বিশ্বে অর্ধেকেরও বেশি মানসিক অসুখের সূত্রপাত ১৪ বছর বয়সে। ছবি: শাটারস্টক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু অবসাদের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। হু’র মতে, “সারা ক্ষণ মনের মধ্যে একটা দুঃখের ভাব, সাধারণত যে সমস্ত কাজ করতে আপনি ভালবাসতেন তাতেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, রোজের রুটিন মেনে চলার অক্ষমতা— এগুলি যদি দু’সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয়”, তবে আপনি অবসাদগ্রস্ত।
অবসাদ নিয়ে বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানও দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তার কয়েকটি হল—
• বিশ্ব জুড়ে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিরা যে অসুখে সবচেয়ে বেশি ভোগে, সেই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে অবসাদ।
• ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সিরা সারা বিশ্ব জুড়ে যে অসুখে সবচেয়ে বেশি ভোগে, সেই তালিকায় ১৫ নম্বরে রয়েছে অবসাদ।
• বিশ্বে অর্ধেকেরও বেশি মানসিক অসুখের সূত্রপাত ১৪ বছর বয়সে। অথচ, বেশিরভাগই নির্ণয় করা যায় না বা নির্ণয় করা গেলেও তার চিকিৎসা শুরু হয় না।
• সারা বিশ্বে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ হল আত্মহত্যা।
অভিভাবকরা অনেক সময়েই সন্তানের অবসাদের লক্ষণকে গুরুত্ব দেন না। ভেবে নেন, বাচ্চা আসলে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে মন ভাল রাখবেন? চিকিৎসকদের এ সব কথা মানতেই হবে
যে কোনও বয়সের যে কোনও মানুষ অবসাদগ্রস্ত হতে পারেন। বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় অবসাদে ভোগার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। বিশেষ করে, কোনও শারীরিক বা আবেগজনিত জোরালো আঘাত (ট্রমা) বা হেনস্থার ফলে এমন হতে পারে। কখন বা কী অবস্থায় এক জন মনস্তত্ত্ববিদের কাছে যেতেই হবে, পরামর্শ নিয়ে সঠিক রোগ চিহ্নিত করতে হবে, তারও কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন—
• ঘুমের ধরনে পরিবর্তন: বেশি ঘুমানো, খুব কম ঘুমানো, ঘুমের মধ্যেও অস্থিরতা
• খাদ্যাভ্যাসে আমূল পরিবর্তন: খুব বেশি খাওয়া, কম খাওয়া, বার বার খাওয়া
• সামাজিক ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন: রাগের সঙ্গে মারাত্মক আবেগপ্রবণতা, এক টানা কান্না, আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করা
• ক্লান্তি অনুভব করা, আশাহীনতা, অসহায়তায় ভোগা, দুশ্চিন্তায় ভোগা
• পছন্দের কাজ, হবি, খাবার, খেলা, ক্লাস, বন্ধুদের সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা
• পড়াশোনা খারাপ হতে থাকা: মনোযোগ কমা, আগের তুলনায় পড়াশোনার কাজে গতি কমে আসা, স্কুলে যেতে অনীহা
• বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা
• নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা বা নেশায় আসক্তি
• ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস শুরু করা
• আত্মহত্যার চিন্তা বা আত্মহত্যার চেষ্টা
আপনার যদি মনে হয়, এ মধ্যে যে কোনও একটা আচরণ আপনার সন্তানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। মাথায় রাখতে হবে— এর মধ্যে মাত্র এক-দুটো উপসর্গ নিয়মিত ভাবে থাকলে, বা সবকটা উপসর্গই অনিয়মিত ভাবে থাকলে তা অবসাদের লক্ষণ নাও হতে পারে। তবে রোগ আছে কি নেই তা নির্ণয়ের জন্য একজন মনস্তত্ত্ববিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ফেল’ নয়, ‘এসেনশিয়াল রিপিট’, সিবিএসই বোর্ডের সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়বে পড়ুয়া মনস্তত্ত্বে?
