DIABETES

গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিস চরম ক্ষতি করতে পারে ভ্রূণের, কী ভাবে ঠেকাবেন?

আগত সন্তানকে সুস্থ রাখতে গর্ভাবস্থায় সুগার খুব ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। কিন্তু কী ভাবে?

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ১৬:৫০
Share:

ডায়াবিটিসের চেক আপ না করিয়ে গর্ভবতী হওয়া ঝুঁকির কাজ। ছবি: শাটারস্টক।

গর্ভসঞ্চারের আগে থেকেই অনেক সময় হবু মায়ের ডায়াবিটিস থাকে৷ পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয় না বলে তা জানা যায় না৷ হঠাৎ গর্ভবতী হওয়ার পর রুটিন পরীক্ষায় তা ধরা পড়লে চিন্তায় পড়ে যান চিকিৎসক৷ কারণ হবু মায়ের সুগার বেশি থাকলে গর্ভস্থ সন্তানের নানা রকম জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ তাই চেক আপ না করিয়ে গর্ভবতী হতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা। বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বেশ কিছু ক্ষেত্রে। যেমন:

Advertisement

যদি হবু মায়ের ওজন ও বয়স বেশি হয়। প্রথম সন্তানের বেলায় গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিস হয়ে থাকে। হবু মায়ের বাবা–মায়ের এ রোগ থাকে। প্রথম সন্তানের কোনও জন্মগত রোগ থাকে বা তার ওজন সাড়ে তিন কেজির বেশি হয়।

এ ছাড়া আর এক রকম ডায়াবিটিস হয়, জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস, যা দেখা দেয় গর্ভাবস্থার শেষের দিকে৷ সামলে চলতে না পারলে এ থেকেও নানা বিপদ হয়৷ যত জন গর্ভবতী মহিলা ডায়াবিটিসে ভোগেন, তাঁদের মধ্যে ৯০–৯৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই রোগ দ্বিতীয় গোত্রের৷

Advertisement

আরও পড়ুন: এক সঙ্গে দু’জনকে ভালবাসা কি সম্ভব? কী বলছেন মনোবিদরা

পরীক্ষানিরীক্ষা

আগে থেকে ডায়াবিটিস থাকলে গর্ভসঞ্চারের আগে ফাস্টিং ও পিপি সুগার ও থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করা হয়৷ এ ছাড়া, রক্তচাপ, ইসিজি, ইউরিয়া–ক্রিয়েটিনিন ও ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স টেস্ট, রেটিনা ঠিক আছে কি না জানতে ফান্ডাস ফটোগ্রাফি ইত্যাদি করা হয়৷ ডায়াবিটিস না থাকলেও গর্ভসঞ্চারের শুরুতে প্রথমে ফাস্টিং সুগার, তারপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাইয়ে মাপা হয় পিপি সুগার৷ রিপোর্ট নর্মাল এলে ২৪–২৮ সপ্তাহে আবার পরীক্ষা করা হয়৷ তখনও সব ঠিক এলে আর ভয় নেই৷ কারণ জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস সাধারণত এই সময়ই হয়৷ ডায়াবিটিস ধরা পড়লে স্ত্রী রোগ ও হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে হবু মা ও গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থতা যাচাই করে প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ সুগারের গতিবিধির দিকে নজর রাখতে হয় নিয়মিত৷ জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলে রোজ সকাল–দুপুর ও রাতের খাবার খাওয়ার পর গ্লুকোমিটার যন্ত্রে সুগার মেপে দেখা হয়৷ ডায়াবিটিস আগে থেকে থাকলে মাপতে হয় খাওয়ার আগে ও পরে৷ ও সপ্তাহে এক দিন রাত তিনটের সময়৷

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে গর্ভাবস্থায় হালকা কিছু ব্যায়াম রপ্ত করুন।

চিকিৎসা

আগে থেকে ডায়াবিটিস থাকলে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে পরিস্থিতি যাচাই করার পর খাওয়ার ওষুধ বন্ধ করে শুরু হয় ইনসুলিন৷ ফোলিক অ্যাসিড দেওয়া হয়৷ এর পর সব ঠিকঠাক থাকলে অনুমতি দেওয়া হয় গর্ভসঞ্চারের৷ ডায়াবিটিস থাকলে গর্ভসঞ্চারের প্রথম ৪ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের সবচেয়ে ক্ষতি হয়৷ সে জন্য সুগার খুব ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার৷

ওজন বশে রাখাও খুব জরুরি৷ গর্ভাবস্থায় সাধারণত ১০–১২ কেজির মতো ওজন বাড়ার কথা৷ কিন্তু হবু মায়ের ওজন যদি আগে থেকেই খুব বেশি থাকে, এ নিয়মের কিছুটা অন্যথা হয়৷ যেমন, বিএমআই (ওজন কেজিতে মেপে তাকে সেন্টিমিটারে মাপা উচ্চতার বর্গ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তাই হল বিএমআই বা ওবেসিটির সূচক) ৩০–৩৫ হলে ৫–১০ কেজি ওজন বাড়তে পারে, ৩৫–৪০ হলে ০–৫ কেজি বাড়বে ও ৪০–এর বেশি হলে আর বাড়ানো তো চলবেই না, বরং কমাতে হবে ৫ শতাংশের মতো৷ না হলে ভাবী মা ও গর্ভস্থ সন্তান, দুইয়েরই নানা রকম বিপদ হতে পারে৷

প্রসবের সময় ভাবী মায়ের ব্লাড সুগার ৯০–১২০–র মধ্যে থাকা জরুরি৷ না হলে নবজাতকের রক্তে সুগার খুব কমে যেতে পারে৷ হতে পারে জন্ডিস ও শ্বাসকষ্ট ৷

আরও পড়ুন: প্রায়ই মাউথওয়াশ ব্যবহার করেন? কী বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?

প্রসবের পর

প্রসবের পর ৬–১২ সপ্তাহের মধ্যে সুগার পরীক্ষা করতে হয়৷ এরপর করতে হয় প্রতি বছর৷ পরের বাচ্চা হওয়ার সময় সুগার বাড়তে পারে৷ কাজেই সতর্ক থাকা দরকার৷ প্রসবের পর জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস কমে গেলেও প্রায় ৪০–৫০ শতাংশ মহিলার ১০–২০ বছরের মধ্যে ডায়াবিটিস হয়৷ তাকে ঠেকানোর সবচেয়ে ভাল রাস্তা লো–ক্যালোরির সুষম খাবার খেয়ে ও ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করে ওজন কম রাখা৷

মায়ের জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলে, তাঁর সন্তানদের পরবর্তী কালে চাইল্ডহুড ওবেসিটি ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ কাজেই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় তাদের৷ সুষম খাবার খেয়ে ও ব্যায়াম করে ওজন কম রাখতে হয়৷ দূরে থাকতে হয় যে কোনও মদ, মাদক ও ধূমপান থেকেও৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement