জামাইয়ের সাজ জবরজং নয়, হোক ফুরফুরে

জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে জামাইয়ের পোশাক কী হবে তা নিয়ে চলে বিস্তর চিন্তাভাবনা। জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইদের পোশাক কী হবে তার সাজেশন দিলেন কলকাতার বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনাররা।

Advertisement

অমৃত হালদার

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ২০:০২
Share:

মিষ্টির হাঁড়ি হাতে ফিনফিনে সাদা মসলিনের পাঞ্জাবি আর মালকোচা মারা ধুতিতে শ্বশুরঘর আলো করবে জামাই বাবাজি। পঞ্চব্যঞ্জনে সাজবে জামাইয়ের পাত। ও হ্যাঁ, জামাইষষ্ঠীর তত্ত্বের কথা ভুললে চলবে কী করে! জামাইয়ের জন্য কেমন পোশাক নেওয়া ভাল তা নিয়ে চিন্তা করতে করতেই গলদঘর্ম অবস্থা। জামাইয়ের পছন্দ হবে তো? জামাই যা খুঁতখুঁতে। চিন্তা এ দিকেও। এত দিন বাদে বৌকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হবে। গোটা আয়োজনের আকর্ষণ নিজেই। তখন সাজপোশাকে একটু আভিজাত্যের ছোয়া না থাকলে হয় নাকি! কিন্তু যা গরম, আরামের দিকটাও তো খেয়াল রাখতে হবে। গর্মির রাস্তায় হেঁটে ঘামে জ্যাবজ্যাবে হয়ে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছলে শ্যালক-শ্যালিকার হাসির পাত্র হতে হবে। চিন্তা তো কম নয়!

Advertisement

সময়ে সঙ্গে বদল ঘটেছে জামাইষষ্ঠীর রীতিতেও। এখন আর বড় কাঁসার থালার পাশে পাঁচমেশালি শুক্তো থেকে শুরু করে পরমান্ন পর্যন্ত থরে থরে বাটি সাজিয়ে, হাত পাখা হাতে ভোজনরত শাশুড়ির ছবিটার বদল ঘটেছে অনেকটাই। তবে একটা চিন্তা আগেও ছিল, আছে এখনও। তা হল এই দিনটিতে জামাইয়ের সাজটা ঠিক কেমন হবে।

আরও পড়ুন: এ বছর জামাই ষষ্ঠী হোক একটু স্বর্ণালি

Advertisement

বিশেষ অনুষ্ঠান কিন্তু সে ভাবে কোনও সাজ-সাজেশন নেই বললেই চলে। পুজোর সময়টায় তো একটা ফ্যাশন ট্রেন্ড থাকে। কিন্তু জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে জামাইয়ের পোশাক কী হবে তা নিয়ে চলে বিস্তর চিন্তাভাবনা। জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইদের পোশাক কী হবে তার সাজেশন দিলেন কলকাতার বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনাররা।

অভিষেক দত্ত

জামাইষষ্ঠী। বাঙালিদের একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠান। বাঙালিয়ানার ছাপ না থাকলে হয় নাকি! বাঙালি ঐতিহ্য বলে কথা আছে তো। তাই আমার সাজেশন, জামাইরা এথনিক ওয়্যারই ট্রাই করুন। ট্র্যাডিশনাল লুকটাই এ দিনের জন্য সবচেয়ে সেরা। তবে হ্যাঁ, কাট, কালার, প্যাটার্নে থাকা চাই একটু নতুনত্ব। বুকের মাঝামাঝি বোতামওয়ালা পাঞ্জাবি না পরে যদি সাইডে কাঁধের এক পাশে দু’পাশে বোতাম লাগানো পাঞ্জাবি পরেন, তবে একঘেয়েমি অনেকটাই কাটে। এর সঙ্গে ফ্লোরাল সুতির জহর কোট চলতে পারে। এখন একদম নতুন এসেছে বালুচরি জহর কোট। এটাও ট্রাই করতে পারেন। সঙ্গে কনট্রাস্ট কালারের ধোতি প্যান্ট একদম আলাদা একটা লুক দেবে।

