Relationship With Phone

সময় নষ্ট, চোখের ক্ষতি কিংবা মনের চাপ না বাড়িয়ে মুঠোফোনের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ করবেন কী করে?   

ভাল জিনিস বেশি ব্যবহার করলে যেমন নষ্ট হয়ে যায়, ফোনের বিষয়টা অনেকটা একই রকম। তাই অভিজ্ঞরা বলছেন, ফোনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে গেলে নিজেকে সংবরণ করুন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ১০:১৯
Share:

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

রাত-বিরেতে, বিপদ-আপদে সব সময়ে পাশে থাকে যে, সেই তো প্রকৃত বন্ধু। হাতের মুঠোফোনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তো অনেকটা তেমনই। তা হলে, সদ্য স্কুল পাশ করে কলেজে পা রাখা দৃপ্তকে সারা দিন ফোন ঘাঁটতে দেখলেই তার মা চিৎকার করতে শুরু করেন কেন? অন্ধকার ঘরে মোবাইলের আলো জ্বলতে দেখলেই মৈত্রেয়ীর বাবা তর্জন-গর্জন করেন কেন? চিকিৎসকেরাই বা কেন বলেন, ফোনের অত্যধিক ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর? এমন বন্ধু কি সত্যিই কোনও ক্ষতি করতে পারে? তার সঙ্গে কি বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব নয়?

Advertisement

ভাল জিনিস বেশি ব্যবহার করলে যেমন নষ্ট হয়ে যায়, ফোনের ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা তেমনই। তাই অভিজ্ঞরা বলছেন, ফোনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে গেলে, তার ব্যবহারে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনে, বিপদে-আপদে হাতের মুঠোফোনটিকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। কিন্তু সেই সুযোগে ফোন যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে, সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। কথা বলা, মেসেজ করা কিংবা ছবি তোলার মতো কাজ ছাড়াও ফোনের কিন্তু আরও অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম হল সমাজমাধ্যম। সে জগতে যেমন পার্থিব সুখ রয়েছে, তেমন রয়েছে ঝিম ধরানো নেশাও। তবে, সেই নেশা অবৈধ নয়, অথচ ক্ষতিকর। ধূমপানের অভ্যাস যেমন অজান্তেই একটু একটু করে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, বা মদ্যপানের অভ্যাস, নষ্ট করতে পারে যকৃত, তেমনই ফোনের অত্যধিক ব্যবহার ধীরে ধীরে শরীর, মন, মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। শরীর, মনে জমতে শুরু করে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ। এইসব শারীরিক ক্ষতি দূর করতে চিকিৎসকেরা ইদানীং ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ আর কিছুই না, ফোন ব্যবহারের সময় কমিয়ে আনা বা নিজেকে সংবরণ করার প্রাত্যহিক অভ্যাস।

শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, এখন প্রায় সব বয়সিদের হাত, পা, মন, মস্তিষ্ক ‘ডিজিটাল’ হাতকড়ায় বন্দি। মানুষের তুলনায় নির্ভরশীলতা বেড়েছে স্মার্টফোনের প্রতি। নিজে থেকে ভাবতে, প্রকৃতির রূপ দেখতে ভুলে গিয়েছে মানুষ। ফোন যা ভাবাচ্ছে, যা দেখাচ্ছে আমরা তা-ই ভাবছি, তা-ই দেখছি সকলে। স্মার্টফোনের ব্যবহারে মানুষ আসলে ‘আনস্মার্ট’ হয়ে পড়ছে। ফোনের ক্যামেরায় ‘রিল’ করতে গিয়ে ‘রিয়্যাল’ ভুলতে বসেছে। অনেকে হয়তো জানেনই না আজ-কালকার এই স্মার্টফোন আপনার ওপর সারাক্ষণ নজর রাখছে, তা চালু অবস্থায় থাকলে গোপনে আপনি কখন কী বলছেন তা সমানে শুনছে এবং সেই সব তথ্য সমানে পাঠিয়ে যাচ্ছে বহুদূরে অবস্থিত আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির কোন প্রযুক্তি-সংস্থায়। অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবন আর কারও কাছেই গোপন নেই। আপনি সারাক্ষণই ‘নেটওয়ার্ক’-এ বন্দী।