অনেক সময়েই কিশোর বা কিশোরীটি অবসাদে ভোগে, কিন্তু সাহায্য কী ভাবে চাইবে তা বুঝতে পারে না। ফাইল চিত্র।
মনোচিকিৎসক বা মনোবিদরা এমন সব লক্ষণ চিহ্নিত করলেও, অভিভাবকরা কিন্তু অনেক সময়েই সন্দিগ্ধ এবং বিভ্রান্ত থাকেন এটা ভেবে যে— এগুলি সত্যিসত্যিই তাঁদের সন্তানের অবসাদের লক্ষণ তো? বা এ সবের মধ্যে দিয়ে বাচ্চা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে না তো?
এটা মনে রাখতে হবে, মনোযাগ আকর্ষণকারী যে কোনও আচারব্যবহারের মধ্যে কিন্তু, সাধারণ ভাবে, সাহায্য চাওয়ার বার্তা বা সিগন্যাল থাকে। যখন আপনার বাড়ির কিশোর বা কিশোরী সন্তানটি অবসাদে ভোগে বা কোনও সমস্যায় পড়ে, কিন্তু সাহায্য কী ভাবে চাইবে তা বুঝতে পারে না, তারা এমন সব আচরণ করে ফেলতে পারে যেগুলিকে ‘দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। যদি চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই ধরনের ব্যবহার চলতেই থাকে, যদি তার রোজের জীবনযাত্রায় রুটিনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তবে একজন কাউন্সেলর বা মনোবিদের কাছে চলে যাওয়াটাই সঠিক কাজ।
কোনও ছেলেমেয়ের অবসাদ রয়েছে বলে মনোবিদ সন্দেহ করলে, বাবা-মা’র মনে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নগুলি ঘোরাফেরা করে, তার একটি হল— ‘অবসাদের কি আদৌ কোনও চিকিৎসা রয়েছে’?
এক কথায় উত্তর হল— হ্যাঁ, অবসাদের চিকিৎসা রয়েছে। একই ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় পীড়িত প্রত্যেকটি মানুষ সাড়া দেন আলাদা আলাদা ভাবে এবং একেবারেই নিজের মতো করে। অবসাদের ক্ষেত্রেও তাই। কারও ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় হয়ত বেশি সময় লাগে সারতে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মিত থেরাপি এবং ওষুধে (কখনও দু’টি একসঙ্গে, কখনও যে কোনও একটাতেই) সেরে যায়। ওষুধের কথা বললে অনেক অভিভাবকেরই মনে হয়, ওষুধ আদৌ জরুরি কি না। ‘হ্যাঁ’ বললে প্রশ্ন ওঠে, এতে কি অভ্যাসে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না! ডায়াবিটিস বা হাঁপানির মতো অসুখের ক্ষেত্রে যদি কোনও মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে ওষুধ খান, বিশেষ করে কম বয়সি প্রাপ্তবয়স্করাও, তা হলে সন্তানের মন ভাল রাখতে এবং জীবনযাপনে সাহায্য করতে পারে যে ওষুধ, তা এড়িয়ে চলা হবে কেন? প্রতিটি মানুষ ওষুধের ক্ষেত্রে পৃথক ভাবে সাড়া দেন, এবং একজন দক্ষ মনোচিকিৎসক কোন রোগীর ক্ষেত্রে সেরা ফলাফল কী ভাবে হবে তা বিচার করে ওষুধের সঠিক ডোজ ঠিক করে দেন।
আরও পড়ুন: : মানসিক চাপ কমাতে মদ্যপান? বাড়ছে কোভিডের ঝুঁকি
১০ থেকে ১৪ বছর বয়সিরা বিশ্ব জুড়ে যে সব অসুখে সবচেয়ে বেশি ভোগে, সেই তালিকায় ১৫ নম্বরে রয়েছে অবসাদ। ফাইল চিত্র।
আর একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই— সন্তানের মধ্যে অবসাদ যাতে বাসা না বাঁধে, সে জন্য এক জন অভিভাবক হিসেবে আমি কী করতে পারি?
