অনেকেই রোগা হওয়ার জন্য ডায়েট করার সময়ে খাবারে নুনের পরিমাণ কমিয়ে দেন। আসলে নুন শরীরে জলধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে অনেকেই মনে করেন যে, এই জলের ওজনই বডিওয়েট বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী জানালেন, “এই কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। নুন খেলে শরীরে জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে ঠিকই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তার থেকে ওজনও অনেকটা বেড়ে যাবে। এমনকি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁদেরও প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট পরিমাণে নুন রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।”
রোজ কতটা নুন খাবেন?
একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রত্যেক দিন এক চা চামচ নুন খাওয়া উচিত। পাঁচ-ছ’গ্রাম নুন খাদ্যতালিকায় রাখাই যায়। তবে কাঁচা নুন না খেয়ে রান্নায় নুন দিয়ে খাওয়াই ভাল। অন্যথায় শুকনো খোলায় নুন নেড়ে, তা খেতে পারেন। বিশেষত উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগলে কাঁচা নুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
কী নুন খাবেন?
বাজারে সি সল্ট, পিঙ্ক সল্ট, রক সল্ট, টেবল সল্ট... ইত্যাদি অনেক ধরনের নুন পাওয়া যায়। প্রত্যেকটিতেই সোডিয়াম থাকে। অনেকেই মনে করেন, সি সল্টে মিনারেল বেশি থাকে, তাই টেবল সল্টের চেয়ে তা বেশি ভাল। কিন্তু সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘অন্যান্য সল্টের তুলনায় টেবল সল্ট খাওয়া বেশি ভাল। তার কারণ টেবল সল্ট রিফাইনড। বিশেষত মেয়েদের জন্য আয়োডাইজ়ড টেবল সল্ট খাওয়া ভাল।’’ অন্য দিকে সি সল্ট যেহেতু সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত করে তৈরি হয়, তাই মিনারেলের পরিমাণ সমুদ্র অনুসারে পৃথক হয়।
নুনের অভাবে যে সমস্যা হয়
নুনে শতকরা ৯৭-৯৯ ভাগই হল সোডিয়াম ক্লোরাইড। ফলে নুন খাওয়া বন্ধ করলে প্রথমেই সোডিয়ামের অভাব হবে। এর অভাবে নানা রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে। হুট করে প্রেশার কমে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও বিরল নয়।
খেয়াল রাখতে হবে
• সাধারণ মাখন, চিজ়, পাউরুটি ইত্যাদি খাবারে কিছুটা পরিমাণে নুন থাকে। তাই এই জাতীয় খাবার রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকলে অন্য খাবারে নুনের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
• যাঁরা রোজ কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম বেশি করেন, তারা ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ মতো খাবারে নুনের পরিমাণ স্থির করুন। কারণ ঘামের মাধ্যমেও শরীর থেকে জল ও নুন অনেকটাই বেরিয়ে যায়। ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স কম হলেও ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নুনের পরিমাণ বাড়াতে হতে পারে।
• বাজারচলতি প্যাকেটজাত খাবার যেমন, চিপস, নাচোজ় থেকে শুরু করে হ্যাম, সসেজ, সয় সস, টম্যাটো সসেও নুন থাকে। এই ধরনের খাবারের বিষয়েও সচেতন হবেন।
মাছ, মাংস বা ডিম থেকেও সোডিয়াম পাওয়া যায়। তবে রোজকার চাহিদা তাতে মেটে না। সেখানে অল্প নুন অনেক সহজেই সেই ঘাটতি পূরণ করে।