Corona

মশার কামড়ে কি কোভিড হতে পারে?

লকডাউনে এক দিনও বেরোননি, এমন মানুষও এখন কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন। কোথা থেকে সংক্রমণ আসছে, বোঝার কোনও উপায় নেই। 

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ১১:২৯
Share:

মশার কামড় থেকে করোনা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছবি: শাটারস্টক।

এক দিকে কোভিডের বাড়াবাড়ি, অন্য দিকে বর্ষার জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধি হয়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত। এবং মানুষের মনে নতুন ভয়— করোনাভাইরাস আবার মশার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে না তো! ভাবনার স্বপক্ষে যুক্তিও আছে যথেষ্ট। লকডাউনে এক দিনও বেরোননি, এমন মানুষও এখন কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন। কোথা থেকে সংক্রমণ আসছে, বোঝার কোনও উপায় নেই। মশায় ভর করে আসছে না তো! ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া বা ইয়েলো ফিভারের ভাইরাস যদি মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে, করোনাভাইরাসের না ছড়ানোর কী আছে!

Advertisement

কিন্তু না, ছড়াচ্ছে না, সুখবর দিলেন বিজ্ঞানীরা। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে তাঁরা জানালেন, কোভিড রেসপিরেটরি ভাইরাস, ছড়ায় হাঁচি-কাশির ড্রপলেট থেকে। যেহেতু এই ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় না, কাজেই আপাতত যতটুকু জানা গিয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায়, মশার কামড়ে কোভিড হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে ভবিষ্যতে যে হতে পারে না, তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: বাজারচলতি ইউভি ডিভাইসে আদৌ করোনা ধ্বংস সম্ভব কি?

Advertisement

ভয় থাকছে ভবিষ্যতে

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন, “অদূর ভবিষ্যতে না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে এই ভাবে সংক্রমণ হলেও হতে পারে। কারণ, পশুর শরীর থেকে একটা ভাইরাস এসে পতঙ্গের শরীরে ঢুকে পড়ল। তার পর তার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়াতে শুরু করল, এ ভাবে ব্যাপারগুলো ঘটে না। বাহকের শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের বহু সময় লাগে। ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, জাপানি এনকেফেলাইটিস রোগের ভাইরাস যেমন শত শত বছরের প্রচেষ্টায় একটু একটু করে মশার শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর রোগ ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও তাই। এত দিন জানা ছিল, ম্যালেরিয়া পরজীবীর বাহক প্লাসমোডিয়াম মশার ১০০ প্রজাতির মধ্যে মাত্র চারটি সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সম্প্রতি রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের গবেষণার থেকে জানা গিয়েছে, বহু বহু বছরের প্রচেষ্টায় আরও দুটো প্রজাতি সে ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। করোনাভাইরাসও হয়তো সে ক্ষমতা অর্জন করবে এক দিন, তবে তাতে কত বছর লাগবে, তা জানা নেই এখনও। অতএব ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি সামলাতে মশা থেকে যেমন দূরে দূরে থাকছেন, থাকুন। করোনার কারণে এখনই মশাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় মেডিক্যাল কলেজে প্লাজমা ব্যাঙ্ক, কতটা কাজ করবে এটি?​

মশাকে ভয় নয়

আমাদের চারপাশে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের উপর মশার প্রজাতি ঘুরে বেরাচ্ছে। তার মধ্যে কোনটা যে কোন রোগ ছড়ায়, তার সিকিভাগও জানা নেই এখনও। তবে এটুকু জানা আছে যে, ভাইরাস ছড়াতে এডিস ও কিউলেক্স মশার কোনও জুড়ি নেই। গবেষণার কারণে এদের মধ্যে থেকে তিনটি গোত্রের ২৭৭টি মশা বেছে নেওয়া হয়। তাদের শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকিয়ে ২৪-৪৮ ঘণ্টা রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। তাতে দেখা যায় শুধুমাত্র একটি মশার শরীরেই ভাইরাস জীবিত ছিল ২৪ ঘণ্টা। এটুকু সময়ের মধ্যে বংশবিস্তার করতে পারেনি ভাইরাস। আর বংশবিস্তার করতে না পারলে রোগ ছড়ানোর কোনও প্রশ্ন নেই।

“মশাকে ভয় না পাওয়ার আরও একটি কারণ আছে”, জানালেন চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা। “করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে রক্তে ভাইরাসের সংখ্যা খুব একটা বাড়ে না, যাকে বলে ভাইরিমিয়া। যে সামান্য পরিমাণ আসে রক্তে, তা মশাকে সংক্রমিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া মশার শরীরে ভাইরাস ঢুকলেও তাকে মশার পৌষ্টিকতন্ত্র পার হয়ে লালাগ্রন্থিতে যেতে হবে। তবেই সেই মশা যাকে কামড়াবে, তার রক্তে করোনাভাইরাস ঢুকবে। সে রকম কিছুই ঘটে না।”

আরও পড়ুন: নিজে থেকে কোভিড টেস্ট করা কতটা জরুরি? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

“আরও একটি কারণেও মশা থেকে বিপদের আশঙ্কা নেই”— জানালেন সৌতিকবাবু। “করোনাভাইরাস হল রেসপিরেটরি ভাইরাস। হাঁচি-কাশি-জোরে কথা বলা বা জোরে হাসার সময় যে থুতু-লালার কণা বেরোয়, তার মাধ্যমে ছড়ায়। রক্তের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ছড়ায় না।”

আরও খবর: কোভিড-পরবর্তী ট্রমা ও স্ট্রেস ডিজঅর্ডার সামলাতে যা করতেই হবে

তবে হ্যাঁ, কোনও করোনা রোগী যদি মশার উপর হেঁচে-কেশে দেন বা ভাইরাস-ঠাসা কফ-থুতু মশার গায়ে লাগে এবং সেই মশা শরীরে বসলে ও সেই জায়গায় হাত দিয়ে তৎক্ষণাৎ সেই হাত নাকে-মুখে লাগালে সংক্রমণ হতে পারে, যদি সংক্রমণ ঘটানোর মতো পর্যাপ্ত ভাইরাস থাকে সেখানে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় বলতে গেলে অসম্ভবই।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement