মডেল: জয়দীপ সিংহ, নয়নিকা সরকার
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে অফিসে পথ চলা শুরু। সেখানে কার সঙ্গে কতটা কথা বলবেন, কতটা মিশবেন, তা নিয়ে মনে ভিড় করে হাজারো প্রশ্ন। বিশেষ করে অফিসে প্রবেশের আগে, ‘সহকর্মীরা বন্ধু হয় না’ এই মন্ত্র কোনও না কোনও সিনিয়র কানে তুলবেনই। পারস্পরিক সম্পর্কের বাঁধাধরা ফর্মুলা নেই। এক জনের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, আপনার সঙ্গে তা না-ও হতে পারে। তাই দিনের সিংহভাগ সময় যাঁদের সঙ্গে কাটাচ্ছেন, যাঁরা আপনার অভ্যেসের দোসর, তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখা শ্রেয়। সব সম্পর্কে ওঠানামা থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে সহকর্মীও বন্ধু হবেন, কখনও বা শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বী।
কর্মক্ষেত্রের প্রভাব
সরকারি বা বেসরকারি, যে কোনও অফিসে নতুন সম্পর্কের জন্ম হয়। আবার বন্ধুত্ব ভেঙেও যায়। অফিসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দুই সহকর্মীর সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তিরই দায়িত্ব, তাঁদের সম্পর্ককে বাহ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। সকলেই মুখে বলেন ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা’র কথা। তবে টার্গেট পূরণের দৌড়ে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কে অসুস্থতা প্রকট হয়ে ওঠে।
কর্মক্ষেত্র কিছু মানুষের সমষ্টি। তার নিজস্ব কোনও স্বভাব থাকে না। সেখানকার কর্মীরা যে ধারাকে সচল রাখবেন, সেটাই চলবে। অফিসে নতুন কাজ করতে আসা ব্যক্তিও সিনিয়রকে দেখে শিখবেন। পারস্পরিক সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হলে অনেকেই অফিসের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে কাজ সারেন। সেই পথে না হেঁটে অফিসের রোদ-বৃষ্টি-ঝড় থেকে বন্ধুত্বকে বাঁচিয়ে রাখুন।
আত্মবিশ্বাসই ভরসা
যদি সহকর্মী আপনার বন্ধু হন, তবে তাঁর প্রোমোশন বা হাইকে আপনি খুশি হবেন, দুশ্চিন্তায় পড়বেন না। আর সহকর্মী যদি নেহাত সহকর্মীই হন, তখনও চিন্তা হওয়ার কথা নয়। নিজের কর্মদক্ষতায় ভরসা রাখলে আপনি জানেন যে, আজ নয়তো কাল সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছতে পারবেন আপনিও।
তবে হতে পারে, কাজ করেও আপনি সেই জায়গায় পৌঁছতে পারলেন না। কিন্তু তুলনায় পিছিয়ে থাকা সহকর্মী সেই জায়গা পেয়ে গেলেন। অফিসের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিই বেশি দেখা যায়। এই ধরনের পরিস্থিতি যদি আপনার বন্ধুসম সহকর্মীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে, তবে তা কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া ভাল। কারণ এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া স্পষ্ট থাকা উচিত।
সহকর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিজীবন কতটা আলোচনা করবেন বা আদৌ করবেন কি না, তা নিয়ে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।
বন্ধুত্ব পরে, পেশাদারিত্ব আগে
আপনারা হয়তো আগে বন্ধু, পরে সহকর্মী হয়েছেন। বা উল্টোটা। সহকর্মী থেকেই বন্ধুত্বে উত্তরণ। নানা কারণে পারস্পরিক বন্ধুত্বের সম্পর্কে চিড় ধরলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পেশাদার ক্ষেত্রে অসহযোগিতা বাড়তে থাকে। সেটা কাম্য নয়। অনুত্তমা বলছিলেন, ‘‘এক বন্ধুই আর এক বন্ধুর চাকরির সুযোগের কথা জানিয়েছিলেন। তার পরে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের সম্পর্ক এতটাই তলানিতে এসে পৌঁছল যে, বন্ধুত্বই আগে নষ্ট হল।’’ তাই কাজ কাজের জায়গায়, আর বন্ধুত্ব বন্ধুত্বের জায়গায়। দুটোকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
বিশ্বাসযোগ্যতা
বন্ধু হওয়ার প্রথম শর্ত, সেই ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ এতটা পরে হয় যে, তখন প্রাপ্তবয়স্ক মন অনেক কারণেই সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে। সব ক্ষেত্রে যে সন্দেহ অমূলক, তা নয়। তবে যে সহকর্মীর সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করতে চান, তিনি ততটা বিশ্বাসযোগ্য কি না, তা যাচাই করে নিতে হবে। পরিবার, শ্বশুরবাড়ি, ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। এদের সঙ্গে সহকর্মীর সরাসরি যোগাযোগ না থাকলে তা নিয়ে জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনা কম। তাই সমস্যা হওয়ার প্রবণতাও কম হয়।
তবে সমস্যা অন্যত্র। এক সহকর্মীর কাছে অন্য সহকর্মী বা অফিসের উচ্চপদস্থ কাউকে নিয়ে আলোচনায় শামিল না হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অফিসের হাওয়া-মোরগ কখন কার দিকে ঘুরবে, কেউ জানে না। দেখা গেল, সেই সহকর্মীর সঙ্গে আপনার দূরত্ব তৈরি হল। আর সেই সুযোগে সে তাদের প্রিয় হয়ে উঠল, যারা ছিল আপনাদের মুখরোচক আলোচনার বিষয়।
যে কোনও সম্পর্কের সেতু বড়ই আলগা। তাকে মজবুত করার দায়িত্ব সেই সম্পর্কে থাকা মানুষদেরই। অফিসের ক্ষেত্রে তাই বাড়তি সজাগ থাকা প্রয়োজন। কারণ সহকর্মীরা যতটা কাছের, ততটাই আবার দূরেরও। কাছে-দূরের ব্যবধানেই লুকিয়ে আশা-আশঙ্কার অব্যক্ত অনুভূতি।
ছবি: দেবর্ষি সরকার
মেকআপ: অভিজিৎ পাল লোকেশন: অলটেয়ার বুটিক হোটেল
ফুড পার্টনার: ৬, বালিগঞ্জ প্লেস