ত্বক বাঁচাতে মেনে চলুন কিছু নিয়ম। ফাইল ছবি।
পৃথিবী জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে কোভিড-১৯ ভাইরাস। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ-সহ বিজ্ঞানীদের দাওয়াই, বার বার ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া। অথবা অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাতকে ভাইরাস মুক্ত করা। এ ছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে সুস্থ ভাবে বাঁচতে হলে বাইরে বেরলে মাস্ক পরা ছাড়া কোনও পথ নেই। বিশ্ব জুড়ে মহামারি সৃষ্টি করা কোভিড-১৯-এর লক্ষ্য মানুষের শরীর, আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে এদের প্রধান আক্রমণের জায়গা শ্বাসনালী ও ফুসফুস। তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। এ দিকে বার বার হাত ধুয়ে এবং মাস্ক পরে ত্বকেরও কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তাতে নিয়মে রাশ টানলে চলবে না। বরং ত্বকের যত্ন নিয়েই নিয়ম মানতে হবে।
ত্বক শুকিয়ে গিয়ে র্যাশ বেরয়
বার বার সাবান ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে হাতের ত্বকে র্যাশ, ছাল উঠে যাওয়া-সহ নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সকলের না হলেও অনেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কিন্তু হাত তো কোনও মতেই এড়ানো যাবে না! ত্বক বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ী জানালেন, হাতের পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যাঁদের ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির এবং এগজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ক্রনিক ত্বকের সমস্যা আছে, কিংবা অ্যালার্জিজনিত অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস আছে তাঁরা প্রতি বার হাত ধোয়ার পর ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, নিদেনপক্ষে নারকেল তেল হাতে লাগিয়ে নেবেন। বয়স্কদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের ময়েশ্চারও কমে যায়। তাই প্রবীণ নাগরিকদেরও উচিত হাত ধোয়ার পরে নারকেল তেল ভাল করে হাতে মেখে নেওয়া।
হাতে অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন মাখবেন না
এখন মারণ ভাইরাস ঠেকাতে প্রত্যেককেই একাধিক বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হচ্ছে। তবে অনেকে আরও বেশি সুরক্ষার জন্য অ্যান্টিসেপটিক লোশন হাতে মেখে নেন। এর ফলে ত্বক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানালেন কৌশিকবাবু। অনেকে বাড়তি সুরক্ষার জন্যে নিমপাতা বেটে বা নিমপাতা সেদ্ধ করা জলে হাত-মুখ ধুয়ে নেন। নিমপাতাও ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ত্বক শুষ্ক করে দেয়। তাই সাধারণ সাবান ব্যবহার করুন, তাতেই কোভিড-১৯ ভাইরাসকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পাতে নিয়মিত রাখুন এ সব
হাত পরিষ্কারের পর মেখে নিন ময়শ্চারাইজার।
স্যানিটাইজার থেকে কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস
‘‘বাইরে বেরলে বা অফিসে গেলে হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া মুশকিল। সব জায়গায় সব সময় কলের জল পাওয়া যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে এ ক্ষেত্রে অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু একাধিক বার স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করলে অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’’ জানালেন ওয়ার্ল্ড এগজিমা কাউন্সিল-এর ভারতীয় প্রতিনিধি, ত্বকবিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর। এর ফলে হাতে লাল র্যাশ বেরয়, জ্বালা ও চুলকানি থাকতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের ত্বক অ্যাটোপিক অর্থাৎ অ্যালার্জিপ্রবণ, তাঁদের সমস্যা বেশি হয়। এর থেকে পরবর্তী কালে এগজিমা হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। সন্দীপনবাবু জানালেন, অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার হাতের স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাব ধ্বংস করে দেয় বলে হাতের ত্বক শুকিয়ে গিয়ে সমস্যা হয়।
লকডাউন উঠে গেলেও হাত পরিষ্কারের ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্যানিটাইজারের পরিবর্তে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
আরও পড়ুন: হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে কোভিডের হানা কতটা ঝুঁকির?
সন্দীপনবাবু জানালেন, এ ক্ষেত্রেও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নারকেল তেল, ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। খুব সমস্যা হয় না। কিন্তু যাঁদের এগজিমা আছে বা ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাঁদের উচিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়া। আর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগানো। একনাগাড়ে এন-৯৫ মাস্ক পরে থাকলেও নাকে ও মুখের ত্বকে র্যাশ বেরনোর ঝুঁকি থাকে। তবে তার জন্য মাস্ক পরা বন্ধ করলে চলবে না। অনেক ক্ষণ পরে থাকার বিষয় থাকলে কোনও বেরিয়ার ক্রিম লাগিয়ে মাস্ক পরতে হবে।