পান-সুপারি-দোক্তা-জর্দার মতো নেশা ডেকে আনে হৃদরোগ, ক্যানসার। ছবি: শাটারস্টক।
ছুটির দিনের দুপুরে পেট আইঢাই। খাওয়ার শেষে কি বিয়েবাড়ির চর্ব্য–চোষ্য পেটে যাওয়ার পর একটা পানের জন্য মনের ছটফটানি! কেন করে জানা নেই৷ কিন্তু করে৷ কেউ বলেন, পানের রসে নাকি হজমের সুরাহা হয়৷ সে জন্যই শরীর পান চায়৷ হতে পারে৷ আবার সুগন্ধী মশলার সৌজন্যে মাউথ ফ্রেশনারের কাজটা ঠিকই হয়ে যায়৷
এ পর্যন্ত ঠিক আছে৷ ন’মাসে ছ’মাসে খেলে পান–সুপুরি–খয়ের যাই খান না কেন, কোনও ক্ষতি নেই৷ কিন্তু নিয়মিত খেলে আছে৷ বিশেষ করে পানের সহযোগী হিসেবে যদি খয়ের, চুন আসে আর তার সঙ্গে সুপুরি এসে জোটে, আর সুপুরির সঙ্গে এসে জোটে দোক্তা বা জর্দা৷
দিন কয়েক পর পর খেলেই এক সময় নেশা ধরে যায়৷ যত সময় যায়, নেশা জাঁকিয়ে বসে৷ বিপদ বাড়ে৷ হিসেব করে দেখা গিয়েছে, শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই এই নেশার রমরমা৷ চা–কফি, সিগারেট, মদের পরেই তার স্থান৷
আরও পড়ুন: কুকুরে কামড়ালে শুধু ইঞ্জেকশনই নয়, মেনে চলতে হবে এ সবও
নেশা ও তার ফল
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সুপুরি–দোক্তা বা জর্দার মিশ্রণ শরীরে গিয়ে উদ্দীপকের কাজ করে৷ অল্প করে খেলে ক্যাফিন ও নিকোটিনের সমতূল্য উদ্দীপনা হয়৷ আর মাত্রা বেড়ে গেলে তা হয়ে যায় কোকেনের সমতূল্য৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মাত্রাছাড়া নেশা চালিয়ে গেলে হৃদস্পন্দন এলেমেলো হয়ে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া নামে জটিল হৃদরোগের সূত্রপাত হতে পারে৷ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে৷ উপরি পাওনা হিসেবে আসতে পারে উদ্বেগ ও অনিদ্রা৷
এখানেই শেষ নয়৷ পান–সুপুরি–দোক্তা–জর্দার নেশায় দিগ্বিদিক হারিয়ে গেলে ব্রেনের কিছু কাজকর্মের গতিপথ বদলে যেতে পারে৷ তার হাত ধরে মুখে বেশি থুতু তৈরি হয়, চোখে জলের পরিমাণ বাড়ে, ঘাম বেশি হয়, মল–মূত্র ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়, কথায় কথায় ডায়রিয়া ও বমি লেগে থাকতে পারে৷
এই সব কাণ্ড–কারখানার কারণেই বিজ্ঞানীরা একে ড্রাগের তকমা দিয়ে দিয়েছেন৷ অন্য ড্রাগের মতো এ থেকে ইউফোরিয়াও হয়৷ অর্থাৎ মনে পুলক জাগে, এনার্জি বাড়ে৷ বাড়ে অ্যালার্টনেস৷ না খেলে হয় উইথড্রয়াল৷ ফলে আরও বেশি করে নেশার দিকে ঝুঁকে পড়েন মানুষ৷
বিপদ আছে আরও
এত দিন জানা ছিল পান–সুপুরি–দোক্তা–জর্দা ইত্যাদির সুবাদে মুখের ভিতরের বিভিন্ন অংশে ক্যানসার হতে পারে৷ তবে যথাসময়ে ধরা পড়লে এই ক্যানসার সেরেও যায়৷ ক্যানসারের আগের স্টেজে অর্থাৎ প্রি–ক্যানসার স্টেজে ধরা পড়লে তো কথাই নেই৷ রোগ যে সারবে, তা মোটামুটি নিশ্চিত৷ কাজেই মানুষ মোটের উপর নিশ্চিত থাকতেন৷
আরও পড়ুন: হাতের উপরের অংশে জমছে দেদার মেদ? ঝরিয়ে ফেলুন এ সব উপায়ে
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার সূত্রে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই নেশার ফলে ক্যানসার যে শুধুমাত্র মুখের ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়, সুপুরির সঙ্গে দোক্তা, জর্দা অর্থাৎ যে কোনও তামাকের মিশেল পড়লে মুখ–গলা–খাদ্যনালি সর্বত্র ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ আর এরা মুখের ক্যানসারের মতো অত নিরীহ নয়৷ এদের কোনও প্রি–ক্যানসার স্টেজও হয় না৷ কাজেই ব্যাপারটাকে হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না মোটেও৷
দ্বিতীয় বিপদের নাম হৃদরোগ৷ বিভিন্ন গবেষণার সূত্রে বিজ্ঞানীরা প্রমান করে দিয়েছেন যে, হৃদরোগ ও তার রিস্ক ফ্যাক্টরের সঙ্গে এই নেশার প্রত্যক্ষ যোগ আছে৷ অধিকাংশ মানুষ সে খবর জানেন না বলে চিকিৎসা চলাকালিনও নেশা ছাড়েন না৷ ফলে চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল হয় না৷ বিপদ বাড়ে৷
সুপুরি–দোক্তা–জর্দা ও হৃদরোগ
দেদার সুপুরি–দোক্তা–জর্দা খেলে রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে৷ ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও রক্তচাপ বশে না থাকার মূলে এই নেশার হাত থাকে অনেক সময়৷ ডায়াবিটিসের প্রকোপ বাড়াতে এর ভূমিকা আছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ নিয়মিত খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়তে পারে৷ ওবেসিটি ও মেটাবলিক সিনড্রোমের (হৃদরোগ ও আরও বেশ কিছু অসুখের মূলে এর হাত থাকে) আশঙ্কা বাড়ে৷ সরাসরি ইসকিমিক হূদরোগও হতে পারে এই নেশার ফলে৷