অজান্তেই ব্লক হয়ে যেতে পারে সিম, জালিয়াতির নতুন ফাঁদ অপরাধীদের। ছবি: ফ্রিপিক।
অচেনা নম্বর থেকে বার বার ফোন আসে? হোয়াটস্অ্যাপেও অডিয়ো বা ভিডিয়ো কলের জ্বালায় অস্থির? ভুলেও এই ধরনের ফোন ধরবেন না। অথবা হোয়াটস্অ্যাপে কোনও অজানা নম্বর থেকে অডিয়ো বা ভিডিয়ো কল এলে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। কারণ, মুহূর্তের অসতর্কতায় নিমেষে ফাঁকা হয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এখন মনে হতেই পারে, মিস্ড কল থেকে কী বিপদ হতে পারে?
এই বিষয়ে সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী বলছেন, “সাইবার জালিয়াতির নতুন নতুন পদ্ধতি বার করছে অপরাধীরা। ফোনে মিস্ড কল দিয়ে সেই ব্যক্তির সিম ও ফোনের যাবতীয় তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ করছে। জালিয়াতির এই পদ্ধতির নাম ‘সিম সোয়্যাপ স্ক্যাম’।”
কী এই ‘সিম সোয়্যাপ স্ক্যাম? রাজর্ষি জানাচ্ছেন, সাইবার অপরাধীরা যাঁদের নিশানা বানাচ্ছে, তাঁদের সিম কার্ড ও ফোনের জরুরি তথ্য আগে সংগ্রহ করছে। এটি অনেক ভাবেই হতে পারে। 'ফিশিং' বা 'সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং' -এর সাহায্যে ফোনটি কার নামে, সেই ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ইত্যাদি জোগাড় করে জাল নথি তৈরি করছে। অর্থাৎ আপনারই নাম, ফোন নম্বর ও ব্যক্তিগত তথ্যের সাহায্য নিয়ে টেলিকম অপারেটরকে রাজি করিয়ে ফোনের নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ে নিচ্ছে। একই ফোন নম্বরের অন্য সিম কার্ড নিয়ে সেটি ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করছে। অর্থাৎ সিম অদলবদল হয়ে যাচ্ছে আপনারই অজান্তে।
এই সিম অদলবদলের কারণে কী হতে পারে? রাজর্ষি বলছেন, “আপনি হয়তো দেখলেন, হঠাৎ করেই ফোন ব্লক হয়ে গিয়েছে। অথবা আপনার ফোনের সমস্ত অ্যাপ, জিমেল, ই-ব্যাঙ্কিংয়ের উপর আপনার আর নিয়ন্ত্রণ নেই। তখন ফোনে ওটিপি এলে, তা সরাসরি অপরাধীদের কাছে চলে যাবে। আর তারা সেটির ব্যবহার করে আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড বদলে দেবে। "
কী ভাবে সাবধান থাকবেন?
১) যদি কেউ আপনার কাছে টেলিকম কোম্পানি বা ব্যাঙ্কের নামে ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চায়, তা হলে তা জানাবেন না।
২) অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এলে বা কোনও লিঙ্ক পাঠানো হলে তা খুলে দেখবেন না বা উত্তর দেবেন না।
৩) বার বার অজানা নম্বর থেকে ফোন এলে সতর্ক থাকুন। দরকারে পুলিশের সাইবার সেলে যোগাযোগ করুন।
৪) সমাজমাধ্যমে নিজের ফোন নম্বর অথবা ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না। সেখান থেকেও আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নিতে পারবে প্রতারকেরা।
৫) অপরিচিত কাউকে নিজের আধার, প্যানের তথ্য দেবেন না। এমনকি, মেল আইডি, বাড়ির ঠিকানা, মোবাইল সংক্রান্ত কোনও তথ্যও বলবেন না।
৬) ‘টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন’ ব্যবহার করতেই হবে অথবা গুগ্ল অথেন্টিকেটর ব্যবহার করে অ্যাপগুলি সুরক্ষিত রাখতে হবে।
৭)আপনার টেলিকম অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফোনের জন্য আলাদা পিন বা পাসওয়ার্ড সেট করে রাখুন। এতে অন্য কেউ আপনার ফোনটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না বা সিম ব্লক করতে পারবে না।