হয় তা হলে দাঁত ঠিক সময়ে গজানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। না চিবোনোর ফলে হজমের সমস্যা হয়। কারণ খাবার চিবোনোর ফলে মুখে যে লালা নির্গত হয় তার মধ্যে কিছু এনজ়াইম থাকে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। না চিবোলে গোটা খাবার পাকস্থলীতে চলে যায়। ফলে পরিপাকে সমস্যা হয়, তখন বাচ্চারা বমি করে দেয়। তাই চিবোনোর অভ্যেস করানোটা জরুরি, না হলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেবে,’’ বললেন ডা. গিরি।

অভিভাবকদেরই তৈরি করতে হবে অভ্যেস

একদম ছোট বয়স থেকে বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যাপারটা মা বা বাড়ির অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। শুধু পুষ্টিকর খাবার নয়, সে কী ভাবে খাচ্ছে সেটাও খেয়াল রাখা জরুরি। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, ‘‘ছ’মাসের পর থেকে শরীরের জন্মগত আয়রনের ঘাটতি হতে শুরু করে যদি শিশুটি ঠিক মতো খাবার না পায়। প্রোটিনের অভাবেও অপুষ্টি হতে পারে। তাই ছ’মাস পর্যন্ত মায়ের দুধের পরে সাধারণ খাবার দিতে হবে। প্রথমে লিকুইড, যেমন দুধ, ফলের রস। তার পর ধীরে ধীরে সেমি-সলিড, যেমন খিচুড়ি, সুজি, পায়েস, ডিমের নরম কুসুম, আপেল সিদ্ধ ইত্যাদি। আর একটু বয়স হলে নরম খাবার, ভাত নরম করে ডাল দিয়ে মেখে দেওয়া, চিকেন ও সবজি বেশি করে সিদ্ধ করে নরম করে দেওয়া ইত্যাদি। দু’বছরেই সফট থেকে সলিড খাবে। যেমন ঘরে বাকিরা খায়, সেই খাবারই একটু নরম করে মেখে দিন। দু’বছর বয়স থেকে খাবারের পরিমাণও একটু একটু করে বাড়াতে হবে। এমনকি দু’বছর অবধি বাচ্চাদের কোনও সাপ্লিমেন্ট না দেওয়াই উচিত। যদি দিতেই হয় তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দিন।’’ একটি বাচ্চার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যেস কী ভাবে তৈরি হবে তা নির্ভর করে মা ও বাকি অভিভাবকদের উপরে। তাই তাঁদের কতগুলি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

  • সাধারণত আট-ন’মাস থেকে দাঁত ওঠার জন্য মাড়ি সুড়সুড় করে, তাই শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই কামড়ায়। এই সময়েই বাচ্চাকে নরম খাবারের মাধ্যমে চিবোনো শেখাতে হবে। যেমন খিচুড়ি বা পাতলা করে সুজি তৈরি করে দিন, সেটাকে মিক্সিতে পেস্ট করবেন না। দাঁত ওঠার সময়ে তার হাতে এক টুকরো পাকা পেয়ারা, পেঁপে, আম, খেজুর, মুড়ি দিন যাতে সে কামড়াতে শেখে। তার সামনে নিজেরাও ফল কামড়ে খান। সে দেখে শিখবে।
  • যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিত। বাচ্চারা যা দেখে তাই অনুকরণ করে। তাই খাওয়ার সময়ে মা বা যিনি খাওয়াচ্ছেন তাঁকে চিবিয়ে খেয়ে দেখাতে হবে। বাড়িতে আরও বাচ্চা থাকলে তাদের নিয়েই একসঙ্গে খেতে বসুন। নরম খাবার খাওয়ার সময় থেকেই নিজে হাতে খেতে শেখান। বাচ্চা খাবার ফেলবে, ছড়াবে, তার খেতে সময় লাগবে, কিন্তু সে খেতে শিখে যাবে।
  • এখন অধিকাংশ মা কর্মরতা। হাতে সময় কম থাকায় অনেকেই খাবার মিক্সিতে পেস্ট করে তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেন। ‘‘এতেই সমস্যার সূত্রপাত। মা যে সময়টা পাচ্ছেন সে সময়ে তিনি দুধ বা ফলের রস খাওয়ান। সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে খাওয়ার ব্যাপারটা কেয়ারগিভার বা বাড়ির অন্য কেউ করুন। টিভি বা মোবাইল দেখতে দেখতে বাচ্চাকে খাওয়াবেন না বা বাচ্চার সামনে বাবা-মা টিভি বা মোবাইল দেখতে দেখতে খাবেন না। এটা বদভ্যেস। মস্তিষ্ক খাবারের দিকে যাবে না, ফলে একটি বাচ্চা মন দিয়ে চিবিয়ে খাবে না, পরিণতি পরিপাকে সমস্যা,’’ বললেন পুষ্টিবিদ কোয়েল।
  • চিবোনোরও পদ্ধতি আছে। সামনের সারির দাঁত দিয়ে সলিড খাবার ভাঙতে শেখান। চিবোবে দু’পাশের মাড়ির ভিতরের দিকের দাঁত দিয়ে।
  • খাবারে দিন গাজর, কুমড়ো, বিনস, বেল পেপার, টম্যাটোর মতো রঙিন আনাজ। ডিম সিদ্ধ, কাঁটা ছাড়া মাছ দিন। তবে শুধুই সিদ্ধ নয়, প্রয়োজনে অল্প মাখন দিয়ে ভেজে, ড্রাই ফ্রুটসের গুঁড়ো মিশিয়ে দিন, এতে স্বাদ বাড়বে। মিষ্টি স্বাদের জন্য শিশুদের খাবারে চিনির বদলে আখের গুড় ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর।
  • এখন দু’বছর বয়স থেকে বাচ্চারা প্লে স্কুলে যায়। স্কুলে খাওয়ার জন্য চিপস, চকলেট, ইনস্ট্যান্ট নুডলস দেবেন না। এতে ট্রান্স ফ্যাট শরীরে ঢুকে খাওয়ার ইচ্ছে নষ্ট করে দেয়।

মডেল: রোমিত বন্দ্যোপাধ্যায়;
ছবি: অমিত দাস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement