প্রতীকী ছবি।
প্রশ্ন: এ মরসুমের মতো শীত বিদায় নিতে চলেছে। বাড়তে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা। এই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে অনেকে রোগব্যাধিতে ভোগেন। এর কারণ কী?
উত্তরঃ ঠান্ডার সময়ে মানুষ সেই পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে যায়। শীতের শেষে যখন তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে তখন অনেক সময়ে আমাদের শরীর তাপমাত্রার এই বৈষম্য নিতে পারে না। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা সহজে এই পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না। তা ছাড়া, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগজীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বিভিন্ন অসুখের আশঙ্কা বাড়ে।
প্রশ্ন: এ সময়ে স্বাস্থ্য-সম্বন্ধীয় কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
উত্তরঃ এ সময়ে বয়স নির্বিশেষে সাধারণত ‘কমন কোল্ড কফে’র সমস্যা দেখা যায়। আচমকা ঠান্ডা লেগে বয়স্কদের কাশি, বুকে ব্যথা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়তে পারে। সব বয়সের মানুষদের ক্ষেত্রে চিকেন পক্স ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হামের প্রবণতাও বাড়ে।
প্রশ্ন: শিশুদের ক্ষেত্রে কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তরঃ দু’বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে স্তন্যপানে কোনও সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয় যে, তা শ্বাসকষ্ট থেকেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে নেবুলাইজেশনের পরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।
এ ছাড়া দশ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে এ সময়ে সাধারণত কমন কোল্ড কফের সমস্যা দেখা যায়। চোখ-নাক দিয়ে জল পড়া, কাশি, ঝিমুনি ভাব এর লক্ষণ। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে রোটাভাইরাস থেকে ডায়ারিয়ার প্রকোপও বাড়ে। শীত থেকে গরম পড়ার এই সময়ে এই ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত পরিষ্কার পাত্রে না খাওয়া, নোংরা জল ব্যবহারের জন্য ডায়রিয়া হয়। পায়খানার সঙ্গে সঙ্গে বমি হলে তৎক্ষণাৎ শিশুকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। নুন ও চিনি মেশানো জল বা ওআরএস বার বার খাওয়ানো জরুরি। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এ সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ তেমন দেখা যায় না।
প্রশ্ন: বয়স্কদেরও এ সময়ে নানা সমস্যা দেখা যায়। সেগুলি কী?
উত্তরঃ ঠান্ডা হাওয়া লেগে এ সময়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষ ও মহিলাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। ঠান্ডা বাতাস ছাড়াও ধুলো, ধোঁয়া থেকে হাঁপানি হতে পারে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এ সময়ে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে। বাড়তে থাকা বায়ুদূষণও সমস্যা বাড়ায়। এ ছাড়াও নিয়মিত ধূমপান যাঁরা করেন, তাঁদেরও হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। জিনগত কারণেও এই রোগ হয়। যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে থাকে, তাদের বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত। হাঁচি,কাশি ও জ্বরের সমস্যা তো রয়েছেই। জ্বর বা গা ব্যথা হলে অনেকেই অ্যান্টবায়োটিক বা অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ কিনে খান, যা একেবারেই উচিত নয়। অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস না হওয়া পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক খাবার প্রয়োজন নেই। আর তাও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে কী সাবধানতা নেওয়া উচিত?
উত্তরঃ পলিউসন মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোলে নাকে ধুলো কম ঢুকবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষত যাঁদের অ্যাজমা আছে, তাঁরা ইনহেলার দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ চালালেও বাড়াবাড়ি হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে 'ডেরিফাইলিন ডেকাড্রন' ইঞ্জেকশন দেওয়া হলে সমস্যা সাময়িক কমে। হাঁপানি রোগীদের ধুলো, ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়াও গরম পোশাক পরা, ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করার মতো বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে। রাতে বা ভোরের দিকে বাইরে না বেরনোই ভাল। বেশি রাত জাগার অভ্যাসও বদলাতে হবে।
প্রশ্ন: এ সময়ে শরীরে ব্যথা-বেদনা বাড়তে পারে কি?
উত্তরঃ যাঁদের বাত বা আর্থ্রারাইটিস আছে তাঁদের শীতের শুরু থেকেই ব্যথা বাড়তে শুরু করে। স্পন্ডিলাইটিসের দরুন বাড়তে পারে ঘাড়ের যন্ত্রণাও। হাঁটুর ব্যথা প্রতিরোধে দিনে দু’বার করে ‘কোয়ার্ডিশেপস এক্সারসাইজ’ করতে হবে। বসে এক পা সোজা করে ১০ সেকেন্ড রাখার পরে ধীরে ধীরে তা নামিয়ে আরেক পা একই ভাবে ১০ সেকেন্ড সামনের দিকে সোজা করে রাখতে হবে। এতে পেশিতে প্রয়োজনীয় চাপ পড়ে।
এ ছাড়াও প্রয়োজনে নিক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। গরম সেঁকও চলতে পারে।
প্রশ্ন: শীত শেষে পেটের নানা সমস্যাও দেখা যায়। কী ভাবে তা এড়ানো সম্ভব?
উত্তরঃ লেপের তলায় অনেকেরই সোয়েটার, টুপি, মোজা পরে শোয়া অভ্যাস। বয়স্কেরা দীর্ঘ দিন ধরে এ রকম করলে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রাস্তার খাবার এ সময়ে এড়িয়ে চলাই উচিত। রাস্তার ধারের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার খেলে পেটের সমস্যা হতেই পারে। জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে কমপক্ষে চার লিটার জল খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: ঠান্ডা লেগে গেলে কী করা উচিত?
উত্তরঃ অনেকেই ঠান্ডা লাগলে প্রথমে কিছু না ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। তা না করে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত। ঠান্ডা লাগলে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পাঁচ মিলিলিটার মাত্রায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যামোক্সিক্লাইন দিতে হবে। দেহের ওজন ও বয়সের উপরে নির্ভর করে ওষুধের মাত্রা বাড়ানো বা কমাতে হবে। গরম জলে স্নান করাতে হবে।
প্রশ্ন: ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচতে কী ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে?
উত্তরঃ পাত্রে গরম জল নিয়ে তাতে কার্বল বা ভিক্স ফেলে মাথায় তোয়ালে চাপা দিয়ে দু’তিন মিনিট গরম ভাপ নিতে হবে। বুকে সর্দি বসলে বা মাথা যন্ত্রণা করলে দিনে তিন বার এ ভাবে ভাপ নিলে আরাম পাওয়া যাবে। লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখলে কাশিতে উপশম মিলবে। এ ছাড়া, আদা, তুলসি পাতা, মিছরি ও গোলমরিচ গরম জলে খেলে আরাম পাওয়া যায়। দিনে গরম লাগলেও পাখা চালানো ঠিক নয়।
সাক্ষাৎকার: সুচন্দ্রা দে