মাগ্গিগণ্ডার বাজার। বেতন যতই বাড়ুক, সংসার, শখ-আহ্লাদ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ সামলেও প্রতি মাসে একটা মোটা টাকা সরিয়ে রাখতে হয় হঠাৎ বিপদআপদের জন্য। এর মধ্যে বেশির ভাগটাই রাখা হয় স্বাস্থ্যখাতে। সাধারণ অসুখেই ডাক্তার, ওষুধ, পথ্য মিলিয়েদেদার খরচ। এ বার যদি তার সঙ্গে যোগ হয় হাসপাতালের খরচ, তা হলে তো আর কথাই নেই!
সরকারি হাসপাতালে উন্নত মানের চিকিৎসক ও পরিষেবা মেলে। আজকাল হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতাও উন্নত হয়ছে। তাই যদি ভর্তির সুযোগ পান ও সিট মেলে তবে অসুখবিসুখে সরকারি হাসপাতালেযেতেই পারেন। এতে চিকিৎসার ব্যয়ভার অনেকটাই লাঘব হয়।
যে কোনও অসুখেই চিকিৎসার খরচ কত হতে পারে না জানতে একটু সার্চ ইঞ্জিনগুলোর দ্বারস্থ হোন। নিজে না জানলেও, যিনি কম্পিউটার জানেন তাঁর সাহায্য নিন। দেশের বা শহরের অন্যান্য প্রান্তে ওই নির্দিষ্ট অসুখের চিকিৎসার কেমন খরচ, তা তুলনা করে তবেই রোগীকে ভর্তি করুন বা আপৎকালীন অবস্থা কাটলে তাঁকে স্থানান্তরিত করুন।
কোনও ল্যাব থেকে পরীক্ষা করানোর আগেও এক বার দেখে নিন ওই পরীক্ষার জন্য ঠিকঠাক খরচ কত হতে পারে। এতে ঠকে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। তা ছাড়া অনেক ল্যাবই নির্দিষ্ট খরচের পর কিছু অতিরিক্ত মূল্য চাপায়। পরীক্ষা করানোর আগে তাই যাচাই করে নিন। যত্নে রাখুন সব পরীক্ষার রিপোর্ট, যাতে বার বার পরীক্ষা করানোর বদলে ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারেন তা।
ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে অনুরোধ করুন চিকিৎসককে। বর্তমানে সরকারি সব হাসপাতালেই জেনেরিক নাম লেখার নিয়ম জারি হয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রেও এই নিয়ম না মানার কোনও কারণ নেই। একই গ্রুপের ওষুধ বিভিন্ন সংস্থা নানা দামে বিক্রি করে। অথচ একই গ্রুপের হওয়ায় এদের কার্যকারিতা একই। তাই অকারণে দামী ওষুধের ব্যয় বইবেন কেন?
কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে বিভিন্ন সাধারণ টেস্টের খরচের একটি তালিকা প্রতি বছরই আপডেট করা হয়। তাঁদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নিন ১৭০০টি টেস্টের মূল্য তালিকা। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে এই মূল্য মেনেই পরীক্ষা করা হয়। দরকারে পরীক্ষা করাতে পারেন সে সব জায়গা থেকেও।
আজকাল বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাধারণ কিছু পরীক্ষার জন্য নানা প্যাকেজ (হোল বডি চেক আপ প্যাকেজ) তৈরি করেছে। সে ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করানোর খরচ কমে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলির প্যাকেজ বেছে নিলে পকেটে চাপ পড়বে না। সিটি, এমআরআই বা স্ক্যানের সময়ও দেখে নিন এমন কোনও প্যাকেজ বাছার সম্ভাবনা আছে কি না।
অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশ্বস্ত চিকিৎসককে দেখানোর পরেও উন্নত মানের বিশেষজ্ঞ কয়েক জনের সঙ্গে আলোচনা করে নিন। এতে অসুখের কোনও বিকল্প কোনও চিকিৎসা আছে কি না যেমন জানা যায় তেমনই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও সমমানের অথচ কম খরচের কোনও জায়গা রয়েছে কি না, তা-ও জানতে পারবেন।
‘‘কোনও ছাড় পেতে পারি কি?’’ মাত্র পাঁচটা শব্দ। এতেও কিন্তু অনেক সময় কাজ হয়। নির্দিষ্ট নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালে অনেক সময় রোগীর চিকিৎসার বিল ও পারিবারিক রোজগারের কথা জেনে এমন ছাড়ের নানা ব্যবস্থা থাকে। সংস্থার পলিসি অনুসারেও ১০-১৫ শতাংশ ছাড়ের সংস্থান অনেক সময় থাকে। তাই ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে আবেদন করতেই পারেন।
আজকাল সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিসেই স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা থাকে। সরকারি নানা প্রকল্পেও এমন সুযোগ পান সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকরা। সে সব সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা করান। তেমন না থাকলে নিজেই উদ্যোগী হোন। প্রতি মাসে অল্প কিছু কিছু করে সঞ্চয় করে বাৎসরিক লগ্নি করুন স্বাস্থ্যবিমায়। বিপদেআপদে কাজে আসবে। চিকিৎসার ব্যয়ভারও অনেকটা কমাবে।
ক্যানসার ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তাই এই দুই অসুখের জন্য আলাদা করেও স্বাস্থ্যবিমা করানো যায়। খোঁজখবর করে রাখতে পারেন তা-ও।
সরকারি হাসপাতালে উন্নত মানের চিকিৎসক ও পরিষেবা মেলে। আজকাল হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতাও উন্নত হয়ছে। তাই যদি ভর্তির সুযোগ পান ও সিট মেলে তবে অসুখবিসুখে সরকারি হাসপাতালেযেতেই পারেন। এতে চিকিৎসার ব্যয়ভার অনেকটাই লাঘব হয়।