রংয়ের মধ্যে পড়বেন পেস্তা গ্রিন, কোরাল পিঙ্ক, লাইট ইয়েলো, গোল্ডেন ইয়েলো কিংবা অ্যাকোয়া ব্লু। গরম বলে সুতি কিংবা লিনেনের উপরেই নির্ভর করাই ভাল। আবার অনেকেই সে দিন অফিস থেকে ছুটি পাননি। অফিস থেকে সোজা যাবেন শ্বশুরবাড়ি। আবার সব অফিসে তো আর পাঞ্জাবি পরে যাওয়া যায় না। তাই আমি সাজেস্ট করব শর্ট কুর্তা বা ফ্লোরাল কিংবা অন্য ধরনের প্রিন্টেড শার্ট পরুন।

অগ্নিমিত্রা পল

দিন-কাল বদলেছে অনেকটাই। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মিষ্টির হাঁড়ি হাতে শ্বশুরবাড়ি যাত্রার দিন এখন আর নেই। এখন তো জামাইরা তাঁদের শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে জামাই কম, ছেলে বেশি। তাই সে ভাবে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে গলদঘর্ম না হওয়াই ভাল। আমি বলব এই দিনটিতে একটু ক্যাজুয়াল ড্রেস বেছে নেওয়াই ভাল। তা বলে এই নয় টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরে শ্বশুরবাড়ি রওনা দিলাম। তা নয়। ফেস্টিভিটিটাকেও এনজয় করা উচিত। সাজের মধ্যে উৎসবের ছোঁয়া যেন থাকে।

অনায়াসেই জামাইরা পরতে পারেন ডেনিম কুর্তা। নীচে চুড়ি-পা পাজামা। সঙ্গে সুতির মোদী কোট কিংবা খাদি কোট। এই লুক যেমন ক্যাজুয়াল তারই সঙ্গে এলিগ্যান্টও বটে। শর্ট কুর্তার সঙ্গে সালোয়ার প্যান্ট কিংবা লং পাঞ্জাবির সঙ্গে কম ঘেরের পালাজো প্যান্ট আনবে অন্য মাত্রা। তবে হ্যাঁ পাঞ্জাবির বোরিং প্যাটার্ন থেকে বেরিয়ে আসুন। সেই টিপিক্যাল চাইনিজ কাটের গলাওলা পাঞ্জাবি নয়। পাঞ্জাবির কাটে একটু নতুনত্ব থাকলে ব্যাপারটা জাস্ট জমে যাবে।

যে কোনও প্যাস্টেল শেডের কুর্তা চলতে পারে। একটু হ্যাপি কালার পড়ুন। স্কাই ব্লু, মিন্ট গ্রিন, অ্যাপেল গ্রিন, লেমন ইয়েলো এই উৎসবের জন্য পারফেক্ট। তবে হ্যাঁ, মাথায় রাখতে হবে এই অনুষ্ঠানটি যখন হয় তখন জ্যৈষ্ঠ মাস। বড্ড গরম। তাই পোশাকের ফ্যাব্রিকের দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। সেই কারণে সুতি কিংবা লিনেনের পোশাক পরাই ভাল। তাতে যেমন আরাম বোধ করবেন, তেমনই স্টাইলটাও করা যাবে নির্দ্বিধায়।

অভিষেক নাইয়া

জামাইষষ্ঠী এক্কেবারে ভরা গ্রীষ্মের অনুষ্ঠান। তাই গরমে আরামটা ভীষণ ভাবে জরুরি। আরামদায়ক পোশাক না হলে খাবার খেয়ে ঘেমেনেয়ে একসা হতে হবে। সে জন্য হান্ড্রেড পারসেন্ট কটন কিংবা খাদি কটনের পোশাক পরুন। গরমে মসলিন কিংবা মলমলে তৈরি পোশাক আরাম দেবে। এর সঙ্গে ন্যাচারাল ডাই করা পোশাক পরাই ভাল। গরমে ত্বকের লোমকূপগুলো খোলা থাকে। সেই কারণে সংক্রমণ বা চর্মরোগের আশঙ্কা অনেকটাই। এর মধ্যে পোশাকের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ঘামের সংস্পর্শে এসে লোমকূপের মধ্যে দিয়ে শরীরে ঢুকে যেতে পারে। তাই যতটা সম্ভব কেমিক্যাল ডাই করা পোশাক এড়িয়ে হার্বাল ডাই করা পোশাকই বেছে নিন।

