করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে এখনও পৌঁছতে পারেনি গবেষক ও চিকিৎসা মহল।(ছবি: রয়টার্স)
চিনের উহান প্রদেশেই প্রথম ঘটে আতঙ্কের সূত্রপাত। আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। নতুন এই ভাইরাসের হানায় ত্রস্ত গোটা দুনিয়া। ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তেরোশোর বেশি মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪১ জন। রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে ফ্রান্স, তাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরেও। করোনাভাইরাসের কবল থেকে বাদ পড়েনি ইউরোপও।
এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিন, তাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে ঘুরে আসা ভারতীয় কিংবা সে সব দেশ থেকে এ দেশে আসা মানুষজনদের জন্য আরও কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওই সব দেশ থাকা আসা কারও সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকলে তাঁকে নিজের দেশে ফেরানোর চিন্তাভাবনাও করছে ভারত সরকার। আর ভারতীয়দের ক্ষেত্রে শুরু হচ্ছে রোগ প্রতিরোধের চিকিৎসা।
হঠাৎ আমদানি হওয়া এই ভাইরাস নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় চিকিৎসক মহলও। এখন প্রশ্ন একটাই, এই ভাইরাসে কি আক্রান্ত হতে পারি আমি আর আপনিও? ভারতেও কি দেখা মিলতে পারে এই মারণ ভাইরাসের।
আরও পড়ুন: ডিম খান এ সব উপায়ে, পুষ্টিগুণ তো মিলবেই, সঙ্গে আটকাবে মেদ
করোনাভাইরাসের হানায় ত্রস্ত গোটা দুনিয়া(ছবি: রয়টার্স)
ভাইরাসের উৎস
করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও গবেষকরা বুঝে উঠতে না পারলেও অনুমান করা হচ্ছে পশু-পাখির সংস্পর্শে থাকা মানুষজনই মূলত এই ভাইরাসের শিকার। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে এখনও পৌঁছতে পারেনি গবেষক ও চিকিৎসা মহল।
রোগের উপসর্গ
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এই ভাইরাসের কারণে সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকে। সাধারণত অসুখ বেড়ে নিউমোনিয়ায় পরিণত হতে পারে। সঙ্গে প্রবল তাপমাত্রা থাকে শরীরে। কারও ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হয়। সাধারণত সর্দি-কাশির এই ভাইরাস ৬ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত সহজগম্য। তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এর শিকার হতে পারেন যে কেউ।’’
আরও পড়ুন: শরীরকে সুস্থ ও তরতাজা করতে চান? ভরসা রাখুন টক দইয়ে
এই ভাইরাসের কি প্রতিষেধক আছে?
এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও পাওয়া যায়নি। নেই কোনও ভ্যাকসিন, নেই কোনও থেরাপিও। অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, সারা বিশ্ব জুড়েই প্রায়ই অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে। যখন-তখন ইচ্ছে মতো অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’। এর হাত ধরেই গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ে ভাইরাসের বিপদ।
সুপারবাগস কী?
আর এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাটের কথায়, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে ও ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে শরীর নিজের মধ্যেই সেই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে ঘন ঘন সেই ওষুধ নেওয়ার ফলে একটা সময়ের পর তা আর শরীরে কাজ করে না। শরীরে উপস্থিত ব্যাকটিরিয়া ওষুধের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। জিনগত মিউটেশনের ফলে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে সে। অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন সেই জীবাণুদেরই চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘সুপারবাগস’। আর এই সুপারবাগই জন্ম দেয় নিত্যনতুন ভাইরাসের। যার প্রকৃতি বুঝতেই সময় লেগে যায় অনেক। তাই বাগে আনা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে।
প্রতিরোধের উপায়
চিকিৎসকদের মতে, যে হেতু ভারতে এই ভাইরাসের উৎপত্তি নয়, তাই এর প্রতিরোধ করতে গেলে আপাতত ভাবে বিমানবন্দরে নজরদারি চালানোই একমাত্র উপায়। এ পদ্ধতিতেই কয়েক দশক আগে সার্স ভাইরাসের হানা ঠেকিয়ে দিয়েছিল ভারত। ভাইরাসের হানা রুখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এমন ডায়েটেও রাখতে হবে আস্থা। আপাতত সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরের থেকে বাঁচতে যে উপায়গুলি অবলম্বল করি সেই একই পদক্ষেপ করতে পারেন এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও। খাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে তবেই খান, নইলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। সঙ্কটের সময় বাড়িতে থাকাটাই শ্রেয়। বাইরে বেরোতে হলে ‘ফেস মাস্ক’ অবশ্যই পরে বেরোন।
কোন বয়সীদের উপর এই ভাইরাসের আক্রমণ বেশি
মূলত তাঁদের উপরই এর হানা মারাত্মক, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই শিশু ও বয়স্করাই এর ‘সফট টার্গেট’।