— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, গা গরম... আবহাওয়া বদলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ায় এই ধরনের উপসর্গে ভুগছেন এখন আট থেকে আশি সকলেই। চার দিকে ডেঙ্গি, ইনফ্লুয়েঞ্জার দাপট বাড়ছে। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “মূলত এ সময়ে ভাইরাল জ্বরের প্রবণতা বেশি। বাড়ছে অ্যাডিনো, রাইনো, রেসপিরেটরি সিনসেশিয়াল ইত্যাদি ভাইরাসের দাপট।”
কোন কোন ভাইরাসের দাপট বাড়ছে?
ডা. মণ্ডল বলছেন, এখন ভাইরাসের দাপটে আপার রেসপিরেটরি পার্ট অর্থাৎ নাক, গলা, টনসিল, ফুসফুসের উপরের অংশ ইত্যাদি আক্রান্ত হচ্ছে। লোয়ার রেসপিরেটরি পার্ট মূলত ব্যাক্টিরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “গত সপ্তাহ দু’-তিনেক ধরে বাচ্চাদের মধ্যে জ্বরও বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা থাকছে ১০২-১০৩ ডিগ্রি। ওষুধ খাওয়ালেও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছে না, বরং খানিক পর ফিরে আসছে।” সঙ্গে ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, টনসিল ফুলে যাওয়া, গলায় ইনফেকশন, ঢোঁক গিলতে না পারা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, দুর্বলতার মতো সমস্যাও থাকছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় অধিকাংশ সময়েই ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনোভাইরাস ইত্যাদির দাপট ধরা পড়ছে। এ ছাড়াও বাচ্চাদের মধ্যে হ্যান্ড-ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজ়িজ়ও বাড়ছে।
তবে ডা. রায়চৌধুরী বলছেন, ভয়ের বিশেষ কারণ নেই। ঠিক চিকিৎসায় সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠছে বাচ্চারা। তবে সুস্থ হয়ে উঠলেও কিছু দিন এ সময়ে বাচ্চাদের স্কুল বা খেলার মাঠে না পাঠানোই ভাল। সে ক্ষেত্রে অন্য বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সম্ভব হলে বাচ্চাদের জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
বাড়ছে কোভিড
কোভিড বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে আবার। প্রায় রোজই এখন বেশ কিছু সংখ্যক করোনাভাইরাস পরীক্ষার রেজ়াল্ট পজ়িটিভ আসছে। তবে চিকিৎসকদের মতে, করোনার উপসর্গ আগের মতো তেমন জোরালো নয় এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে না। সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে এর তীব্রতা সামান্য বেশি। কখনও কখনও সামান্য শ্বাসকষ্ট থাকছে রোগীর। যে কোনও সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও যেমন স্বাদ, গন্ধ কমে যায়, করোনার ক্ষেত্রেও এখন তেমনই হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অ্যান্টিভাইরালও দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। বরং সাধারণ উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসাতেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছেন।
নজরে কলেরা
ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই অল্পস্বল্প কলেরা দেখা দিচ্ছে। কলেরার ক্ষেত্রে মূল উপসর্গ ডিহাইড্রেশন, জ্বর এবং গুরুতর ডায়রিয়া। এ ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময়ে তা জলের মতো হবে। কলেরার উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি নয়, বাড়িতে থেকেও চিকিৎসা হতে পারে। সাধারণত খাবার থেকে ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা অধিকাংশ সময়েই অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার পরামর্শ দেন না। তবে কলেরা হলে তৎক্ষণাৎ অ্যান্টিবায়োটিক চালু করা হয়।
চিকিৎসা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন জ্বর-সর্দি-কাশিতে তেমন ভয়ের কিছু নেই। বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা করানোরও দরকার পড়ে না। সাধারণ প্যারাসিটামলেই জ্বর কমে। সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং যথেষ্ট পরিমাণ জল খাওয়া জরুরি। প্রয়োজনে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “কোভিডে এখন ভয়ের কিছু না থাকলেও আইসোলেশনে থাকা জরুরি। একের থেকে অন্যের যাতে করোনা না ছড়ায়, সে দিকে নজর রাখা দরকার।” কলেরার ক্ষেত্রেও ডায়রিয়া থেকে যাতে শরীর ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যায়, সে দিকে নজর রাখুন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, জ্বরে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, টাইফয়েড পরীক্ষা আগে করানো হয়। বাকি অন্যান্য ভাইরাসের প্রাথমিক চিকিৎসা একই ধরনের। তাই অতিরিক্ত নজর দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবে সাধারণ উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধে সমস্যা না কমলে বা ফিরে ফিরে এলে রোগী কোন ভাইরাসে আক্রান্ত, তা পরীক্ষা করে জেনে নিন।
মডেল: সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়,সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, অলিভিয়া সরকার, দেবদীপ চট্টোপাধ্যায়;
মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত;
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল, অমিত দাস