coconut milk

চিনি খেতে ভালবাসেন? কী ক্ষতি করছেন জানেন?

অতিরিক্ত চিনির ফল জানেন? জানলে আজই ছাড়বেন চিনি।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ১৮:৩৪
Share:

সুস্থ থাকতে চিনিতে দাঁড়ি টানুন। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

নুন বেশি খেলে রক্তচাপ বাড়ে বলে জানা ছিল, কিন্তু চিনিও যে এই একই কাজের কাজি তা জানা গেল সম্প্রতি৷ জানা গেল, বেশি চিনি খাওয়ার সঙ্গে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ার সম্পর্ক আছে৷ আবার শরীরে যে ধরনের প্রদাহ হলে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর মধ্যে চর্বি জমে ইস্কিমিক হৃদরোগের সূত্রপাত হয়, তা ঘটাতেও অনুঘটকের কাজ করে চিনি৷ সবে মিলে, বেশি চিনি খেলে, সে আপনার ওজন যতই স্বাভাবিক থাকুক না কেন, হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা খুব প্রবল, যদিও কী ভাবে ঠিক ঘটনাটা ঘটে সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও নিঃসন্দেহ নন৷

Advertisement

শুধু যে খাবারে চিনি মেশালে বিপদ হয় এমন নয়, প্রক্রিয়াজাত খাবারও সমান বিপজ্জনক৷ কারণ তাতে অ্যাডেড সুগার থাকে, তা সে ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল হোক কি পাউরুটি, প্যাকেটের ফলের রস হোক কি বিয়ার, সস, কেচাপ, কুকিস, ক্যান্ডি, মেয়োনিজ ও অন্যান্য স্যালাড ড্রেসিং, ঠান্ডা পানীয়৷

হিসেব বলছে, একটি ১২ আউন্সের ঠান্ডা পানীয়তে থাকে ৯ চামচের মতো চিনি৷ একটা বড় সিনামন রোলে থাকে ১৩ চামচ৷ এক স্কুপ চকলেট আইসক্রীমে ৫ চামচ৷ এর সঙ্গে চা–কফিতে বা রান্নায় চিনি মেশালে তো হয়েই গেল৷ অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে হৃদরোগের পাশাপাশি, ওবেসিটি, দাঁতের ক্ষয়, ডায়াবিটিস, এমনকি কিছু কিছু ক্যান্সারের প্রকোপও বাড়ে৷

Advertisement

আরও পড়ুন: ৫টি সবজি যা রান্না করলে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়

দৈনিক কতটা বিপদসীমার নীচে

হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’-র নির্দেশ অনুযায়ী, পুরুষদের দিনে ৯ চামচ ও মহিলাদের ৬ চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়৷ মার্কিন সরকারের ‘ডায়াটেরি গাইড লাইন’-কে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরলে দিনে যত ক্যালোরি আমরা খাই, তার ১০–১৫ শতাংশের কম আসা উচিত মিষ্টি থেকে৷ অর্থাৎ সারা দিনে ২০০০–২৫০০ ক্যালোরি খেলে ২০০–৩০০ ক্যালোরির বেশি কোনও ভাবেই আসা উচিত নয় মিষ্টি থেকে৷’

প্রক্রিয়াজাত খাবারও এড়ান চিনির জন্য। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন এই মাপ খুব কম মানুষই মানেন৷ ১০–১৫ শতাংশের হিসাব তো বজায় থাকেই না, অনেক সময় তা ২৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হৃদরোগের শঙ্কা বাড়ে তিন গুণ৷ আর যাঁরা ১৫ শতাংশের বেশি চিনি খান অথবা ২০০০ ক্যালোরির খাবারের মধ্যে দু’–ক্যান সফট ড্রিঙ্কের হিসেব থাকে, তাঁদের হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে ২০ শতাংশ৷ অতএব সাবধান৷

সরাসরি চিনি বা চিনিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বন্ধ করুন এখনই৷ নিতান্ত করতে না পারলে খান প্রাকৃতিক চিনি৷ ক্যালোরি কিছুটা বেশি এলেও, তার সঙ্গে আসবে অনেক পুষ্টিও৷ চিনির মতো নির্গুণ ক্যালোরিতে শরীর ভরিয়ে অপকারের পাল্লা ভারী হবে না৷