Advertisement

বাস্তব এবং কল্পনার মাঝে যে অদৃশ্য সূক্ষ্ম রেখাটি রয়েছে, তা লঙ্ঘন করলে, প্রভাব মনে বা শরীরে এসে পড়বেই। তখন আর মোবাইল ফোনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে না। তাই একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজেকে সংবরণ করা, মোবাইল ফোন থেকে নিজেকে যতক্ষণ পারা যায় দূরে রাখা।

সমাজমাধ্যমে রঙিন দুনিয়া ছেড়ে অন্য দিকে মন দেবেন কী করে?

১) ব্যাপারটা যে খুব কঠিন তা কিন্তু একেবারেই নয়। একটা সময় ছিল যখন মোবাইল ফোনের অস্তিত্বই ছিল না জীবনে। বাড়িতে খুব বেশি হলে একটা ল্যান্ডফোনেই সবকিছুই হয়ে যেত। জীবনে কোনও সমস্যাও ছিল না। মোবাইল ফোনে সুবিধে অনেক । প্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়াটাই জগতের রীতি। তবে মনে রাখতে হবে, ফোনের ব্যবহার কিন্তু ওইটুকুই। যোগাযোগ করা, সে মোবাইলই হোক বা স্থবির ল্যান্ডলাইন। মোবাইল হলে খুব বেশি ‘মেসেজ’ পাঠানো যেতে পারে। সমাজমাধ্যম কিন্তু স্মার্টফোনের উপরি পাওনা। আর জীবনে যা কিছু উপরি, তা কিন্তু বিপজ্জনক এবং ক্ষতিকর। যেমন ‘ঘুষ’ নেওয়া। তেমনই স্মার্টফোন।

২ ) উপরের যুক্তিটা অবশ্য আপনার বিবেকের কাছে আর্জি। এবার কিছু ব্যবহারিক উপায়ের কথা বলা যাক। ঘড়ির অ্যালার্মের আওয়াজে যেমন ঘুম থেকে ওঠেন, তেমনই ফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এই অ্যালার্মের সাহায্যে। তবে মনে রাখবেন, অ্যালার্মেটি দয়া করে নিজের মোবাইল ফোনে দেবেন না। সক্কাল-সক্কাল স্মার্টফোন চালু হয়ে যাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়।

৩) এই কাজে বাড়ির কারও সাহায্যও নিতে পারেন। ঠিক কতক্ষণ পর ফোন দেখা বন্ধ করতে হবে, তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কাউকে আগে থেকে বলে রাখতে পারেন।

স্মার্টফোনের ব্যবহারে পরিবর্তন আনবেন কী ভাবে?

১) নিত্য দিন স্মার্টফোনে এমন সব ফিচার যোগ হচ্ছে যে, তাদের ছেড়ে থাকাই দায়। কিন্তু নিজের উন্নতির জন্য যেটুকু প্রয়োজন, সেইটুকু বাদে ফোনের ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারেন।

২) ফোনের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চাইছেন না। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে হাতে ফোন নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে। ফোন ব্যবহারে লাগাম টানার চাবিকাঠি কিন্তু রয়েছে আপনার হাতেই। চাইলে ফোনের ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ অপশনটি কাজে লাগাতে পারেন।

৩) সমাজমাধ্যমে অন্যের সুখস্মৃতি দেখে অনেক সময়েই নিজের না পাওয়ার কথা মনে পড়ে। তা মনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। চাইলে সেই সব জিনিস সহজেই এড়িয়ে চলা যায়। ফোনে তেমন কিছু সেটিংস আগে থেকেই দেওয়া রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement