৯ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেন। স্কুল থেকেই এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. রায়চৌধুরী। প্রতীকী ছবি।
সব স্কুলেই এখন মিজ়লস ও রুবেলার ভ্যাকসিন দেওয়া চলছে। শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার থেকে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঠিক যে ভাবে পোলিয়ো দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে পোলিয়ো টিকা দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে, ঠিক সে ভাবেই মিজ়লস দূর করতে ও রুবেলা নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তার জন্য প্রত্যেক শিশুকে এই প্রতিষেধক দেওয়া জরুরি। আসলে আমাদের দেশের অনেক শিশুই রুটিন ভ্যাকসিনেশনের আওতার বাইরে থাকে। সেই জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মিজ়লস-রুবেলা ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেনের (এমআরভিসি) কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। ৯ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেন। স্কুল থেকেই এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. রায়চৌধুরী।
সচেতনতা জরুরি
যে-সব অভিভাবক সন্তানদের এই ভ্যাকসিন দিতে চাইছেন না, তাঁদের উদ্দেশে ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, “এই প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশেষ কিছু দেখা যায় না। তাই না নেওয়ার কোনও কারণ নেই। অল্প জ্বর বা সর্দিকাশি থাকলেও বাচ্চারা এই ভ্যাকসিন নিতে পারে। কারও যদি একবার এই ভ্যাকসিন নেওয়া থাকে, সে-ও আর-একবার নিতে পারে। এতে বাচ্চাটির অনাক্রম্যতাই বাড়বে। তবে এর আগে এই ভ্যাকসিনে যদি শিশুটির কোনও অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা যায় বা কনভালশন হয়ে থাকে, শুধু সে ক্ষেত্রে সন্তানকে ভ্যাকসিনটি দেবেন না।”
মিজ়লস-রুবেলা থেকে সাবধান
এই দু’টি রোগেই কিন্তু বাচ্চার ভোগান্তি যেমন বেশি, তেমনই জটিলতাও বাড়তে পারে। ডা. রায়চৌধুরী বললেন, “মিজ়লস মানে হল হাম। এ ক্ষেত্রে মূলত জ্বর আসে আর গায়ে ছোট-ছোট লাল র্যাশ বেরোয়। কনজাংটাইভাল কনজেশন দেখা দেয়, নাক থেকে জল পড়তে থাকে। এর সঙ্গে বা পরে নিউমোনিয়া হলে এ রোগে জটিলতা বাড়তে পারে। শিশুদের জন্য এটা অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হয়ে দাঁড়ায়।”
রুবেলাতেও র্যাশের সঙ্গে জ্বর আসে। কিন্তু মিজ়লসের চেয়েও রুবেলায় জটিলতা অনেক বেশি দেখা দেয়। একে তো হার্টের রোগ দেখা দেয়, তার সঙ্গে চোখে সমস্যা হতে পারে। “রুবেলার জন্য কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট দেখা দিতে পারে। কনজেনিটাল ক্যাটারাক্টও হতে পারে অর্থাৎ চোখে ছানি নিয়েই সন্তান জন্মাতে পারে। সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন যদি মায়ের রুবেলা হয়, তা হলে গর্ভস্থ বাচ্চার কনজেনিটাল রুবেলা হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। তাই অনেক গাইনিকলজিস্টই গর্ভধারণের আগেই হবু মায়েদের রুবেলা ভ্যাকসিন দেন। আর এই জন্যই এখন প্রত্যেককে এই ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের মধ্যে আনা জরুরি। এতে ভবিষ্যতে এই শিশুকন্যারা যখন বড় হয়ে মা হবে, তখন তাদের গর্ভস্থ সন্তানেরাসুরক্ষিত থাকবে।”
এই ভ্যাকসিন কখন দেবেন?
সন্তানের বয়স ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হলে তারা এই ভ্যাকসিন নিতে পারবে। সাধারণত বাচ্চার ন’মাস, পনেরো মাস ও পাঁচ বছর বয়সে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এখন সরকারের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি চলছে, তাতে এই ভ্যাকসিনের অ্যাডিশনাল ডোজ় দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রতিষেধক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।