উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ রায়গঞ্জ হাসপাতালে

পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও বাতিল হয়ে গেল ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) উদ্বোধন। এতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিত্সকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ কলকাতার নবান্ন থেকে রিমোটের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই সিসিইউ উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কাজে শিলিগুড়িতে থাকায় সোমবার রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ফোন করে জানানো হয়, আগামী ১০ মে সিসিইউ উদ্বোধনের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

উদ্বোধন না হওয়ায় খুলল না দরজা। ছবি: গৌর আচার্য।

পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও বাতিল হয়ে গেল ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) উদ্বোধন। এতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিত্সকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ কলকাতার নবান্ন থেকে রিমোটের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই সিসিইউ উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কাজে শিলিগুড়িতে থাকায় সোমবার রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ফোন করে জানানো হয়, আগামী ১০ মে সিসিইউ উদ্বোধনের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, প্রায় একমাস আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জানানো হয়, এ দিন ওই ইউনিটের উদ্বোধন হবে। সেই মতো সোমবার হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের উল্টো দিকের তিনটি ঘর নিয়ে সিসিইউ তৈরির কাজ শেষ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী এ দিনই সিসিইউ চালু হতে চলেছে, সে কথা মাথায় রেখে এ দিন সকালে ইউনিটের সামনে ভিড় জমান চিকিত্সকদের একাংশ। কিন্তু সরকারি নির্দেশে এ দিন সিসিইউ চালু হবে না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালে চিকিত্সকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। বেলা গড়ালে বিষয়টি জানাজানি হতে ক্ষোভ ছড়ায় ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যস্ত থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু পরিকাঠামো তৈরি থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্বার্থে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কেন জেলাশাসক বা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে দিয়ে এ দিন সিসিইউ-এর উদ্বোধন করালো না?

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘‘পূর্বের সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী এ দিন রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে সিসিইউ-এর উদ্বোধন করার মতো পরিকাঠামো তৈরি ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর আগামী ১০ মে সেটির উদ্বোধনের দিন ক্ষণ জানিয়ে দেওয়ায় আমাদের পক্ষে এ দিন তা চালু করা সম্ভব হয়নি। এর বেশি কিছু বলব না।’’

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘সরকারি নির্দেশ পেলে মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত আছেন বলে জেলাশাসক বা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সিসিইউ-এর উদ্বোধন করতেই পারতেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বাস্থ্য দফতরের কীই বা করার রয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, পরিকাঠামোর অভাবে গত প্রায় সাত বছর ধরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটটি (আইসিইউ) বন্ধ হয়ে রয়েছে। ২০০৬ সালে চিকিত্সাধীন এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিত্সার গাফিলতির অভিযোগে আইসিইউতে একদল বাসিন্দা ভাঙচুর চালানোর পর থেকে পরিকাঠামোর অভাবে সেটি নতুন করে চালু করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজ্যে পালাবদলের পর রাজ্য সরকার আইসিইউর নাম বদলে সিসিইউ রাখে। গত সাত বছর ধরে হাসপাতালে আইসিইউ বা সিসিইউ না থাকায় প্রতি দিনই হৃদরোগে আক্রান্ত ও আশঙ্কাজনক রোগীদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

সিপিএম প্রভাবিত অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের জেলা সম্পাদক দেবব্রত রায় বলেন, ‘‘পূর্বের সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী রোগীদের স্বার্থে এ দিন সিসিইউ চালু হলে আমরা খুশি হতাম। আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিসিইউটি চালু করা হোক।’’

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের দাবি, রোগীদের স্বার্থের চাইতেও প্রচার পাওয়াটা বেশি হতে পারে না।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল পৃথক ভাবে বলেন, ‘‘এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু রোগীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে তিনি কেন জেলাশাসক বা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে দিয়ে সিসিইউর উদ্বোধন করালেন না, সেই প্রশ্নই এখন জেলাবাসীর মধ্য ঘুরপাক খাচ্ছে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি একযোগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। সরকারি কিছু প্রক্রিয়া ও নথি তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় এ দিন সিসিইউ-এর উদ্বোধন বাতিল করে দেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement