শরীরচর্চার সময় মাস্ক নয়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: শাচারস্টক।
এক দিকে করোনার ভয়ে সকলে ত্রস্ত, অন্য দিকে আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উমপুন) সব তছনছ করে দেওয়ায় ঘোর বিপাকে বাংলা। এরই মধ্যে আরও এক শঙ্কার কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা। মাস্ক পরে শরীরচর্চা বা জগিং করলে শরীরে অক্সিজেন কমে গিয়ে বিপদে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে!
সম্প্রতি ২৬ বছরের এক চিনে তরুণ ভাল্ভ লাগানো দামি মাস্ক পরে ২.৫ মাইল দৌড়োনোর পর আচমকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত তাঁকে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আপদকালীন অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তোলা হয়। আবার চিনের একটি স্কুলে মাস্ক পরে মাঠে দৌড়োদৌড়ি করার সময় তিন জন স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়।
তা হলে কি মাস্ক পরব না?
কোভিড-১৯-এর ছোঁয়াচ আটকাতে মাস্ক পরে বাইরে যেতেই পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাইরে বেরলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তা সে বাজারহাট হোক বা অফিস যাওয়া। লকডাউন তো দীর্ঘমেয়াদী ভাবে চলবে না— সে ক্ষেত্রে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যে মাস্ক পরতেই হবে। তবে ফাঁকা জায়গায় একা ভারী কাজকর্ম বা শরীরচর্চা করার সময় মাস্ক না পরাই ভাল বলে মনে করেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক মৌলীমাধব ঘটক। তাঁর মতে, ব্যায়ামের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যায়াম করুন, তখন মাস্ক পরার দরকার নেই। ব্যায়ামের সময় মাস্ক পরলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। যাঁদের ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি আছে, হাঁপানির সমস্যা কিংবা আইএলডির মতো ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে তাঁরা ভারী কাজ বা শরীরচর্চার সময় মাস্ক না পরলেও অন্য সময় লোকজনের মাঝে থাকলেই তাঁদের মাস্ক পরতে হবে বলে পরামর্শ দিলেন তিনি। সব কাজের সময়ই সকলের মতো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তাঁদের। মৌলীমাধববাবুর মতে, শিশুদের ক্ষেত্রেও যাদের অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি বা জন্মগত হার্টের অসুখ-সহ কোনও সমস্যা আছে, তারা মাস্ক বাছার আগে চিকিৎসকরে সঙ্গে পরামর্শ করবে। পরবে সাধারণ মাস্ক।
আরও পড়ুন: এই অস্থির সময়ে যখন তখন হতে পারে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক, কী ভাবে সামলাবেন?
একাধিক লোক গাড়িতে থাকলে মাস্ক পরুন
এন-৯৫ বা টাইট মাস্ক পরে গাড়ি চালানোর সময়ও নানা সমস্যা হতে পারে। মাস্কের কারণে শরীরে এক দিকে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মস্তিষ্কে কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অ্যালার্টনেস বা ক্ষিপ্রতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার অনেক সময় মাস্ক থেকে চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে যাওয়ায় গাড়ি বা বাইক চালাতে অসুবিধে হয়। আচমকা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, জানালেন মৌলীমাধব ঘটক। তবে গাড়িতে অন্য কেউ থাকলে মাস্ক পরতে হবে। তবে তা সাধারণ মাস্ত হলেই চলবে। তবে তখন আরও সাবধানে চালাতে হবে গাড়ি। ভিড় জায়গায় গেলে বা বাজার-দোকান গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ফাঁকা রাস্তায় একা গাড়ি, সাইকেল বা মোটর সাইকেল চালানোর সময় মাস্ক না পরলেও চলে। কারণ এই অসুখের ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় এমন কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি।
ব্যায়ামের সময় মাস্ক পরে থাকলে তা ফুসফুসের উপর চাপ ফেলে। ছবি: শাটারস্টক।
সাধারণ মাস্কই যথেষ্ট
চিনের যে তরুণ মাস্ক পরে দৌড়োনোর সময় ফুসফুসের জটিল সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁর নিউমোথোরাক্স নামে এক সমস্যা হয়েছিল। ফুসফুস এবং চেস্ট ওয়ালের মাঝের জায়গায় কোনও ভাবে বাতাস ঢুকে গেলেই নিউমোথোরাক্স হয়। তবে মাস্ক পরার জন্যে নিউমোথোরাক্স হওয়াটা খুবই বিরল ঘটনা বলে মনে করেন পালমোনলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের পরিস্থিতিতে হলুদ মেশানো দুধ নেই খাদ্যতালিকায়? অজান্তেই কী কী ক্ষতি হচ্ছে জানেন!
তাঁর মতে, সুস্থ মানুষের মোট তিনটে কারণে নিউমোথোরাক্স হতে পারে। এক, কেউ যদি খুব গভীর জলে ডুব দেন। দুই, অত্যন্ত ভারী জিনিস বয়ে নিয়ে যান। তিন, ৩০- ৩৫ হাজার ফুট উপরে ওড়ার সময় যদি যথাযথ বাতাসের চাপ না থাকে। এই তিন কারণ থাকলে তবেই নিউমোথোরাক্সের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়াও ১৫ – ৩৪ বছর বয়সের স্মোকার ও মাদক সেবনকারীদের এই সমস্যার ঝুঁকি বেশি। বংশগত ভাবেও এই সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া সিস্টিক ফাইব্রোসিস, টিবি, নিউমোনিয়া, সারকয়েডোসিস, পালমোনারি ফাইব্রোসিস জাতীয় অসুখগুলো থাকলেও এই রোগের ঝুঁকি থাকে।
২৬ বছরের ওই তরুণ ভাল্ভ দেওয়া মাস্ক পরেছিল। চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন ছাড়া ভাল্ভ দেওয়া এন-৯৫ মাস্ক পরা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন অশোক সেনগুপ্ত। তবে তাঁর সন্দেহ, হয়তো ওই চিনা ব্যক্তির মাস্ক ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তাই শ্বাসের সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া বাতাস ঠিক ভাবে বেরতে পারছিল না। ফলে শ্বাসনালীতে বাড়তি চাপ পড়ে ফুসফুসে চাপ পড়ছিল। অশোকবাবুর মতে, মর্নিং ওয়াক কিংবা অন্যান্য পরিশ্রমসাধ্য কাজের সময় কোভিড-১৯ এর হাত এড়াতে সাধারণ মাস্ক পরে থাকলে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তবে যদি কারও ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকে তাঁকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।