ইন্ডিগো ব্লু, অ্যাপেল গ্রিন, অকার ইয়েলো কালারের কুর্তা, পাঞ্জাবি এই অনুষ্ঠানের জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট। পরুন ওয়েল ফিটেড, নি লেংথ কুর্তা। যাতে খুব বেশি এমব্রয়ডারি কিংবা কারিকুরি থাকবে না। এমব্রয়ডারি যদিও বা থাকে, তবে তার পরিমাণ যেন খুবই কম হয়। বরং ব্লক প্রিন্ট কিংবা মোটিফ থাকতে পারে। কুর্তার সঙ্গে সালোয়ার নৈব নৈব চ। বরং নীচে আলিগড়ি পাজামা কিংবা মলমলের তৈরি ঢোলা পাজামা দারুণ মানাবে।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

বছরের আর পাঁচটা দিন থাকে নানা ব্যস্ততা। সারাদিনটা কাটে দৌড়ঝাঁপে। ফর্ম্যাল পোশাকে কর্পোরেটেই কেটে যায় গোটা বছর। জামাইষষ্ঠীর দিনটা জামাইদের কাছে বিশেষ দিন। এই দিনটায় সবার নজর থাকবে আপনার দিকেই। তাই একটু বিশেষ সাজে সেজে ওঠাটা জরুরি। এই দিনটিতে ডিজাইনার পোশাক পরে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিন।

এখন ফ্যাশন ইন হ্যান্ডলুম। হ্যান্ডলুমে তৈরি পাঞ্জাবি এই উৎসবের সঙ্গে এক্কেবারে মানানসই। গামছা চেক খুব ভাল ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হতে পারে। এটা ঠিক গড়পড়তা গামছার মতো নয়। প্রিন্টটা গামছার, কিন্তু বুনোটটা একটু ঠাসা। সেই গামছা প্রিন্টের কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবিতে অ্যাপ্লিক, সঙ্গে হালকা কিছু স্বস্তিক মোটিফ। বাঙালিয়ানার ছোয়া এনে দেবে। এর সঙ্গে কলামকারি কিংবা মধুবনী প্রিন্টের পাঞ্জাবিও চোখ ভীষণ ভাবে আরাম দেয়।

ট্রাই করতে পারেন এই ধরনের পাঞ্জাবি কিংবা শর্ট কুর্তা। ধুতিটা একটু চাপের এখনকার জামাইদের জন্য। কিন্তু একটা দিন ম্যানেজ করে নেওয়াই যায়। আফটার অল একটা ঐতিহ্যকে বলে তো ব্যাপার আছে নাকি। আর এখন আর ধুতি পরার ঝক্কিও অনেক কম। রেডিমেড ধুতি শুধুমাত্র পা দিয়ে গলিয়ে নিলেই হল। তবে হ্যাঁ, ধুতি এখন অনেক বেশি নজরকাড়া। আগেকার মতো একঢাল সাদা ধুতি আর নেই। এখন ধুতি অনেক বেশি স্মার্ট। পাঞ্জাবির সঙ্গে প্রিন্টেড ধুতি পরুন। আপনি যদি ধুতিতে একান্তই কমফর্টেবল না হন তবে চুড়ি-পা পায়জামা পরতে পারেন। একটু হাল্কা রংই বেছে নিন। তবে এখন অনেকের অফিস, কাজকর্ম থাকে। তাই দুপুরে না করে, অনুষ্ঠানটি পালিত হয় রাতে। সে ক্ষেত্রে হেভি বা সলিড কালার চলতে পারে। ব্রিক রেড, ডাল ইয়েলো রংয়ের কুর্তা পরুন।

মডেল: সুমিত শর্মা, বেদ হালদার, যশ ভান্ডারী ও সায়ন্তন বক্সি।

ছবি: পবিত্র দাশ, রাহুল হালদার ও সায়ক।

সহায়তা: অনসূয়া গুপ্ত।

পোশাক সৌজন্যে: অভিষেক নাইয়া, অভিষেক দত্ত ও আরশি ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement