চুমুক: তৃষ্ণা মেটাতে কারও ভরসা ঠান্ডা পানীয়ে, কারও গরম চায়ে। ধর্মতলা এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
তীব্র গরমের মধ্যে বিক্ষিপ্ত কয়েক পশলা বৃষ্টিতে ক্ষণিকের স্বস্তি মিলেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে ফের চড়া রোদ ফিরে এসেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা বাড়বে। আর এই তীব্র গরমে অনেককেই দেখা যাচ্ছে, ঠান্ডা পানীয়ে গলা ভেজাচ্ছেন রাস্তায় দাঁড়িয়েই। কেউ আবার ঘামতে ঘামতেও দোকানে দাঁড়িয়ে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিচ্ছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের অনেকেরই ধারণা, এই সবের মাধ্যমে শরীরে জলের ঘাটতি হয়তো কিছুটা মেটানো যাচ্ছে। কিন্তু আদতে ঠান্ডা পানীয় বা চা শরীরে আরও বেশি মাত্রায় জলশূন্যতা তৈরি করছে।
তীব্র গরমে শরীরে বার বার জলশূন্যতা তৈরি হতে থাকলে একটা সময়ে গিয়ে তা বড় সমস্যা তৈরি করবে বলেই সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘তীব্র গরমে রাস্তায় বেরিয়ে ঠান্ডা পানীয় দিয়ে ক্ষণিকের তেষ্টা মিটলেও, তা প্রকারান্তরে জলশূন্যতার পাশাপাশি অন্য সমস্যাও তৈরি করে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেকেই গরমে কী ভাবে শরীর ভাল রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করেন। কিন্তু দেখা যায়, তাঁরাই হয়তো ঠান্ডা পানীয় কিংবা ফলের রস কিনে খাচ্ছেন। যা আদতে ক্ষতি করতে পারে শরীরের।
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, ঠান্ডা পানীয়ের মধ্যে অতিরিক্ত সোডা ও চিনির মিশ্রণ থাকে। ওই দু’টি উপকরণই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। অন্যান্য প্যাকেটবন্দি পানীয়ের (ফলের রস বা ডাবের জল) বিক্রিও এই সময়ে বেড়ে যায়। তাতে কৃত্রিম রং ও স্বাদের রাসায়নিক উপকরণ অনেক বেশি মাত্রায় থাকায় সেগুলিও ক্ষতিকর। পুষ্টিবিদ কল্পনা চৌধুরীর কথায়, ‘‘শরীরে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করা চিনি, সোডিয়াম ও ক্যাফেইনকে সহজেই টেনে নেয় কিডনি। বেড়ে যায় প্রস্রাবের পরিমাণ। তাতে বার বার জলশূন্যতা তৈরি হয়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এর পাশাপাশি অতিরিক্ত মাত্রায় ঠান্ডা পানীয় হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ক্যানসার, ফ্যাটি লিভার, দাঁতের ক্ষয়ের কারণ। ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দিয়ে পায়ের গাঁটে ব্যথার মতো সমস্যাও তৈরি করে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘তীব্র গরমে তেষ্টা না পেলেও বার বার জল পান করতেই হবে। কিন্তু সেটা ঠান্ডা পানীয় কখনওই নয়। এতে জলশূন্যতা তৈরির পাশাপাশি শ্বাসনালির সংক্রমণের আশঙ্কাও বাড়ে। মাত্রাতিরিক্ত চা-কফিতে হজম বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পাশাপাশি শরীর থেকে জলও বেরিয়ে যায়।’’ পেটের সমস্যার নেপথ্যেও ঠান্ডা পানীয় বা চা-কফির ভূমিকা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কল্পনা জানাচ্ছেন, ঠান্ডা পানীয়ে থাকা ‘হাই ফ্রুক্টোজ় কর্ন সিরাপ’ (যা চিনির থেকে অনেক বেশি মিষ্টি)-এর জেরেও পেটের সমস্যায় ভুগতে পারেন অনেকেই।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, রাস্তার চায়ের মান নিয়ে সংশয় থাকে। তা ছাড়া, ওই চা চিনি ও দুধ মিশিয়ে বার বার ফুটিয়ে বানানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘চায়ে ক্যাফেইন ও চিনিতে ক্যালোরি থাকে, তাতে শরীরে বেশি জলের ঘাটতি তৈরি হয়। আর দুধের জন্য পেটের সমস্যাও দেখা দেয় অনেকের।’’ চিকিৎসকেরা সাবধান করছেন রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখ বা ফলের রস সম্পর্কেও। কারণ, সেগুলি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে তৈরি, তা জানা যায় না। বদলে গোটা ফল খাওয়া গেলে তরল ও ফাইবার শরীরে প্রবেশ করে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।