সামাজিক দূরত্ব না মানলেই বাড়বে বিপদ। ছবি-রয়টার্স
পর পর লকডাউন করেও করোনার বাড়বাড়ন্ত আটকানো যাচ্ছে না। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাস, অটো, ট্রাম সবই চলছে আপন নিয়মে। কাগজে কলমে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও আদৌ তা মানা হচ্ছে না।
ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ অর্পণ চৌধুরী জানালেন অতিমারি সৃষ্টকারী নভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিয়ম মেনে হাত সাবান দিয়ে ধোওয়া। একই সঙ্গে টি-জোন অর্থাৎ নাক, মুখ ও চোখে সাবান না দিয়ে হাত দেওয়া চলবে না। রাস্তা-ঘাটে হাঁটলে সারফেস থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুবই কম। স্কুটার বা সাইকেলে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে কোনও আক্রান্ত মানুষ গেলে সে ক্ষেত্রেও রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক কম, বললেন অর্পণ বাবু।
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হতে গেলে ইনফেকটিভ ডোজ হিসেবে ১০০০ ভাইরাল পার্টিকলস (ভিপি) প্রয়োজন হয়। এর কম সংখ্যক ভাইরাস নাক মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কম। আক্রান্তের শ্বাসের সঙ্গে ২০ ভিপি/ মিনিট, কথা বললে ২০০ ভিপি /মিনিট, হাঁচি ও কাশির সময় ২০০ মিলিয়ন ভিপি / মিনিট ভাইরাস নির্গত হয়। তাই করোনা আক্রান্তের কাছাকাছি বেশিক্ষণ থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্রেফ নুন-জল গার্গলেই জব্দ করোনা, বলছে গবেষণা
যেসব নিয়ম মেনে চললে কোভিড ১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে, তা এক নজরে-
• যে কোনও মানুষের থেকে ৬ ফিটের বেশি দূরত্বে ৪৫ মিনিটের কম সময় মুখে থ্রি লেয়ার মাস্ক পরে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম থাকে।
• সিনেমা হল, শপিং মল, স্কুল কলেজের রুম, অফিস, কনফারেন্স রুম এই সব জায়গায় কোনও সংক্রমিত মানুষ থাকলে তাঁর থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
• সংক্রমিত মানুষের থেকে ৬ ফিটের বেশি দূরত্বে মুখে থ্রি লেয়ার মাস্ক পরে চার মিনিটের কম সময় কথা বললে সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কম থাকে।
• অতিমারির এই সময়টায় পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে করলে কোভিড ১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এই সময় ব্যবহারে না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
• বিয়েবাড়ি সহ যে কোনও পার্টি বা ক্লাবে জমায়েত হলে সংক্রমণ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
• বাস, ট্রাম, ট্রেন বা বিমানে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি থাকলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি প্রবল।
• সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতেই হবেমন্দির, মসজিদ সহ যে কোনও ধর্মীয় স্থানে জমায়েত হলে উপসর্গহীন সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ভীষণ ভাবে বেড়ে যায়।
• ইন্ডোর অর্থাৎ ঘরের মধ্যে একাধিক মানুষ থাকলে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে, রাস্তা ঘাটে তুলনামূলক ভাবে কম। তবে বাজারের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটা করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।
• হাত না ধুয়ে মুখে, নাকে বা চোখে হাত দিলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। মাস্ক পরার পাশাপাশি খাবার আগে তো বটেই মুখে চোখে হাত দেওয়ার আগেও হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
• বাইরে বেরিয়ে খাবার বা জল খাবার আগে হাত মুখ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নুন জলে কুলকুচি ও গার্গল করে তারপর খাবার খেতে হবে।
• নিজের গাড়ি বা সাইকেল অথবা পায়ে হেঁটে বাইরে যাওয়া যায়। জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বেরনো চলবে না।
• পরিচ্ছন্নতা মেনে ও পুষ্টিকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে মেকানিক ডাকতে ভয়? এসির যত্ন নেবেন এ ভাবে