ত্বকের উপরিভাগে বেশ কিছু ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। কোনওটি হল রোমকূপ বা সিবেসিয়াস পোরস। এর মধ্য দিয়ে তেল বার হয়। কোনওটি হল সোয়েট পোরস। এগুলি দিয়ে ঘাম বেরিয়ে আসে। ‘পোরস’ ত্বকের শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে। জলীয় ভাব ধরে রাখে। ঠান্ডা রাখে। অর্থাৎ ছিদ্রগুলি ত্বকের উপকার করে। এগুলি এতই ছোট ছোট যে, দেখতে পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু অনেক সময়েই কপাল, নাক ও গালের অংশের সিবেসিয়াস পোরস বড় হয়ে গর্তের মতো দেখতে লাগে। ত্বক শিথিল ও বয়স্ক দেখায়। ত্বকের ছিদ্র বড় হলে তাতে সিবাম আর ধুলোময়লা জমে। তখন ব্রণ, র্যাশের সমস্যাও বাড়ে। কাজেই ‘এনলার্জড পোরস’-এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, লাবণ্যও থাকবে অমলিন।
‘পোরস’ বড় হয় কেন?
ত্বক যত বেশি পরিবেশের দূষণ, অতিবেগনি রশ্মি-র সংস্পর্শে আসে, ত্বকের ছিদ্রে তত বেশি ময়লা জমা হয়। ফলে ওই ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়। তখন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। ফলে ত্বক ঝুলে যায়। পোরসও আকৃতিতে বাড়ে। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে ত্বকের ছিদ্রগুলি বড় দেখায়।
ত্বক অপরিচ্ছন্ন রাখলে কম বয়সেই ত্বকের ছিদ্রগুলি বড় দেখায়। প্রত্যেক দিন ত্বক পরিষ্কার না করলে বা ত্বকের যত্ন নিতে অবহেলা করলে সিবেসিয়াস পোরসগুলিতে তেল, ধুলো-ময়লা জমে কম বয়সেই এই ছিদ্রগুলি বড় দেখাতে শুরু করবে। সেখানে পিম্পল জন্মাবে, ত্বকের মসৃণতা নষ্ট হবে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর বললেন, ‘‘সোয়েট পোরসগুলি ছোটই থাকে। এগুলি বড় হয় না। তবে সিবেসিয়াস পোরসের মধ্যে তো সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে। সেগুলি একটু বড় আকারের। নাক ও তার আশপাশের অংশে সিবেসিয়াস পোরস বেশি দেখা যায়। যাঁদের ব্রণ-র সমস্যা রয়েছে, সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডগুলি প্রমিনেন্ট, তাঁদেরই ওপেন বা এনলার্জড পোরসের সমস্যা বেশি দেখা যায়।’’
ঘরোয়া টোটকা
• অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ও পরিস্রুত জল মিশিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করলে পোরসের প্রতিকার হওয়া সম্ভব
• হলুদ, বেসন ও দইয়ের প্যাক তৈরি করে দশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এতে পোরস হয় না। ত্বকও উজ্জ্বল থাকে
• কাজুবাদাম গুঁড়ো করে জলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাস্কের মতো লাগিয়ে রাখুন
• পাঁচ মিনিট ধরে মুখে বরফকুচি ঘষুন। ত্বকে রক্ত সঞ্চালন হবে। পোরসের ঝঞ্ঝাট কমবে
আগেই যত্ন নিন
• নিয়মিত ত্বকের ক্লেনজ়িং (ফেস ওয়াশ, টোনিং, সেরাম, ময়শ্চারাইজ়িং) রুটিন মেনে চললেই এই ছিদ্রগুলি বড় হয়ে অস্বস্তির কারণ হবে না। তবে যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা এর সঙ্গে সপ্তাহে দু’বার স্ক্রাব করুন। জেল বেসড ক্লেনজ়ার ব্যবহারেও পোরসের প্রকোপ কমবে।
• বাইরে বার হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। বাড়ি ফিরে খুব ভাল করে মেকআপ তুলবেন। মেকআপের অবশিষ্টাংশ ত্বকের ছিদ্রে ঢুকে গেলে পোরস বড় হতে ও ত্বকে সংক্রমণ হতে বেশি সময় লাগে না।
• কয়েক দিন অন্তর ক্লে মাস্ক বা পিউরিফায়িং পিল অব মাস্ক লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের রোমকূপের মুখে জমে থাকা বাড়তি তেল, ধুলো-ময়লা বেরিয়ে আসে।
• এনলার্জড পোরসের কারণেই হোয়াইট হেডস ও ব্ল্যাকহেডস দেখা দেয়। নিয়মিত মুখে স্টিম নিলে এই ঝামেলা দূরে থাকবে।
সমাধানও সম্ভব
ডা. ধর জানালেন, গর্তগুলি এক বার দেখা দিলেও বিশেষ পরিচর্যার সাহায্যে সহজেই এই পোরস আবার ছোট করা যায়। ওষুধ কোম্পানির তৈরি এক্সফোলিয়্যান্ট ফেসিয়াল দিয়ে দিনে তিন-চার বার ভাল করে মুখ ধুতে হবে। তা ছাড়া, অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন লাগালে ত্বকের তেলতেলে ভাব কমবে। এতে যদি কাজ না হয়, তা হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি রেটিনয়েড অ্যাসিড, অ্যাডাফেরিন প্রভৃতি ক্রিম লাগাতে বলতে পারেন। ডার্মারোলার, মাইক্রোডার্মাব্রেশন, কেমিক্যাল ফিলিং বা লেসার ট্রিটমেন্টেও পোরসের খুঁত মেরামত করা সম্ভব।
এ সবের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যেসেও ভরসা রাখুন। ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চললে ব্রণ হবে না। ত্বক টানটান আর উজ্জ্বল থাকবে। চট করে বয়সের বলিরেখা পড়বে না। পোরস-মুক্ত সুস্থ, সুন্দর, তরুণ ত্বক বহুদিন আপনার সম্পদ হয়ে থাকবে।