নিশ্চিত ভাবে কখনওই বলা যায় না যে কোনও মানুষ কখনওই অবসাদে ভুগবেন না। অবসাদ রোখার অন্যতম পন্থা হল বাড়িতে চিন্তামুক্ত একটা খোলামেলা পরিবেশ গড়ে তোলা। এমন একটা পৃথিবীতে আমাদের বাস, যা সব সময় বদলে বদলে যাচ্ছে, প্রযুক্তিই শাসন করছে এই বিশ্বকে। সে ক্ষেত্রে একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদের বুঝতে এবং মানতে হবে— এমন বেশ কিছু জিনিস আজকের কিশোর মনকে প্রভাবিত করছে, চাপে ফেলছে, যা আমাদের সময় ছিল না। তাই খোলা মনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে সন্তানের সঙ্গে, যাতে যে কোনও ধরনের বিষয় নিয়ে সন্তান আলোচনা করতে পারে বাবা-মায়ের সঙ্গে।
এখানে আর কয়েকটা কথা গুরুত্বপূর্ণ— এক) উত্তর দিতে গিয়ে আপনাকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে, এমন প্রশ্ন বাচ্চাদের দিক থেকে এলে তাকে বকাঝকা করবেন না। দুই) কোনও বাচ্চার সঠিক প্রতিভা বিকশিত করতে অনেক সময়ই সত্যিকারের উৎসাহ প্রয়োজন হয়। পড়াশোনা, খেলা, সংস্কৃতি, হবি এগুলির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিতে হবে সন্তানকে। তিন) আপনি নিজে বিজ্ঞানে ১০০ শতাংশ পেয়েছেন, ক্রিকেট ভালবাসতেন, বেহালা বাজাতেন বিস্ময় প্রতিভার মতই। কিন্তু আপনার সন্তান যে একই পথ অনুসরণ করবে এমনটা নয়। চার) সন্তানের যে বন্ধুদের আপনি পছন্দ করেন না, তাদের বাছবিচার করা ঠিক নয়। খুব বিপজ্জনক বা গুরুতর হলে তবেই পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সময় হৃদয়ের দরজা খোলা রাখার মানসিকতা নিয়ে চলতে হবে। আর এতেই আপনি আপনার বাচ্চার কিছু কিছু মনের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারবেন।
যদি সন্দেহ হয়, আপনার সন্তানের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিন্তু সে খোলাখুলি তা বলতে পারছে না, তবে আপনি নিজে শান্ত ভাবে এবং গুছিয়ে তার সঙ্গে কথা বলুন। বলতে হবে যে, আপনার মনে হচ্ছে, খুব সম্ভবত তারা মানসিক চাপে রয়েছে কিংবা কোনও কিছু নিয়ে তাদের মন খারাপ, বলতে চাইলে আপনি তা শোনা জন্য তৈরি বা আগ্রহী। যদি সঙ্গে সঙ্গে সে কিছু বলতে না চায়, তবে অতিসক্রিয় হয়ে পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সন্তানকে বলতে হবে, তাদের আপনি ‘স্পেস’ দিতে পারলে খুশি হবেন এবং যখন তারা চাইবে, তখনই যেন কথা বলে। পরিস্থিতি যাই হোক, আপনি যে সবসময় পাশে আছেন, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এটা বেশ কয়েক বার পরখ করে দেখুন, আপনার বাচ্চা কথা বলবেই।
আমাদের বুঝতে এবং মানতে হবে— এমন বেশ কিছু জিনিস আজকের কিশোর মনকে প্রভাবিত করছে, চাপে ফেলছে, যা আমাদের সময় ছিল না। ফাইল চিত্র।
আর একটা কথা— কাঁদবেন না, ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ করবেন না, সন্তানের মনে অপরাধবোধ জাগানোর চেষ্টা করবেন না। বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী সমস্যা ভাগ নিতে ভয় পায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে। যদি আপনার কাছে সন্তান নিরাপদ বোধ করে, ভালবাসা পায়, তাঁকে কখনও তুল্যমূল্য বিচার না করা হয় যদি, তা হলে আজীবন সন্তান ও বাবা-মায়ের সুস্থ সম্পর্ক বজায় থাকবে।
উপরে যে আলোচনা করলাম, তার বাইরেও কিশোরমন আর অবসাদ নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই আসে। তেমন কিছুর কথা সংক্ষেপে নীচে বলা হল।
১) অনেক কিশোর-কিশোরীর ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিতে তৈরি হয় প্রথম সম্পর্ক, ব্রেক আপও হয় হাই স্কুলে, তা থেকেও অবসাদ আসে। একজন অভিভাবক হিসেবে কী ভাবে সাহায্য করব সন্তানকে?
