child care

বড় হোক সাবধানে

ওদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটে স্কুলে। নিজের দায়িত্ব নেওয়ার হাতেখড়িও সেখানেই

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৪
Share:

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের জগতে সন্তানকে ছাড়তেই হয়। শুরু হয় তাদের স্কুলে যাওয়া, বন্ধুমহলে ঘোরাফেরা, স্কুলের বাইরে নাচ-গানের ক্লাসে যাওয়া। তখন কিন্তু তারা মা-বাবার চোখের সামনে থাকে না। সেই সময়ে নিজের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। পাঠ শুরু করতে পারেন বাড়িতেই।

Advertisement

স্কুলে সচেতন হন

টিফিন পিরিয়ডে বা ছুটির পরে অনেক শিশুই দল বেঁধে খেলা করে। খেলার সময়ে অনেক দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে। বিশেষত, স্কুল বিল্ডিংয়ে দৌড়োদৌড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে পড়ে মাথা ফাটার ঘটনা নতুন নয়। প্লে গ্রাউন্ডে খেলতে গিয়েও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘অনেক ছাত্র-ছাত্রীই সিঁড়ি থেকে নামার প্রতিযোগিতা করে, ‘কে আগে নামতে পারে?’ সন্তানকে বোঝাতে হবে, প্রতিযোগিতা হোক অন্য জায়গায়, পড়াশোনায় বা খেলার মাঠে। সিঁড়িতে নয়।’’ সন্তান অসুস্থ থাকলে তাকে স্কুলে পাঠাবেন না। বিশেষত, সে যদি কোনও ভাইরাল অসুখে আক্রান্ত হয়। আপনার সন্তানের কারণে ক্লাসের অন্য শিশুও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। উল্টো দিক থেকে ভাবলে অন্য কোনও শিশুর ভাইরাল হলেও আপনার শিশু তার সংস্পর্শে এলে অসুস্থ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক মা-বাবাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। ফ্লু সিজ়ন শুরুর আগেই ফ্লু ভ্যাকসিন দিয়ে নেওয়াও জরুরি। স্কুলের বাথরুম থেকে ছাত্রীদের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে বাইরের বাথরুম ব্যবহারের আগে ভাল করে জল দিয়ে নিতে বলুন। ছোটদের বোঝাতে হবে, তা না করলে কী সমস্যা হতে পারে। স্কুলের পরে ফাঁকা বাথরুম এড়িয়ে যেতে হবে। বরং স্কুল চলাকালীন ক্লাসের মাঝে বা টিফিন পিরিয়ডে বাথরুমের কাজ সেরে নেওয়াই ভাল। একান্তই ছুটির পরে বাথরুমে যেতে হলে সঙ্গে কোনও বন্ধুকে নিয়ে যেতে হবে। পায়েল ঘোষ বলছেন, ‘‘কোনও কারণে বাথরুমের দরজা আটকে গেলে সমানে দরজায় ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে যেতে হবে। অনেকে ভয়ে চুপ করে যায়। তাতে কিন্তু বিপদ বাড়ে।’’ কম্পাসের কাঁটা, পেনসিলের সীস, পেনের নিব থেকেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যবহারের পরে সেগুলি বক্সেই রাখতে বলুন। বসার বেঞ্চে যেন ফেলে না রাখে। সন্তানকেও বলুন, কোথাও বসার আগে সেই জায়গাটা ভাল করে দেখে বসতে। গুড টাচ ও ব্যাড টাচ কী, তা জানান। তার শরীরের কোথায় কোথায় স্পর্শ উচিত নয়, তা পরিষ্কার ভাবে তাকে বুঝিয়ে বলুন। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বা স্কুল কম্পাউন্ডে কেউ একা কোথাও যেতে বললে, সে যেন না যায়। সন্তানকে বোঝান, একা গেলে কী কী বিপদ হতে পারে। তা হলে সন্তান নিজেই সতর্ক হয়ে যাবে। স্কুলবাসে যাতায়াত করলে তাকে বলুন, বন্ধুরা বাসে থাকলে তবেই যেন সে বাসে ওঠে। ফাঁকা বাসে উঠে যেন বসে না থাকে। স্কুলবাস ছেড়ে গেলে বা না থাকলে স্কুলের অফিসে যোগাযোগ করতে বলুন সন্তানকে। আর একটি বিষয়ে শিশুকে পাঠ দেওয়াও খুব জরুরি। স্কুলে ঝগড়া বা মারপিট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ছোটখাটো মারপিট দিয়ে শুরু হলেও তা বড় আকার নিতে বেশি সময় লাগে না। বিশেষত সকলের শারীরিক ক্ষমতা সমান নয়। সে ক্ষেত্রে যার ক্ষমতা বেশি, তার মারের জোরও বেশি। কারও নখের আঁচড় বা দাঁত বসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্কুলে কোনও বন্ধুর সঙ্গে মারপিট বা ঝগড়া বেশি হলে সন্তানকেই বলুন, সে বিষয়ে ক্লাস টিচার বা কোনও শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলতে। একটু বড় হলে অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যাতায়াত করে। তবে যে ভাবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সিগনাল দেখা ও জ়েব্রা ক্রসিং সম্পর্কে তাদের আগে থেকে সচেতন করতে হবে। স্কুল ছুটির আগে নিজের পেন, পেনসিল, টিফিন বক্স, বই, খাতা সব গুছিয়ে যেন সে ব্যাগে ভরে। তার জন্য স্কুল যাওয়ার সময়েও সন্তানের ব্যাগ তাকেই গোছাতে দিন।

