ওজন কমানোর সহজ উপায়।—ফাইল চিত্র
করোনার কারণে বেড়েছে বাড়ি থেকে কাজের পরিমাণ। কমেছে হাঁটাচলা, দৌড়ঝাঁপ। ফলে সব বয়সীদেরই অল্পবিস্তর ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এটা সামলানোর সহজ কিছু উপায়ও আছে।
‘‘বেহিসেবি জীবনযাপনে একটু লাগাম ধরলেই, বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলা খুব কঠিন নয়,’’ বললেন মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত। গবেষণা ও সমীক্ষায় ওজন কমাতে এক ডজন উপায়ের কথা জানা গিয়েছে। তবে কোনও অসুস্থতা বা হরমোনের তারতম্যের কারণে মেদ জমলে, তার চিকিৎসা করানো দরকার। এমনই বলছেন দেবকিশোর।
এ ক্ষেত্রে না খেয়ে থাকাটা কোনও সমাধান নয়। বরং সামগ্রিক ভাবে রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু বদল আনতে হবে। চাই পর্যাপ্ত ঘুম। রাত জাগলে ওজনে বাড়বে। বলছেন ইন্টারন্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ পুষ্পিতা মণ্ডল।
বাঙালিদের ক্ষেত্রে মেদের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত ময়দা ও নুন-চিনি যুক্ত ভাজা খাবার খাওয়া। ভারতের এ রাজ্যে কেক, পিৎজা, নুডলস, রোল এমনকি রুটি-লুচিতেও ময়দা ব্যবহার করা হয়। এটা মেদ বাড়িয়ে দেয়। বলছেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ।
কোন কোন নিয়ম মেনে চলবেন, সে বিষয়ে তিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:
স্রেফ জলপান করেই বাড়তি ওজন কমানো সম্ভব। খাবার খাওয়াক আধ ঘণ্টা আগে আধ লিটার জল পান করলে (ক্রনিক কিডনির অসুখ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা না থাকলে) মেটাবোলিজিমের হার প্রায় ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে খাবার খাওয়ার পরিমাণও কিছুটা কমে। এ ভাবে ৪০ শতাংশ ওজন কমাতে পারেন। সকালে রুটি, পাউরুটি, চিঁড়ে, ওটস বা কর্নফ্লেক্সের বদলে ডিম বা যে কোনও প্রোটিন যুক্ত খাবার খান। কুসুম-সহ ডিম খেলে (ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল বা অন্যান্য সমস্যা না থাকলে) আগামী ৩৬ ঘণ্টায় ক্যালোরির চাহিদা কমে। মেদ ঝরাতে কফির বিকল্প নেই। তবে অনেকটা চিনি বা সুগার ফ্রি দেওয়া কফি পান করলে ভালর থেকে মন্দ বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ব্ল্যাক কফির ক্যাফিনে মেটাবলিজমের হার ৩ থেকে ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। ১০ থেকে ২৯ শতাংশ মেদ কমতে পারে এতে। দিনে ২ কাপ গ্রিন টি পান করুন। এর শক্তশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস বাড়তি মেদ ঝরিয়ে দেয়। তবে চিনি বা সুগার ফ্রি দেবেন না। এই সমস্যা সমাধানের আরও একটি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’। দু’টি খাবারের মাঝে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন। রাতে এই নিয়ম মেনে চলা খুব কঠিন নয়। সন্ধে ৭টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলুন। পরদিন সকাল ৮টা-৯টায় পেট পুরে ব্রেকফাস্ট করুন। সপ্তাহে ১ দিন এই নিয়ম ভাঙতে পারেন। তবে ডায়বিটিস বা পেপ্টিক আলসারের মতো সমস্যায় এই ডায়েট চলবে না। এই ডায়েট শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বলছেন দেবকিশোর গুপ্ত। রোজকার ডায়েট থেকে চিনি বাদ দিন। দিনে ২৫ গ্রাম বা ৬ চা চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। একটা ঠান্ডা পানীয়ের ক্যানে ৯ চা চামচ চিনি থাকে। রাস্তার ভাঁড়ের চা, বা রসগোল্লার চিনির পরিমাণ জানলে আঁতকে উঠতে হয়! বলছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মানস চক্রবর্তী। ময়দা, সুজি, কর্নফ্লেক্স খাবারের তালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিন। রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি খাবারের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। বলছেন ইন্দ্রাণী ঘোষ। কমিয়ে দিন ভাত, রুটি, মুড়ি, বিস্কুট, কর্নফ্লেক্স, সুজি, চিঁড়ে খাবার পরিমাণও। খিদে পেলে বাদাম, ফল, দই বা ডিম সিদ্ধ খেলে ওজন কমবে। রোজকার খাবারে থাকুক টাটকা থেঁতো করা গোলমরিচ। এতে মেটাবলিজম বাড়ে, ওজন কমে। রাতে কমপক্ষে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমান। কম হলে মেদ বাড়বে। প্রতিদিন আধ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৫ দিন এক্সারসাইজ করুন।
আরও পড়ুন: পেটের গণ্ডগোল থেকে মুক্তি দিতে পারে ‘ফডম্যাপ’ ডায়েট
আরও পড়ুন: চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন, অথচ ওজনও বাড়বে না