যদি কান্না পেয়ে ভেঙে পড়ার একটা কাঁধ থাকে, তা হলে সাহায্য করা সম্ভব। তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক যদি আত্মহত্যার কথা বলেন, তবে তা হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। ফাইল চিত্র।
যখন আপনার সন্তান প্রাক-বয়ঃসন্ধিতে বা সবেমাত্র ডেটিং শুরু করেছে
• ডেটিং নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে হবে
• নানা রকমের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে হবে
• সম্পর্কের নানা পর্যায় নিয়ে কথা বলতে হবে
• জীবনশৈলির পাঠ দিতে পাখি কিংবা মৌমাছি নিয়ে কথাবার্তা বলতে হবে
• অনুমতির মানে কী তা তাদের বোঝাতে হবে।
যদি কোনও কিশোর বা কিশোরীর সম্পর্ক ভেঙে যায়
• কোনও রকম প্রশ্ন না তুলে, তাদের কথা শুনতে হবে।
• বুঝতে হবে এবং মানতে হবে যে, সন্তানের সত্যিসত্যিই মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে
• কোনও রকম উপদেশ নয়, বরং কিছু দিন পর এই বিষয়ে কথা বলুন। শোক সামলে ওঠার সময় দিন।
• বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করলে চিকিৎসক বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।
২) দুশ্চিন্তা হচ্ছে যে, অবসাদ থেকে আমার সন্তান ড্রাগ কিংবা মদের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। কী ভাবে সাহায্য করব?
তবে সন্তানের আচার-আচরণে পরিবর্তন দেখে যদি এমন মনে হয়
• আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন যে কী ভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। দু’জনে সব বিযয়ে একমত না হলেও, সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সময় তা এক হয়েই বলতে হবে।
• সঠিক কারণে কথা বলতে হবে। লোক কী বলছে তা ভেবে নয়, বরং তদের স্বাস্থ্যের দিকটি ভেবে আপনি চিন্তিত, কথা বলুন সে দিকটি ভেবেই।
• কথা বলার জন্য এটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, এ ভাবে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে। যাই হোক আপনি তাকে ভালবাসেন, এ কথা বোঝাতে হবে।
• এর পরে কী হতে পারে, তা নিয়ে উপদেশ দিতে শুরু করবেন না। প্রথমে বুঝতে হবে যে, আসলে কী পরিস্থিতি রয়েছে।
• সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে তবে সেটিকে হুমকি হিসেবে ব্যবহার করবেন না। পরিস্থিতি অনুযায়ী হয়ত রিহ্যাবের ব্যবস্থা করতে হবে।
• যদি সন্তানকে মদ্যপান করতে দেখেন বা মাদক সেবন করতে দেখেন বাড়িতে, সরাসরি কথা বলুন।
• প্রমাণ জড়ো করে রাখুন যদি সম্ভব হয়। ড্রয়ার, ম্যাট্রেস, ঘরের বাইরে বা ভিতরে থাকা গাছের পিছনও পরীক্ষা করে দেখুন।
আরও পড়ুন: হতে পারে ক্লাস্টার সংক্রমণ, করোনার ঝুঁকি বাড়ছে ধূমপানে
৩) অবসাদ ও আত্মহত্যা
অদৃশ্য অথচ অত্যন্ত বিপজ্জনক মানসিক সমস্যা অবসাদ, যা প্রায়শই অবহেলা করা হয় বা নজর এড়িয়ে যায়। এটা নিঃশব্দ ঘাতক। আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ। আত্মহত্যা সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন যা অভিভাবকরা করে থাকেন, সেগুলি উল্লেখ করা হল।
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষটি সবসময় সাহায্যের জন্য একটা সিগন্যাল দেবেই। ফাইল চিত্র।
আত্মহত্যা রোখা সম্ভব? আত্মহত্যার হুমকিকে কি সত্যি ধরে নিতে হবে?
