বর্তমানে পেটের সমস্যার প্রত্যেক ঘরে ঘরে। আনন্দবাজার ডট কম-এর সঙ্গে কথা বললেন ডঃ মহেশ গোয়েঙ্কা।
ভারতের মতো দেশে পেটের সমস্যা অত্যন্ত পরিচিত একটি রোগ। ইংরেজিতে যার পোশাকি নাম ইরিটেবল বোয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস। শুধু ভারতই নয়, পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছেন। কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের গ্যাস্ট্রো সায়েন্স এবং লিভার প্রতিস্থাপন বিভাগের ডিরেক্টর চিকিৎসক মহেশ গোয়েঙ্কার কথায়, "১০০ জনে প্রতি পঞ্চম থেকে দশম ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত। যদিও এই রোগ ততটাও ভয়ঙ্কর নয়।"
এই রোগের মূল উপসর্গগুলি হল তলপেটে ব্যথা, অন্ত্রের অসঙ্গত গতিবিধি ইত্যাদি। ডাঃ গোয়েঙ্কা উপদেশ দিচ্ছেন, এই সমস্ত লক্ষণকে কখনই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। বরং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মূলত কম বয়সীরাই এই রোগে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হন। এতে জীবনধারণের মান কমে যেতে পারে। কাজের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। মানুষের উৎপাদনশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই রোগ।
শুধু ব্যথাই নয়, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই রোগের অন্যান্য় উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন মানসিক উদ্বেগ, হতাশা, ক্লান্তি ইত্যাদি। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। ডাঃ গোয়েঙ্কার মতে, "এই রোগের নেপথ্যে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। এই রোগ জিনগত হতে পারে। কিংবা অত্যাধিক স্ট্রেসের কারণ বা ডায়েটের কারণেও এই রোগ হতে পারে।"
তিনি আরও জানিয়েছেন, "ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া, যে কারণেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ইনফেকশন হোক না কেন, তার পরে কিন্তু পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটিকে সংক্রামক পরবর্তী পেটের সমস্যা বলা হয়। গত দেড় বছরে আমরা এমন অনেকগুলি ঘটনা দেখেছি যেখানে কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠার পরে রোগীদের পেটের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।"
রোগীদের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা দু'ধরনের হতে পারে। প্রথমটি ডায়েরিয়া বা পাতলা মল, দ্বিতীয়টি কনস্টিপেশন বা পেট পরিষ্কার না হওয়ায় সমস্যা। বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ডাঃ গোয়েঙ্কা জানিয়েছেন, "উভয় ক্ষেত্রেই তলপেটে ব্যথা বা শারীরিক অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। খাওয়াদাওয়ার পরিবর্তনের ফলেই এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।"
পেটের সমস্যা ঠিক কতটা তা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। "অনেকেই সাধারণ পেটের সমস্যাকে ক্যান্সার, যক্ষা, কোলাইটিসের মতো রোগের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে ভয় পান। তাই যখন কোনও রোগী আমাদের কাছে আসেন, তাঁর ইনফেকশনকে বোঝার জন্য আমরা কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা করতে দি। এর মধ্যে মল ও রক্ত পরীক্ষাও থাকে। তবে, যে সমস্ত রোগীদের ওজন হ্রাস, মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ কিংবা ঘুমের সমস্যা থাকে তাঁদের ক্ষেত্রে আরও বিস্তারিত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের স্ক্যান, কলোনস্কোপি ইত্যাদিও থাকে।", জানালেন ডাঃ মহেশ গোয়েঙ্কা।
পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে দুই ধরনের সমাধান রয়েছে। প্রতিকারের কথা বলতে গিয়ে ডাঃ গোয়েঙ্কা জানাচ্ছেন, "প্রথমটি এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, রোগীকে আশ্বস্ত করা যে এই রোগ মারাত্বক নয়। দ্বিতীয়টি হল, ডায়েটে বদল আনা। আপেল, মিস্টি, ফুলকপির সবজি বা ফল যেগুলিতে ফ্রুকটোজ রয়েছে এবং হাই কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাওয়ার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ট্র্যানকুইলাইজার্স ব্যবহারের সঙ্গে কিছু যোগাসন বা ব্যায়ামের সুপারিশ করা হয়। পেটের সমস্যাকে দুই উপ প্রকারে ভাগ করে, সঠিক সমস্যা নির্ধারণ করে, তবেই নির্দিষ্ট ওষুধের থেরাপির সাহায্য নেওয়া উচিত।"
ডায়েরিয়া না কোষ্ঠকাঠিন্য, না কী পেট ব্যথা, প্রত্যেকটি সমস্যার প্রবণতা বোঝার পরেই ওষুধের ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে ওষুধের পরিবর্তন করা হতে পারে পেটের ব্যথা কমানোর জন্য।
"সব মিলিয়ে, পেটের সমস্যা অত্যন্ত সাধারণ একটি রোগ। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগের লক্ষণ বুঝে তারপরেই ওষুধ খাওয়া উচিত এবং অবশ্যই সমাধান হিসেবে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে তো হবেই", জানালেন চিকিৎসক মহেশ গোয়েঙ্কা।