Tree Nursery

গাছের নার্সারি, শখ থেকে সাফল্য

গাছের শখ থাকলে বাড়িতেই তৈরি করে ফেলতে পারেন ছোটখাটো একটা নার্সারি। সেখান থেকে শুরু হতে পারে নিজের রোজগারের পথ।

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১৩
Share:

ছোট থেকে বাড়ির সামনে বাবাকে বাগান করতে দেখেছেন। মালির সাহায্যে নয়, সম্পূর্ণ নিজের হাতে। গাছেদের প্রতি ভালবাসার শুরু তখন থেকেই। পরে সল্টলেকের বাড়িতেও সামনে বাগান পেয়েছেন অনুরাধা মজুমদার দাশগুপ্ত। ছেলের প্রথম বোর্ডের পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর থেকে নিজের জন্য সময় পান অনুরাধা। ধীরে ধীরে নিজের শখে নজর দিতে শুরু করেন। বাড়ির বারান্দায়, ছাদে গাছ করতে শুরু করেন। সঙ্গে চলতে থাকে আঁকা। এই দুইয়েরই মেলবন্ধন ঘটে যখন এক বন্ধু প্রস্তাব দেন, অনুরাধার হাতে আঁকা টবে গাছ বসিয়ে বিক্রি করবেন তিনি। ধীরে ধীরে অনুরাধা নিজেই এই ব্যবসা শুরু করেন ২০২২-এর শেষের দিকে। পরে দেখা যায়, মানুষ তাঁর গাছেরই কদর বেশি করছেন।

Advertisement

একটা ছোট বাগান থেকে শুরু করে আজ অনুরাধার নার্সারিটি পরিচিতি লাভ করেছে। মূলত টবে লাগানো ইনডোর গাছের ব্যবসা করেন তিনি। নিজের হাতে মাটি তৈরি করে, গাছ লাগিয়ে, খানিকটা বড় করেতবেই সেগুলিকে অন্য ঠিকানায় পাঠাতে পছন্দ করেন। অনুরাধাবলেন, ‘‘কখনও ভাবিনি এ রকম ব্যবসা করব। ভালবাসতাম গাছ লাগাতে। পরে বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা শুরু করি। বিভিন্ন এগজ়িবিশনে দেখলাম মানুষ গাছ কিনতে, তাদের যত্নসম্পর্কে জানতে চাইছেন। সেখান থেকেই শুরু।’’

অনুরাধা জানাচ্ছেন, তিনি চান মানুষ যে সব গাছ নিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো যেন বেঁচে থাকে। সেই ভাবনা থেকেই তিনি অনলাইনে গাছ পাঠানোর দিকে হাঁটেননি। তিনি বেছে নিয়েছেন অফলাইন বিক্রি, লোকের মুখে মুখে প্রচার, পাড়ার মেলা, আর পরিচিতদের মাধ্যমে গাছ দেওয়া। “অনলাইনে গাছ সম্পর্কে পোস্ট করি। কিন্তু কুরিয়ারে পাঠাতে গেলে গাছ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। আমি সামনাসামনি বিক্রি করতে পছন্দ করি, গাছের যত্ন সম্পর্কে ক্রেতাকে তখনই বুঝিয়ে দিই। শহরের মধ্যে বড় অর্ডার থাকলে নিজে গিয়ে গাছ দিয়ে এসেছি, এমনও হয়েছে।’’

Advertisement

শখ থেকে রোজগারের পথে হাঁটার এই গল্প অনেককেই অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে। শখের বাগান করা থেকে একটি সফল নার্সারি ব্যবসা দাঁড় করানো শুধু আনন্দদায়ক নয়, হতে পারে লাভজনকও। বিশেষ করে যখন মানুষের বাগান করার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। কেউ যদি এই পথ অনুসরণ করতে চান, তা হলে মাথায় রাখতে হবে কী কী বিষয়? পরামর্শ দিচ্ছেন হর্টিকালচারিস্ট পলাশ সাঁতরা—

ছোট থেকে শুরু

নিজের পরিচিত এবং যত্ন নেওয়া সহজ, এমন গাছ দিয়েই শুরু করা ভাল। যেমন মানি প্লান্ট, সাকুল্যান্টস, স্পাইডার প্লান্ট। দু’-এক দিন জল না পেলেও বেঁচে থাকবে এমন গাছ, যেমন আগলোনিমা, এরিকা পাম, চাইনিজ় বট, ফাইকাসের কথা ভাবা যেতে পারে।

বুঝতে হবে ক্রেতাদের চাহিদা

নতুন নাকি অভিজ্ঞ, কাদের জন্য আপনি গাছ তৈরি করবেন, এই সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর উপরে নির্ভর করবে আপনি কী গাছ রাখবেন এবং কী ভাবে বিক্রি করবেন। সুদৃশ্য টবে বসানো, অল্প যত্নে ভাল থাকবে এমন গাছেরই চাহিদা এখন বেশি।

ভাল গাছ তৈরিতে অগ্রাধিকার

বাহারি গাছের গঠন সুন্দর করা হোক বা ফুলের গাছে রঙিন ফুলের বাহার, গাছ অনুযায়ী যত্ন দরকার। ভাল মানের গাছ মানেই সন্তুষ্ট ক্রেতা। ভাল ভাবে শিকড়ের বিস্তার, রোগমুক্ত গাছ, অন্য পরিবেশে ঝিমিয়ে না পড়ার মতো বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। গাছ না বাঁচলে বা ভাল না থাকলে ক্রেতারা ফিরে আসবেন না।

নির্দিষ্ট পরিকাঠামো তৈরি

শুরুতেই বিশাল নার্সারির দরকার নেই। বারান্দা, ছাদ বা বাড়ির উঠোনই যথেষ্ট। মাটি তৈরি, গাছ বসানো, জল দেওয়ার সময়— সব পরিকল্পনা করে নিলে বিষয়টি সহজ হয়। রোদ-জল থেকে গাছ প্রয়োজনে আড়াল করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

অফলাইন মানে ‘অদৃশ্য’ নয়

ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক বা ওয়টস্যাপে গাছের আপডেট দেওয়াই যায়। সামনাসামনি বিক্রি করলেও প্রচারের কাজে ব্যবহার হোক সোশ্যাল মিডিয়া। আর যদি ডেলিভারি দিতে হয়, তা হলে গাছ ঠিক মতো প্যাক করার কৌশল শিখতে হবে।

ব্যবসায়িক ধারণা

খরচ, দাম, লাভ এবং ক্রেতার পছন্দ– সব কিছুর হিসেব রাখুন। আর পাঁচটা ব্যবসার মতো নার্সারির ক্ষেত্রেও সাধারণ ব্যবসায়িক জ্ঞান প্রয়োজন।

অনুরাধা জানাচ্ছেন, শুধু গাছ বিক্রিই নয়। গাছের যত্ন নেওয়াও হতে পারে উপার্জনের আর একটি পথ। অনেকেই গাছ ভালবাসলেও ঠিক ভাবে যত্ন করতে জানেন না বা সময়ের অভাবে করে উঠতে পারেন না। তাঁদের হয়ে গাছের দেখাশোনা করা বা সুন্দর করে ছাদ বা বারান্দার বাগান সাজিয়ে দেওয়ার সার্ভিস দেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।

কখনও কখনও, একটা ছোট টব থেকেই শুরু হতে পারে সাফল্যের সিঁড়ি। তাই, যদি আপনার বাড়ির বাগান আপনাকে আনন্দ দেয়— তা হলে সেটা শুধু শখ নয়, বরং শুরু হতে পারে একটা নতুন স্বপ্নের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement