—প্রতীকী ছবি।
মাঝেমধ্যে ঝড়বৃষ্টি এসে দু’-এক দিনের জন্য কিছুটা স্বস্তি দিলেও সেই রেশ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। ফের হাজির হচ্ছে গরম। এই পরিস্থিতিতে রাস্তাঘাটে ঘুরতে হচ্ছে প্রচুর মানুষকে। আবার লোকসভা ভোটের আবহে রোদ মাথায় নিয়েই প্রচার সারছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তাপের জেরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ত্বকের যত্নের বিষয়েও প্রত্যেককে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘তীব্র গরমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ঠিক রাখতে হলে যেমন কিছু পন্থা মেনে চলতে হবে, তেমনই ত্বক ভাল রাখার জন্যও কিছু নিয়ম মানতেই হবে। না হলে অস্বস্তিকর সমস্যা শুরু হতে পারে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গরম যত বেশি হবে, ত্বকে র্যাশ বা ঘামাচি বেরোনোর সমস্যাও তত বাড়বে। কারণ, অধিকাংশ মানুষই শরীরে চেপে বসা মোটা জামাকাপড় পড়েন। যার ফলে অতিরিক্ত গরমে যে ঘাম বেরোয়, তা শরীরে বসে গিয়ে ত্বকের নানা সমস্যা তৈরি করে। সেই কারণে প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে সুতির জামাকাপড় পরায় জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ত্বকের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্রথমে বেশির ভাগ মানুষই ঘামাচি বা র্যাশকে খুব একটা আমল দেন না। ভাবেন, এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। যদিও অনেক সময়ে ওটাই ঝঞ্ঝাট তৈরি করে।’’ এসএসকেএমের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, ত্বক চিকিৎসক সুমিত সেন জানাচ্ছেন, বাড়াবাড়ি রকমের র্যাশ বা ঘামাচি থেকে সংক্রমণ হয়ে অস্বস্তিকর চুলকানি শুরু হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘‘শরীরে ঘাম বসতে দেওয়া যাবে না। তাই খুব বেশি ঘেমে গেলে ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে বার বার মুখ, গলা, ঘাড়, হাত-পা মুছে নেওয়া প্রয়োজন।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ত্বক শরীরের অতি স্পর্শকাতর অংশ। তাই যাঁদের সে ভাবে অভ্যাস নেই, তাঁরা যদি দীর্ঘক্ষণ প্রখর রোদে থাকেন, তা হলে গরমে ত্বকে ফোস্কা বা কালচে ছোপ পড়তে পারে। আর কাজের সূত্রে বা ভোটের প্রচারের জন্য বেশি গরমের মধ্যে রাস্তায় থাকতে হলে অবশ্যই শরীর ঢাকা সুতির পোশাক পরতে হবে। এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, সুতির কাপড়ের মধ্যে দিয়ে বায়ু চলাচল বেশি করে। তাই তীব্র গরমে যে ঘাম বেরোয়, তা সহজেই শুষে নেয় ওই কাপড়ের পোশাক। তিনি বলেন, ‘‘সুতির পোশাক দিয়ে বায়ু চলাচল বেশি করে, তাই শরীর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হতে পারে। আর, জামাকাপড়ের রং হালকা হতে হবে। গাঢ় রং তাপ শুষে নেওয়ায় গরম বেড়ে যায়।’’
গাঢ় রঙের পোশাক পরলে শরীরে তাপের প্রভাব বেশি মাত্রায় পড়ে বলেই মত ত্বক চিকিৎসকদের। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণের সংস্পর্শে ‘সান-ট্যানিং’ হয়, অর্থাৎ, চামড়ার রং কালচে হয়ে যায় বলে জানাচ্ছেন ত্বক চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী। তিনি আরও জানান, তাপের প্রভাবে ছোট ছোট জলবিন্দুর মতো ঘামাচি বেরোয়। আবার লাল র্যাশও দেখা দিতে পারে। কৌশিক বলেন, ‘‘ঘাম শরীরে বসে গিয়ে ত্বকে থাকা ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাতেই ঘামাচি বা র্যাশের সমস্যা তৈরি হয়।’’ গরমে অনেকেই বিভিন্ন পাউডার ব্যবহার করেন। অনেকে আবার ঘামের গন্ধ দূর করতে বিভিন্ন সুগন্ধী (বডি স্প্রে) শরীরে দেন। এই সমস্ত ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয় বলে মত ত্বক চিকিৎসকদের। কারণ, ট্যালকম পাউডার ও দেহে স্প্রে করা সুগন্ধীও ঘর্মগ্রন্থির মুখ আরও বেশি মাত্রায় বন্ধ করে দেয়। ফলে, ঘামাচি বা র্যাশের সমস্যা বেড়ে যায়।