জ্বর সর্দি-কাশি মানেই কোভিড-১৯ নয়। ছবি: শাটারস্টক।
করোনা মূলত সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বহনকারী গ্রুপ। এই গ্রুপের ভাইরাস বছর দশেক আগেও এত ভয়াবহ ছিল না। আমরা প্রত্যেকেই এর প্রকোপে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগেছি। আবার সুস্থও হয়ে গিয়েছি নিজের নিয়মে। তবে জিনগত মিউটেশনের ফলে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এতই মারাত্মক হয়ে উঠল যে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল।
‘২০১৯ এনসিওভি’ নাম নিয়ে আসা এই ভাইরাস ইতিমধ্যেই ত্রাসের জন্ম দিয়েছে গোটা এই ভাইরাস থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগের নাম কোভিড-১৯। সারা পৃথিবী জুড়ে এর সংক্রমণের খবরে আমরা আতঙ্কিত। দিশেহারাও বটে।
কিন্তু সত্যিই কি এতটা ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়েছে? সাধারণ জ্বর-হাঁচি-সর্দি-কাশি হলেই আতঙ্কে গৃহবন্দি হওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে কি? সাধরাণ সর্দি-কাশি না কি করোনা বোঝার উপায় কিছু আছে কি? জানাচ্ছেন বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্ত ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন: করোনায় কতটা ঝুঁকি কলকাতার? রোগের মোকাবিলাই বা করবেন কী ভাবে, জেনে নিন
বিশ্বনাথবাবুর মতে, জ্বর-সর্দি-হাঁচি-কাশি হলে এত দিন যা করছিলেন তাই করবেন। ঘরে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেবেন। হালকা খাবার খাবেন। উষ্ণ জল খাবেন পর্যাপ্ত। দরকার মতো প্যারাসিটামল, কাশির ওষুধ খাবেন একটু আধটু। নরমাল স্যালাইন ড্রপ দেবেন নাকে। হাঁচি-কাশির সময় পরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করবেন। শিশু, বয়ষ্ক, রুগ্ণ ও গর্ভবতীদের থেকে দূরে থাকবেন। এটুকু করলেই ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমেই ভাইরাসকে কাবু করা যাবে। তখন বুঝতে হবে এটা সাধারণ ফ্লু-ই ছিল।
যদি ১০ দিনেও অসুখ না কমে তবে অবশ্যই রাজ্য সরকারের দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরে (হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০০৩১৩৪৪৪২২, ০৩৩২৩৪১২৬০০) ফোন করে সমস্যা জানাবেন। জেলার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে করোনা হয়েছে কি না তা বুঝতে পরীক্ষার ব্যবস্থা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
মেডিক্যাল টিম ঠিক করবে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য ওষুধ খেতে হবে কি না। আপনার যদি কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর না থাকে, অর্থাৎ সম্প্রতি বিদেশ যাননি বা আশপাশে এ ধরনের রোগী নেই, তা হলে ভয় তুলনায় অনেক কম।
কিন্তু আশপাশে এ ধরনের রোগী নেই তা কী করে বোঝা যাবে? হাঁচি-সর্দি নিয়ে তো অনেকেই ঘুরে বে়ড়ান। তাঁদের কারও যদি এই সংক্রমণ হয়ে থাকে ও তিনি যদি ধারেকাছে এসে হেঁচে-কেশে দেন, তা হলে সমস্যা হতেই পারে!
বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের মতে, এই ভাইরাস যদি ১০০ জনকে সংক্রামিত করে তার মধ্যে ১০-১৫ কি ২০ জনের অবস্থা জটিল হয়। বিপদ হয় দু’-এক জনের। বাকি ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষের সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের মতো উপসর্গ হয়। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা নিজের নিয়মেই কমে যায়। তবে এঁরা অসুস্থ শরীরে রোগ ছড়াতে পারে। কিন্তু তাতেও উদ্বেগের কিছু নেই। প্রথমত, রোগ হলেও ৮০-৮৫ শতাংশ সম্ভাবনা যে আপনি প্রথম প্রথম অসুখটা টেরও পাবেন না। কাজেই রোগ হচ্ছে এমন কোনও জায়গায় যদি সফর না করে থাকেন, তা হলে নূন্যতম সচেতনতা মেনে চললেই হবে।
আরও পড়ুন: জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? করোনায় আক্রান্ত নন তো? কী করে বুঝবেন
বিপদ হতে চলেছে তা কী করে বুঝব?
বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন। এক) কারও যদি হার্ট-লাং-কিডনি-লিভারের ক্রনিক অসুখ না থাকে, বা কোনও অসুখ বা ওষুধের কারণে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না যায় কিংবা বয়স খুব বেশি না হয়, তা হলে অত ভয়ের নেই। সে ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করা যেতে পারে। তার পর যদি দেখা যায় উপসর্গ কমার বদলে বাড়ছে, প্রবল জ্বর উঠছে বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, রক্তচাপ কমে মাথা ঘুরছে, প্রলাপ বকতে শুরু করছেন, তা কিন্তু বিপদের লক্ষণ।
বিপদের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে কিছু করার নেই?
আপাতত তেমন কিছু করার নেই, জানালেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এখনও পর্যন্ত এ রোগের প্রতিষেধক বা নির্দিষ্ট ওষুধ কিছু নেই। উপসর্গ হলে তবে তা কমানোর চিকিৎসা করা হয়। আর এতেই ৯৭-৯৮ শতাংশ মানুষ সেরে যান। তবে এখন পরিকাঠামোর অভাবে গোটা দেশেই সপ্তাহে ১৫-২০টির বেশি রোগ নির্ণয় করা যায় না। এই সব মারণভাইরাস হানা দিলে সেই সংখ্যাটা আরও বাড়ানো উচিত। যাতে বেশি ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে অন্তত চটজলদি পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।