প্রসূতির চোখ নষ্ট, ক্ষতিপূরণের নির্দেশ নার্সিংহোমকে

সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এক প্রসূতির। বছর ছয়েক আগে ঘটনাটি ঘটে উলুবেড়িয়ার এক নার্সিংহোমে। অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসক না হয়েও নার্সিংহোমের মালিক ‘ভুল’ চিকিৎসা করেন। তার জেরেই ওই প্রসূতির একটি চোখ নষ্ট হয়েছে বলে বছর চারেক আগে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁর স্বামী আব্দুল মতিন মোল্লা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০১:১৬
Share:

সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এক প্রসূতির। বছর ছয়েক আগে ঘটনাটি ঘটে উলুবেড়িয়ার এক নার্সিংহোমে। অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসক না হয়েও নার্সিংহোমের মালিক ‘ভুল’ চিকিৎসা করেন। তার জেরেই ওই প্রসূতির একটি চোখ নষ্ট হয়েছে বলে বছর চারেক আগে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁর স্বামী আব্দুল মতিন মোল্লা। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে সম্প্রতি ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জানিয়ে দিয়েছে, চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের। এর ক্ষতিপূরণ এবং মানসিক দুর্ভোগের জন্য মোট ১৩ লক্ষ টাকা প্রসূতিকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ৪৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা মেটাতে বলা হয়েছে।

Advertisement

ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সাজিদা বানু নামে ওই প্রসূতির বাড়ি হাওড়ার আলিপুরে। বিয়ের পরে স্বামী আবদুল মতিন মোল্লার কর্মসূত্রে নয়াদিল্লিতে ছিলেন পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সাজিদা। ২০০৯ সালে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় পরে হাওড়ায় শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। প্রসূতির স্বামী আবদুল মতিন জানান, ২৬ অক্টোবর রাতে প্রসববেদনা শুরু হতেই উলুবেড়িয়ায় ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় সাজিদাকে। আবদুলের কথায়, ‘‘ওই নার্সিংহোমের মালিক ফিরোজ কাজি নিজে চিকিৎসক না হয়েও আমার স্ত্রী-র চিকিৎসা করেন। স্বাভাবিক প্রসব করানোর জন্য কয়েকটি ইনজেকশনও দেন তিনি। তাতে কাজ না হওয়ায় গভীর রাতে আমাকে জানান অস্ত্রোপচার (সিজার) করতে হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, পরে অস্ত্রোপচারের জন্য যে চিকিৎসককে ডাকেন নার্সিংহোমের মালিক, তিনি আদৌ গাইনোকলজিস্ট নন। অথচ ওই রাতে তাঁকে দিয়েই সাজিদার অস্ত্রোপচার করানো হয়। আরও অভিযোগ, প্রসবের পর দিন থেকেই অস্বাভাবিক হারে রক্তক্ষরণ হতে থাকে সাজিদার। নার্সিংহোম কতৃর্পক্ষকে বিষয়টি জানালে তাঁরা ওষুধ কিনে আনতে বলেন। তা-ও দেওয়া হয়, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। দু’দিন পর থেকে শুরু হয় জ্বর, সঙ্গে মুখ, হাত-পা ফুলতে থাকে। চার বোতল রক্ত দেওয়া হয়। তাতেও অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তবু নার্সিংহোম রোগীকে ঘরেই রাখে। জানিয়ে দেয়, সব ঠিক হয়ে যাবে। আবদুলের অভিযোগ, এক সময়ে অস্ত্রোপচারের জায়গা জুড়ে ব্যথা বাড়তে থাকে। তাঁদের আবেদন সত্ত্বেও সাজিদাকে ছাড়তে রাজি হননি নার্সিংহোম কতৃর্পক্ষ। অবশেষে রিস্ক বন্ড দিয়ে অসুস্থ সাজিদাকে আরও দু’টি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান আবদুল। শারীরিক অন্যান্য উপসর্গ কমলেও ক্রমশই সাজিদার ডান চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে। পরে সল্টলেকের এক চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়ে দেন, ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি আর নেই। তা যে চিকিৎসা বিভ্রাটেই, তা-ও তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয় বলে আবদুলের দাবি।

এর পরেই পুরো ঘটনা জানিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ জানান আবদুল। চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ২২ লক্ষ টাকা দাবি করেন আবেদনে দাবি করেন তিনি। বিচার শেষে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জানিয়েছে, হাওড়ার ওই নার্সিংহোমে কোনও স্থায়ী প্রসূতি বিশেষজ্ঞ নেই। তা সত্ত্বেও প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। মূলত প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করা চিকিৎসকদের ধরে এনে অস্ত্রোপচার করানো হত। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ওই প্রসূতির চিকিৎসায় যথেষ্ট গাফিলতি ছিল নার্সিংহোমের মালিকের। এবং প্রসূতি সাজিদা বানুর শারীরিক সমস্যার জন্য তিনি দায়ী। তাই ওই প্রসূতিকে ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসা খরচ মেটাতে হবে নার্সিংহোমের মালিককে। ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লক্ষ এবং মানসিক দুর্ভোগের জন্য আরও ৩ লক্ষ মিলিয়ে মোট ১৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওই আদালত। একইসঙ্গে মামলা খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকাও মেটাতে বলা হয়েছে উলুবেড়িয়ার ওই নার্সিংহোমকে।

Advertisement

ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে শুক্রবার বলেন, ‘‘চিকিৎসার গাফিলতিতে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার এই ঘটনা ভয়ঙ্কর। ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। এ ধরনের নার্সিংহোম ব্যবসা করে কী করে, তা-ও
দেখা দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement