কমলালেবুর রস কী ভাবে মাখলে ত্বকে বলিরেখা পড়বে না? ছবি: ফ্রিপিক।
রজোনিবৃত্তির সময় এগিয়ে এলেই চিন্তা শুরু হয়। ভারতীয় মহিলাদের রজোনিবৃত্তির সময় ধরা হয় মোটামুটি ৪৪ থেকে ৫৫ বছর। এই সময়টাতেই শরীরে ও মনে নানা বদল আসে। অনেকেরই চিন্তা থাকে, রজোনিবৃত্তির পর কী ভাবে শরীর সুস্থ রাখা যায়। কারণ, রজোনিবৃত্তির পর মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়, সে কারণে শরীরে নানা বদল আসে। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়, বাতের ব্যথা ভোগায়, ঘন ঘন মেজাজও বদলে যায়। আর সেই সঙ্গেই নানা সমস্যা দেখা দেয় ত্বকে। মুখ ও গলার কাছে ত্বক কুঁচকে যেতে শুরু করে, বলিরেখা দেখা দেয়। ফলে বুড়োটে ছাপ পড়তে থাকে মুখে। এই সমস্যার সমাধান করতে অনেকেই গাঁটের কড়ি খসিয়ে অ্যান্টি-এজিং থেরাপি করান, তবে তাতে দীর্ঘমেয়াদি লাভ হয় না।
ত্বকের বলিরেখা ও দাগছোপের সমস্যা দূর করতে নানা রকম ফেস মাস্ক, প্রসাধনীর কথা বলেন অনেকে। তবে যদি সব গুণ একসঙ্গে পেতে হয়, তা হলে কমলালেবুর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। এই ব্যাপারে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মলিকিউলার সায়েন্স’-এ একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ কমলার রস ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। অত্যধিক মেলানিন উৎপাদনে বাধা দেয়। মেলানিন রঞ্জকের মাত্রা বেড়ে গেলেই ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে, ‘হাইপারপিগমেন্টেশন’-এর সমস্যা দেখা দেয়।
ত্বককে আর্দ্র রাখতে ও ব্রণের সমস্যা দূর করতেও উপকারী কমলার রস। এই বিষয়ে ‘ফুড বায়োসায়েন্স’ নামক জার্নালে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কমলার রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে। ত্বকে থাকা তৈলগ্রন্থি বা সেবাম থেকে তেল নিঃসরণের হারও নিয়ন্ত্রণ করে। এই তেলই অতিরিক্ত ক্ষরিত হলে তা রোমকূপে জমে গিয়ে ব্রণ-ফুস্কুড়ির কারণ হয়। সাইট্রিক অ্যাসিডের আরও একটি কাজ হল, ত্বকের মৃতকোষ দূর করা। মৃতকোষ যদি পরতে পরতে জমতে থাকে, তা হলে তাতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। সে কারণেই দেখা যায়, রজোনিবৃত্তির পরে ত্বকে র্যাশের সমস্যা হয় অনেকের। চর্মরোগ সোরিয়াসিসেও ভোগেন অনেকে। কমলার রস ত্বকে সঠিক ভাবে মাখতে পারলে, চর্মরোগের ঝুঁকিও কমবে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
কী ভাবে কমলার রস মাখলে উপকার হবে?
ফেস ক্লিনজ়ার
কমলার রসের সঙ্গে সমপরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে নিতে হবে। যদি ২ চামচের মতো কমলার রস নেন, তা হলে ২ চামচই গোলাপজল মেশাতে হবে। এই মিশ্রণ স্প্রে বোতলে ভরে রাখতে পারেন। রোজ রাতে শোয়ার আগে তুলোয় করে এই ক্লিনজ়ার মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিটের মতো রেখে ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক সতেজ ও টান টান থাকবে। বলিরেখার সমস্যা দূর হবে।
ফেস মাস্ক
২ চা-চামচ কমলার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু ও ১ চা-চামচ দই মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে নিতে হবে। ভাল করে মুখ ধুয়ে এই ফেস মাস্ক মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তার পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। খুব তাড়াতাড়ি মুখে জেল্লা এনে দেবে এই মাস্ক। পার্লারে গিয়ে ফেশিয়াল করার দরকারই পড়বে না।
ব্রণ দূর করতে
ত্বকে ব্রণ বা র্যাশের সমস্যা বেশি থাকলে ও ত্বক খুব স্পর্শকাতর হলে কমলার রসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে মাখতে পারেন। এক চামচ কমলালেবুর রসের ১ চিমটে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখতে হবে। ১০ মিনিট পরে ধুয়ে নিতে হবে। কমলার রস ও হলুদের অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ ব্রণের সমস্যা দূর করবে।
ফেস টোনার
২ চামচ কমলার রসের সঙ্গে ২ চামচ জল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ স্প্রে বোতলে রেখে দিন। বাইরে থেকে এলে এই টোনার দিয়েই মুখ পরিষ্কার করুন। এতে রোদে পোড়া দাগও দূর হবে এবং ত্বকে কোনও দাগছোপও পড়বে না।
কমলার রসের স্ক্রাব
১ চামচ কমলালেবুর রসের সঙ্গে ১ চামচ চিনি ও ১ চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে নিন। ত্বকে ভাল করে মালিশ করে ১ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। ত্বকের স্বাভাবিক জেল্লা ফেরাবে এই স্ক্রাব।