আরও পড়ুন: ম্যাক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস কী? কেনই বা সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ

তা হলে বিকল্প কী

চিনির বদলে খাবারে মেশান আখের গুড়, খেজুর গুড় বা ঝোলা গুড় কিংবা তাল পাটালি৷ ভিটামিন বি-৬, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম পাবে শরীর৷ গুড় ভাল না লাগলে এক–আধ সময় আখের রস খেতে পারেন৷ ভিটামিন বি, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজের জোগান পাবেন৷ নারকেলের দুধ ফুটিয়ে শুকিয়ে নিলে নীচে পড়ে থাকে নারকেল চিনি৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে অসাধারণ৷ সঙ্গে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদিও এতে আছে পর্যাপ্ত৷ এর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স কম, অর্থাৎ রক্তে সুগার চট করে বাড়তে পারে না৷ কাজেই ডায়াবিটিকরাও খেতে পারেন৷ দুপুরে বা রাত্রে খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে, খান খেজুর৷ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ পাবেন প্রচুর৷ কিসমিস বা অন্য শুকনো ফলও খেতে পারেন৷ খেতে পারেন বিভিন্ন টাটকা ফল৷ সাধারণ চিনির বদলে খেজুরের চিনি দিয়ে কেক বা পুডিং বানান৷ খেজুর বা তালের রস জ্বাল দিয়ে বানানো সিরাপও ব্যবহার করা যায়৷ পুডিং বা কাস্টার্ডে চিনির বদলে মেশান বিভিন্ন ফল৷ গ্রিন টি–তে মেশান টাটকা মধু৷ চা–কফিতে ম্যাপ্ল সিরাপ৷ ক্যালোরি চিনির মতো অত বেশি নয়৷ উপরি পাওয়া অ্যান্টি অক্সিডেন্টের গুণাগুণ৷ কৃত্রিম চিনি বা অ্যাসপারটেম জাতীয় জিনিস ভুলেও খাবেন না৷ মিষ্টি না খেয়ে থাকতে না পারলে বরং মাঝেমধ্যে এক–আধ চামচ চিনিই খাবেন৷ না হলে বিপদ আরও বাড়বে৷ ডায়াবিটিকরাও এ সব খাওয়ার আগে দু’বার ভাববেন৷

নারকেলের দুধ ফুটিয়ে শুকিয়ে নিলে নীচে পড়ে থাকে নারকেল চিনি৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে অসাধারণ৷ ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

কৃত্রিম চিনির বিপদ

সব সময় যে জেনে খান তা নয়৷ কার্বোনেটেড নরম পানীয়, চুষে খাওয়া যায় এমন ভিটামিন বড়ি, সুগার ফ্রি কাশির ওষুধ, ইয়োগার্ট ইত্যাদিতে অ্যাসপারটেম জাতীয় সুগার সাবস্টিটিউট মেশানো থাকে৷ নিয়মিত খেলে হৃদস্পন্দন পাল্টে যেতে পারে৷ ওজন কমার আশায় চিনির বদলে খেতে শুরু করলে যে ওজন কমবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই৷ বিভিন্ন গবেষণা থেকে বরং উল্টোটাই প্রমাণিত হয়েছে৷ তার পাশাপাশি আরও যে যে বিপদ হতে পারে, তার তালিকা অনেক লম্বা৷ যেমন:

মাইগ্রেন, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, গা–বমি ও বমি, অনিদ্রা ও ঘুমের সমস্যা, পেট ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন সন্ধিতে ব্যথা, ডিপ্রেশন,

ব্রেন ক্যান্সার৷

এক নজরে

বেশি নুন খেলে যা ক্ষতি, বেশি চিনি খেলে ক্ষতি তার চেয়ে ঢের বেশি৷ চিনির উপস্থিতিতে নুনের ক্ষতি করার ক্ষমতা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ সিগারেটের চেয়েও চিনি বেশি ক্ষতিকর৷ লো–ফ্যাট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ব্রাত্য হওয়ার অন্যতম কারণ, অতিরিক্ত চিনি৷ চিনির আসক্তি যত তাড়াতাড়ি কাটিয়ে ওঠা যায়, ততই মঙ্গল৷ প্রাকৃতিক চিনি তুলনায় ভাল হলেও মাত্রা না রাখতে পারলে তাতেও বিপদ ৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement