Coronavirus Lockdown

অনলাইন ক্লাসের স্বাস্থ্য-সমস্যা

অনলাইন ক্লাসের জন্য দীর্ঘ সময় মোবাইল হাতে বসে থাকছে পড়ুয়ারা।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০০:২২
Share:

অনলাইনের ক্লাসের সুবিধে আছে। ঘরবন্দি সময়ে পড়াশোনাটা অন্তত চালু রাখা যায়। কিন্তু অসুবিধেও রয়েছে বেশ কয়েকটি। সেই অসুবিধেগুলো দু’টো ভাগে ভাগ করা যায়। শিক্ষাগত এবং স্বাস্থ্যগত। শিক্ষাগত সমস্যা হল, স্কুল ছুটের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা। অনেক ছাত্র ছাত্রীর বাড়িতেই মোবাইল নেই। স্কুল খোলা থাকা মানে সময়ের বিষয়ে সচেতন থাকে পড়ুয়ারা। আর স্বাস্থ্যগত দিক? যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে মানসিক বিকাশ হয় সেই সময়ে ঘরে বসে থাকায় অবসাদগ্রস্ত হতে পারে পড়ুয়ারা। চিকিৎসকেরা আগেই সাবধান করেছিলেন, স্মার্টফোনের আলোয় চোখের ক্ষতি করে। সেই সঙ্গে মানসিক ক্লান্তি আনে। অনলাইন ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার করতেই হয়। ফলে চোখের সঙ্গে অন্য সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে বাচ্চাদের।

Advertisement

অনলাইন ক্লাসের জন্য দীর্ঘ সময় মোবাইল হাতে বসে থাকছে পড়ুয়ারা। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের হেডফোন ব্যবহার করছে। এর ফলে নানা ধরনের শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যার শিকার হচ্ছে খুদেরা। মত চিকিৎসকদের একাংশের। হলদিয়ার নাক-কান-গলার রোগের চিকিৎসক বিধান রায় জানান, প্রতিদিনই কানের সমস্যা নিয়ে ছোটরা আসছে। অনেক সময়েই সমস্যার উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝেছেন, অনলাইন ক্লাস চলাকালীন হেডফোন ব্যবহারের ফলেই ছোটদের কানে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ওই চিকিৎসক জানান, প্রতিদিনই প্রায় তিন থেকে চারজন অভিভাবক জানাচ্ছেন তাঁদের ছেলে মেয়েদের কানে শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। চিকিৎসক বলেন, ‘‘অভিভাবকদের বলছি লাউড স্পিকার ব্যবহার করতে। অনলাইন ক্লাসে যদি দেখার ফ্রেম বড় করা যায় তাহলেও সুবিধে। তাছাড়া ক্লাসগুলিকে ছোট ছোট পর্বে করে নিলেও ছেলে মেয়েদের মানসিক চাপ কমবে।’’ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বারিষ ঘোষ জানিয়েছে, হেডফোনে ক্লাস করার পর কান ব্যথা করে। মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।

চিকিৎসকদের একাংশের মত, একটানা হেডফোন কানে থাকার জন্য ছেলে মেয়েদের চাঞ্চল্য দেখা দিচ্ছে। একটুতেই বিরক্তি-সহ নানা ব্যবহারিক পরিবর্তনও ঘটছে। হলদিয়ার চক্ষুরোগের চিকিৎসক শুভ্রা শীল জানান, খুদেরা অনলাইন ক্লাসে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ছেলে মেয়েদের মধ্যে ব্যবহারের যে পরিবর্তন এসেছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ব্যবহারে পরিবর্তনের নিদর্শন হল, ওরা ঘরে ঘনঘন ফ্রিজ খুলে নানা ধরনের খাবার খাচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রম কম হয়ে যাওয়ার জন্য মেদ বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ। অভিভাবক ইন্দ্রদীপ ভৌমিক বলেন, ‘‘ছেলে ঘরবন্দি থাকার জন্য একটু জেদি হয়েছে। আমরা নানা ধরনের কাজে ছেলেকে যুক্ত করেছি। কম্পিউটার কোডিংয়ের ক্লাস করছে সে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইন ক্লাস করার পর মানসিক ও শারীরিক ভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।’’ এই অভিভাবকের মত, অনলাইন ক্লাসগুলো একটানা না করিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে আরও আনন্দদায়ক করে তুললে সমস্যা কমবে।

Advertisement

চিকিৎসক থেকে অভিভাবক সকলেই স্বীকার করছেন, অনলাইন ক্লাস করতেই হবে। না হলে হয়তো পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু সব মিলিয়ে ছেলে মেয়েদের মনে চাপ বাড়ছে। এখন তো টিউশন, নাচ, গান এমনকি ক্যারাটের অনলাইন ক্লাসও শুরু হয়েছে। অনেকটা সময় মোবাইল ব্যবহার করতে হচ্ছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিক জানান, ছেলে মেয়েরা মাঠে যেতে পারছে না। রোদ না লাগায় ভিটামিন তৈরি হচ্ছে না। ভিটামিন-ডি শরীর মন চনমনে রাখতেও সাহায্য করে। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে বলে জানান তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন অনুপম পালধি। তিনি জানান, পড়ার সঙ্গেই ছোটদের ক্লাসিক সিনেমা দেখিয়েও মন ভাল রাখা যায়। দাবা, ক্যারমের মতো খেলাতেও সঙ্গ দেওয়া যেতে পারে। অনলাইনে নাচ, গান শেখানোয় ধীরে ধীরে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে নব প্রজন্ম, মনে করেন অনুপম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সম্ভব হলে ভাল হেডফোন ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস করুক ছোটরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement