একা খেলেই ঝরবে মেদ, বলছে নতুন গবেষণা। ছবি: আইস্টক।
দল বেঁধে খাওয়ায় যতই আনন্দ থাক, একলসেরে হয়ে নিজের খাবারটুকু শেষ করলেই রাশ টানা যাবে শরীরের ওজনে। আমেরিকার গবেষকরা জানিয়েছেন রোগা হওয়ার এই নতুন নিদান। সম্প্রতি ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রেশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকরা ওজন বাড়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে দলবেঁধে খাওয়াদাওয়া করাকেই ‘ভিলেন’ হিসেবে দাবি করছেন।
বিভিন্ন সময়ে একাধিক দলের উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকদের দাবি, অনেকের সঙ্গে বা চেনা মানুষজনের সঙ্গে রেস্তরাঁয় খেতে বসলে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ‘ডায়েট ল্যাপস’ বা ডায়েট ছাপিয়ে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কোনও পার্টি বা নিমন্ত্রণ বাড়িতে একা খেলে যেটুকু অনিয়ম হয়, অনেকের সঙ্গে মজা করে খেতে খেতে সেই অনিয়ম বেড়ে যায় অনেকটা!
ছোট ছোট উদাহরণের মাধ্যমে এই প্রবণতাকে ব্যাখ্যাও করেছেন আমেরিকান ফিজিওলজিস্ট জন দে কাস্ত্রো। তাঁর মতে, একা খেলে ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা অনেকটা কমে। ডায়েট চার্টকে মাথায় রেখে খাওয়াও যায়। কী রকম সেটা? কাস্ত্রোর ব্যাখ্যা: ধরা যাক, রেস্তরাঁয় একসঙ্গে খেতে গিয়েছেন। পেট ভরে গিয়েছে আপনার। তবু দলের চাপে আর শুধুই ‘চোখের খিদে’-র বশবর্তী হয়ে শেষ পাতে আর একটু ডেজার্ট চেখে ফেললেন। যে খাবার কোনও দিন খাননি তা-ও লোভে পড়ে খেয়ে ফেললেন। এ ছাড়া অনেকেই ভেবে থাকেন, একসঙ্গে খেলে খাবারের পরিমাণ ভাগ হয়ে যাওয়ার দরুন হয়তো ভাগে কম খাবারই জোটে। আদতে উল্টো ঘটনা ঘটে। অনেকে মিলে খেলে খাবারের অর্ডার করার সময় বা সকলের খাবার একসঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার সময় পরিমাণ অত হিসেব করা যায় না। এর হাত ধরে বাড়তি মেদ বাসা বাঁধার সুযোগ পেয়ে যায়।
আরও পড়ুন: সচেতন হলে সেরে যায় মনের অসুখও, বলল সভা
ডায়েট মেনে চলা কয়েক জনের খাবার অভ্যাস, পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, খাবার গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায় ৪৪ শতাংশ। ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবারের প্রবণতাও বাড়ে। অন্য আর এক সমীক্ষায় কাস্ত্রো দেখিয়েছেন, পরিবারের সঙ্গ পেলে মহিলারাও বেশি খাবার খেয়ে ফেলেন।
শুধু তাঁরাই নন, এই ব্যাখ্যায় সহমত প্রকাশ করেছে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত আর এক গবেষণাপত্রও। সেখানে ইংরেজ গবেষকরা দাবি করেছেন, সঙ্গী কোনও ভাবে মোটা হয়ে গেলে ও বেশি খাওয়ার অভ্যাস আয়ত্তে আনলে, তাঁর সঙ্গে খেতে বসলে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়ে যায় প্রায় ১৭১ শতাংশ। ডায়েটেশিয়ান অ্যাইসলিং পিগট এই গবেষকদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর মতে, ‘‘একসঙ্গে খেতে বসলে আমরা সাধারণত আমাদের খাওয়ার আনন্দে এতটাই মশগুল হয়ে যাই যে শরীরের কতটুকু প্রয়োজন আর কতটা অতিরিক্ত তা ভুলতে বসি।’’
আরও পড়ুন: সংক্রামক করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্নগুলির উত্তর জানেন কি? নইলে এখনই সাবধান হোন!
তাঁর এই মতকে মান্যতা দিচ্ছেন কলকাতার ডায়েটেশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরীও। তাঁর মতে, ‘‘একসঙ্গে খেলে যে যে কারণগুলোয় বেশি খাওয়া হয়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম নানা রকম খাবারের স্বাদ নেওয়া, অনেকটা খাবার অর্ডার করে ফেলা বা নষ্ট হওয়ার ভয়ে খেয়ে ফেলা। ফলে একা খেলে যে খাবারের মাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে তা অবশ্যই ঠিক।’’
তাই কেবল ডায়েট, শরীরচর্চাই নয় রোগা থাকতে এ বার একা খাওয়ার অভ্যাস পর্ত করুন! বন্ধু বা সহকর্মীরা রেস্তরাঁয় যেতে বললে কি তবে এ বার ‘না’ বলার দিন চলে এল?