অতিমারি পরবর্তী সময়ে মাস্ক বলতেই অন্য এক ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তবে সৌন্দর্যের পাঠ্যবইয়ে মাস্কের সংজ্ঞা ও রকমফের ভিন্ন। কেউ দোকান থেকে কিনে এনে রেডিমেড মাস্ক ব্যবহার করেন। আবার অনেকে অনুসরণ করেন ‘জ়িরো ওয়েস্ট’ থিয়োরি, অর্থাৎ রান্নাঘরের বাড়তি জিনিস ফেলে না দিয়ে, ঘরোয়া উপকরণ দিয়েই বানিয়ে নেন ফেস মাস্ক। চটজলদি ফল পেতে শিট মাস্কের ব্যবহারও জনপ্রিয়। তবে আপনার ত্বকের জন্য কোনটি উপযোগী, আর কখনই বা লাগাবেন, তা জেনে নেওয়া দরকার আগে।
প্যাক বনাম মাস্ক
প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার, ফেস প্যাক আর ফেস মাস্কের তফাত। মাস্ক প্রধানত নন-সেটিং, উপকরণের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় শুকোতেও সময় নেয় বেশি। অন্য দিকে, ফেস প্যাকের পরতটি পাতলা হয়, শুকিয়েও যায় সহজে।
* মাস্ক ব্যবহারের শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নেওয়া হয় সাধারণত। প্যাক জলের ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
* মুখে মাস্ক লাগানোর সময়ে হালকা হাতে মাসাজ করে নেওয়া হয় ত্বকে। ফেস প্যাক লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ব্রাশ।
* ফেস প্যাক সাময়িক জৌলুস আনতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী ফল পেতে মাস্কের ব্যবহার শুরু করা প্রয়োজন।
মুখোশের নানা মুখ
উপকরণ ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী মাস্ক বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে:
* শিট মাস্ক: ত্বকের আর্দ্রতা ফেরাতে শিট মাস্কের জুড়ি নেই। এই ধরনের মাস্ক ব্যবহার করাও সবচেয়ে সহজ। মুখের আকার অনুযায়ী কেটে নেওয়া সেলুলোজ় বা মাইক্রোফাইবারের পাতলা শিট ভিজিয়ে রাখা হয় জমিয়ে রাখা সেরামে। ত্বক এই সেরাম শুষে নিয়ে আর্দ্র হয়ে ওঠে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই মাস্কের ব্যবহার প্রথম জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে এগুলি পুনর্ব্যবহার করা যায় না। ব্যবহারের নির্দেশে যতক্ষণ সময়ের উল্লেখ রয়েছে, তার বেশি লাগিয়ে রাখবেন না।
* পিল-অফ মাস্ক: এই ধরনের মাস্ক সাধারণত ত্বকের এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। এই মাস্ক তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের উপরের মৃত কোষও সরে পরিষ্কার হয়ে যায়। ত্বকের দাগ-ছোপ, ব্ল্যাক হেডস বা হোয়াইট হেডস দূর করতে, পিগমেন্টেশন প্রতিরোধে এই মাস্কের জুড়ি নেই। ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে দেয় বলে চটজলদি জেল্লাও এনে দেয় এই ধরনের মাস্ক।
* ক্লে মাস্ক: ফেস মাস্কের মধ্যে এ ধরনের ক্লে-বেসড মাস্কের প্রচলনই শুরু হয়েছিল সবচেয়ে আগে। ত্বকের ময়লার পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ, অ্যাকনের সমস্যা ইত্যাদির জন্য উপযোগী ক্লে মাস্ক। মুলতানি মাটি, কেওলিন ক্লে, ফ্রেঞ্চ গ্রিন ক্লে, বেনটোনাইট ক্লে মাস্কের মতো এর রকমফের দেখা যায় মূলত বেস মেটিরিয়ালের প্রকারভেদে। তার সঙ্গে লিকুইড এজেন্ট হিসেবে গোলাপ জল, অ্যালো ভেরা জেল, এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো হয়ে থাকে। এই মাস্কের উপকরণ বেশি না হলেও কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। আগেকার দিনে বিভিন্ন প্রকারের মাটি দিয়ে রূপচর্চার প্রচলন ছিল, সেখান থেকেই আজকের আকার নিয়েছে ক্লে মাস্ক।
* স্লিপ মাস্ক: সারা রাত ধরে রেখে দেওয়া যায় এই ধরনের মাস্ক। এগুলি মূলত রেজুভিনেটিং মাস্ক, যা বিশ্রামের সময়ে ত্বকে কাজ করে। এর ময়শ্চারাইজ়িং এফেক্ট ত্বককে নরম ও পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টে এই ধরনের মাস্কের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। তবে এই মাস্ক ক্রিমবেসড হওয়া উচিত নয়। তা হলে রাতে ঘুমোনোর সময়ে উঠে যেতে পারে।
* চারকোল মাস্ক: ত্বকের ইমপিয়োরিটি, অর্থাৎ দূষিত পদার্থ বার করতে চারকোল মাস্ক সেরা। ডিটক্স বিউটি ট্রিটমেন্টের অন্যতম উপকরণই এই চারকোল মাস্ক। অ্যাক্টিভেটেড চারকোল পাউডার ও বেনটোনাইট ক্লে-র মিশ্রণে তৈরি হয় এই মাস্ক। এক্সফোলিয়েন্ট এজেন্ট থাকায় ত্বক উজ্জ্বল দেখায় চারকোল মাস্ক ব্যবহারের পরে। এটিও এক ধরনের পিল-অফ মাস্ক।
এ ছাড়া থার্মাল মাস্ক, চকলেট মাস্ক, জেল-বেসড সি-উইড মাস্কের মতো বহু ধরনের ফেস মাস্ক রয়েছে। বাড়িতে তৈরি মাস্কে বেসের সঙ্গে মেশান আনাজ বা ফলের নির্যাস।
ঘরোয়া মাস্ক
রূপবিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনস সন্ধান দিলেন দু’টি ঘরোয়া মাস্কের:
* ৪ টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে একটি অ্যাভোকাডোর অর্ধেক কেটে, পেস্ট করে মিশিয়ে নিন। বেসন বা ময়দা দিন তাতে। কোনও এসেনশিয়াল অয়েল বা সি সল্টও মেশাতে পারেন। আধঘণ্টা রেখে তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন।
* মুলতানি মাটি নিয়ে তাতে আধ চা-চামচ মধু, একটা ডিমের সাদা অংশ এবং এক চা-চামচ টক দই মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে ফেলুন। মিনিট ২০ রেখে আলতো করে মুছে নিন।
মাস্কে মুখ ঢাকুন। ভাল থাকার অনুভূতি পান ভিতরে ও বাইরে।