আরাম: গরমে একটু স্বস্তির খোঁজে আইসক্রিমে মন। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মিষ্টি পান, নলেন গুড় বা লেবু তো ছিলই, তার সঙ্গেই হাজির লঙ্কা, গ্রিন টি, ওয়াসাবি বা লেমনগ্রাসের মতো উপকরণের চমক লাগানো স্বাদ ও গন্ধ। ঠান্ডা নিয়ে গরম হয়ে ওঠা লড়াই জিততে স্বাদ-গন্ধকে হাতিয়ার করেই দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন স্থানীয় আইসক্রিমওয়ালারা। পিছিয়ে না থেকে প্রায়ই নতুন স্বাদ-গন্ধ নিয়ে হাজির ঠান্ডা পানীয়ের সংস্থাগুলিও। চাঁদিফাটা গরমে সে সবেই স্বস্তি খুঁজছেন মানুষ। যার জেরে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই আইসক্রিমের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ, ঠান্ডা পানীয় ৪৫ শতাংশ। কিন্তু তীব্র গরমে কি এমন ঠান্ডা জিনিস আদৌ শরীর ভাল রাখছে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানীয় খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। ঘন ঘন এই ধরনের জিনিস খেলে পেটের রোগ হওয়ার ঝুঁকি প্রবল। কারণ, ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিমের ‘হাইপারটনিক সলিউশন’ (বডি ফ্লুইডের উপাদানের চেয়ে ঘন) দেহ থেকে জল টেনে নেয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, গরমে এমনিতেই জলশূন্যতা বাড়ে। সহজে খাবার হজম হতে চায় না। তার উপরে হাইপারটনিক সলিউশন শরীরে জলের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেয়।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, "ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিমে প্রচুর চিনি থাকে। এই সাদা চিনি শরীরে গেলে হজমক্ষমতা নষ্ট হয়, শরীরের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি বেশি হয়।" চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, "এই গরমে হঠাৎ করেই বেশি ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খেলে গলা ধরে আসে, অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়। কাশি, হাঁচি হতে পারে। তা ছাড়া, রাস্তায় যে সমস্ত আইসক্রিম বিক্রি হয়, তাতে ব্যবহৃত জলের মান কেমন, সেটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। দিন পনেরো কাটলেই দেখা যাবে হাসপাতালে পেটের রোগীর লাইন পড়ছে।" চিকিৎসকেরা চিন্তিত আইসক্রিম এবং ঠান্ডা পানীয়ে থাকা অত্যধিক স্নেহপদার্থ (ফ্যাট) নিয়েও। এই ফ্যাট যেমন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণ, তেমনই এগুলি হজম করা শক্ত বলে মত চিকিৎসকদের।
কিন্তু এমন সতর্কতায় বিশেষ কান নেই কারওরই। দেদার বিক্রি হচ্ছে ঠান্ডা পানীয় এবং আইসক্রিম। ৮০টি আইসক্রিম প্রস্তুতকারী সংস্থার সংগঠন 'আইসক্রিম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর হিসাব, গত ১৫ দিনে দেশে আইসক্রিমের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এমনিতে গোটা বিশ্বে আইসক্রিমের ক্ষেত্রে অন্যতম ছোট বাজার ভারত। ভারতে বছরে এক জন গড়ে ১.৫ লিটার আইসক্রিম খান। আমেরিকায় তা ১৪ লিটার এবং চিনে ২.২ লিটার। কিন্তু গত কয়েক বছরে লাফিয়ে বাড়ছে ভারতের বাজার। ওই সংগঠনের হিসাব, ইতিমধ্যেই এ দেশে তৈরি হয়েছে ১৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকার বাজার। ২০২৮ সালের মধ্যে তা ৫০ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে। পিছিয়ে নেই ঠান্ডা পানীয়ও। গত ১৫ দিনে শুধুমাত্র কলকাতাতেই ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবসা বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।
এক আইসক্রিম প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্ণধার অধিরাজ থিরানির দাবি, "ক্রেতারা আশ্বস্ত হতে চান, আইসক্রিম খাওয়া মানেই একগাদা মেদ জমানো নয়। সেই কারণেই কম ফ্যাট ও দেশি-বিদেশি ফলের মিশেলে জোর দিচ্ছি। সাধারণ আইসক্রিমের প্রতি স্কুপে ১৫ শতাংশ ফ্যাটের তুলনায় আমাদের জেলাতোয় তা মাত্র দুই শতাংশ। বেলজিয়ান চকলেট বা সিসিলিয়ান লেবুর স্বাদ-গন্ধ পেতে এই দেশগুলি থেকেই আমদানি করতে হয় কাঁচামাল।’’ একই রকম দাবি আর এক আইসক্রিম প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রধান কুণাল পাবরাইয়ের। ইমেলে তিনি জানান, খরচ বাড়লেও সুদূর ম্যাডাগাস্কার থেকেই ভ্যানিলা আমদানি করেন। কিন্তু তিনি চিন্তিত স্থানীয় স্তরে তৈরি কিছু নকল আইসক্রিম নিয়ে। অভিযোগ পেয়ে এর মধ্যেই কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি) ভেজাল আইসক্রিমের খোঁজে বেশ কিছু জায়গায় হানা দিয়েছে। পরীক্ষা করা হচ্ছে নথিপত্রও।