সঠিক সময়ে সঠিক সাহায্য আত্মহত্যা রুখতে সক্ষম। আমাদের জীবনে যে মানুষগুলো রয়েছে, তাদের আবেগ সম্পর্কে যদি সত্যিই আমরা বুঝতে পারি, যদি সহানুভূতিশীল হওয়া যায়, যদি ভাল ভাবে শোনা যায় সমস্যাগুলো, কান্না পেয়ে ভেঙে পড়ার একটা কাঁধ থাকে, তা হলেই সাহায্য করা সম্ভব। তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক যদি আত্মহত্যার কথা বলেন, তবে তা হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। দ্রুত পরিবারের সদস্যদের তা জানাতে হবে। সংকটকালীন হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করতে হবে।
কী করে একজন অভিভাবক বুঝতে পারবেন যে তার সন্তান আত্মহত্যাপ্রবণ? এ সংক্রান্ত কোনও লক্ষণ আছে কি যা দেখে বোঝা যায়?
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষটি সবসময় সাহায্যের জন্য একটা সিগন্যাল দেবেই।
• আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ
• মৃত্যু কথা বলা কিংবা সমস্যার সমাধান হিসেবে মৃত্যুর কথা বলা
• ক্রনিক ব্যথা বা অসুখ
• কঠিন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাওয়া— যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া
• শারীরিক হেনস্থা, যৌন হেনস্থা, আবেগজনিত অভিঘাত
অবসাদে ভুগছে কিংবা আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে এমন সন্তানদের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? যদি ছেলেটি বা মেয়েটি জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা বলে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে কী করবেন অভিভাবক?
কথা বলুন। ভাল ভাবে শুনুন। দোষী সাব্যস্ত করবেন না, নিজের জীবনের কোনও রকম উদাহরণ দেবেন না। সমাধানের তালিকা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন না। শুধু পাশে থাকুন। বুঝিয়ে বলুন যে কতটা ভালবাসেন সন্তানকে। তার কতটা মূল্য রয়েছে অভিভাবকের কাছে। নিজেকে প্রকাশ করতে দিন সন্তানকে, কোনও রকম বাধা দেবেন না। কিন্তু একা করে দেবেন না সন্তানকে। যে কোনও রকম ধারালো জিনিস, বিষাক্ত কীটনাশক বা ঘর পরিষ্কারের জিনিস, ক্ষতিকারক ওষুধ সরিয়ে ফেলুন সন্তানের চোখের সামনে থেকে।
যদি আপনার সন্তান ইতিমধ্যেই থেরাপিতে থাকে, তা হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনস্তত্ত্ববিদের পরামর্শ নিন। সংকটকালীন হটলাইন নম্বর বা আপৎকালীন মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ফোন করতে পারেন। যখন আমাদের জীবনে ঘাত প্রতিঘাত আসে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে বলার চেয়েও মনে হয় কেউ বলুক, সব কিছু যে ঠিক নেই এতে কোনও অসুবিধা নেই। শুধু কথা বলার একটা মানুষ চাই। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেউ আমাদের কথা শুনুক।
(মিনু বুধিয়া একজন সাইকোথেরাপিস্ট, কাউন্সেলর এবং টেড-এক্স স্পিকার। তিনি কেয়ারিং মাইন্ডস (সুপার স্পেশালিটি মেন্টাল হেলথ ক্লিনিক), আইক্যানফ্লাই (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য প্রতিষ্ঠান)-এর প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা। ২০১৮ সালে ‘ডেথ অব আ ক্যাটারপিলার’ নামে একটি আত্মজীবনী লেখেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর মা এবং অবসাদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা রয়েছে বইটিতে)