Advertisement

জরুির কথা

কোনও বন্ধুকে মারা বা তার জিনিস নিয়ে বাড়ি চলে আসা ইত্যাদি ভুল যদি আপনার সন্তান করে থাকে, অভিভাবক হিসেবে তা নিজে থেকে স্কুলে জানান। স্কুল থেকে সন্তানের নামে কোনও নালিশ শুনলে তা এড়িয়ে যাবেন না। সন্তানের সঙ্গে কথা বলে সে কেন এমন কাজ করেছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন।

হাত ধরা থাকুক

রাস্তাঘাটে, মেলায় বা ব্যস্ত প্ল্যাটফর্মে মা-বাবার হাতছুট হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে সন্তানের। তাই সে ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা সন্তানকে শিখিয়ে রাখুন।

প্রথমত, যেখানে মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলবে, ঠিক সেই জায়গায় যেন সে দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে যেন অন্য কোথাও না যায়। সেই জায়গায় নিশ্চয়ই তাঁরা খোঁজ করতে আসবেন।

অনেকক্ষণ পর্যন্ত মা-বাবাকে দেখতে না পেলে স্থানীয় পুলিশ বা বড় কোনও দোকান বা মলের কাউন্টারে গিয়ে মা-বাবার ফোন নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলার কথা শিখিয়ে দিতে হবে।

বাচ্চার পকেটে বা স্কুলব্যাগে সব সময়ে মা-বাবার নাম, ফোন নাম্বার ও ঠিকানা দিয়ে রাখুন। এতে সে হারিয়ে গেলেও সেই কাগজের মাধ্যমে আপনাদের খুঁজে বার করা সহজ হবে। পাশাপাশি, মা-বাবার ফোন নাম্বার, ঠিকানা সন্তানকে অবশ্যই মুখস্থ করিয়ে রাখুন।

বিভিন্ন শিশুর ম্যাচিয়োরিটি আসে ভিন্ন বয়সে। সন্তান নিজের দায়িত্ব নিতে কবে থেকে সক্ষম হবে, তা সবচেয়ে ভাল বুঝবেন আপনিই। তার আগে পর্যন্ত সন্তানের উপরে নজর রাখা জরুরি।

(মডেল: হিন্দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঐশী ঘোষ; ছবি: অমিত দাস)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement