প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন কিছু নিয়ম মেনে। ছবি শাটারস্টক।
কোভিড ঠেকাতে সচেতন সব মানুষ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এখন দূরে দূরে। কাজের শেষে বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়া, সপ্তাহ শেষের বেড়ানো ও আড্ডার ঘরে পুরোপুরি দাঁড়ি। ছাঁদে হাঁটতে গেলেও দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ৬ ফুট, নয়তো নাকে-মুখে মাস্কের ঘেরাটোপ। যাঁদের নিকট জন অন্য রাজ্যে কিংবা অন্য দেশে, কবে যে তাঁদের সঙ্গে দেখা হবে তার কোনও ঠিক নেই।কিন্তু তা বলে কি সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে!
একটা গবেষণার কথা বলা যাক। ২০১৩ সালে ‘জার্নাল অব কমিউনিকেশন’-এ এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রায় ৩০ লক্ষ আমেরিকান স্বামী-স্ত্রী বিয়ের পর থেকেই দূরে দূরে থাকেন। এবং প্রায় ৭৫ শতাংশ কলেজ পড়ুয়ার প্রেমিক বা প্রেমিকা থাকেন বহু দূরের কোনও দেশে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ভৌগোলিক কারণে যাঁরা দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে ভালবাসা কমেনি একটুও। কারণ দূরে থেকেও তাঁরা প্রযুক্তির সাহায্যে কাছাকাছি আছেন।
একই পরিস্থিতি আমাদের দেশেও। বহু মানুষ কাজ বা পড়াশোনার কারণে পরিবার, প্রিয়জন ছেড়ে পড়ে রয়েছেন দূরে। কিন্তু তাতে তাঁদের পারস্পরিক টান বা যোগাযোগ এতটুকু কমেনি। বরং একটু মুখোমুখি হওয়ার জন্য, কথা বলার জন্য তাঁরা মুখিয়ে থাকেন। কাজেই আজ যখন ভাইরাস সবাইকে আলাদা করে দিয়েছে, প্রযুক্তির সাহায্যে মানসিক যোগাযোগ বাড়ানো যেতেই পারে। ল্যাপটপ, ট্যাব বা নিদেনপক্ষে একটা স্মার্টফোন থাকলেই হল। যার সাহায্যে মা সন্তানকে রান্না শেখাবেন, সাহস জোগাবেন। বিপর্যস্ত মানুষকে বলা যাবে দুটো ভরসার কথা। সমব্যথী হওয়া যাবে তাঁর দুঃখের। না-ই বা আগের মতো একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করা গেল! পাশাপাশি হেঁটে চলা বা বেড়ানোর আনন্দ না হয় মুলতুবিই থাকল আরও কিছু দিন, আড্ডা তো হতেই পারে দেদার!
আরও পড়ুন: আমপান উড়িয়ে নিয়ে যাবে করোনাভাইরাসকে? বিজ্ঞানীরা বলছেন...
সব হতে পারে। তবে একটু রাশ টেনে। কয়েকটি নিয়ম মেনে। কারণ বাড়াবাড়ি করলে ভালর চেয়ে মন্দ হতে পারে বেশি।
কেমন নিয়ম?
• হাতে অঢেল সময় বলে যদি ভাবেন দিন-রাত আড্ডা দেবেন, সব ব্যাপারে মতামত দেবেন তা হলে কিন্তু ভুল হবে। এ সব ব্যাপারে চলে ‘লেস ইজ মোর’-এর তত্ত্ব। অর্থাৎ যত কম কথা বলবেন, তত কম যুক্তি-তর্কের অবতারণা করবেন। অন্য জনকে বলতে দেবেন, তত ভাল হবে সম্পর্ক।
• নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। সম্পর্ক অনুযায়ী সপ্তাহে এক দিন কি দু’দিন যোগাযোগ রাখুন। ঘনিষ্ঠদের ক্ষেত্রে হয়তো রোজ। কার সঙ্গে কবে কখন কথা বলবেন, ঠিক করে নিন।
• ভিডিও কল করার সময় একটু ফিটফাট হয়ে আলোতে বসে কথা বলুন। যাতে আপনার তরতাজাভাব অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে। রান্না করতে করতে বা ঘরের কাজ সারতে সারতে ক্লান্ত অবস্থায় কথা বললে অন্য জনের খারাপ লাগতে পারে।
• রোজ একঘেয়ে কোভিডের আলোচনা করবেন না। আড্ডার আসল মজাই মাটি হয়ে যাবে তাতে।
• চেষ্টা করুন উৎসাহব্যঞ্জক কথাবার্তা বলতে।কী রান্না করছেন, ব্যায়ামের কী টার্গেট নিয়েছেন, নতুন কোনও কোর্স বা কাজ শুরু করেছেন কিনা বা নতুন কোন বই পড়লেন বা সিনেমা দেখলেন, অন্য জনের কোনও বিশেষ গুণ থাকলে তার সাহায্যে এই মুহূর্তে বা পরে কী ভাবে কী করা যেতে পারে, সে সব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
• নিজেকে জাহির করবেন না। অন্যের দোষত্রুটি নিয়েও একদম কিছু বলবেন না। এতে সম্পর্ক ভাল হওয়ার বদলে খারাপ হবে।
• দু’জনে বা কয়েক জনে মিলে অনলাইন গেম খেলতে পারেন। সুযোগ থাকলে করতে পারেন অনলাইন শপিংও। একসঙ্গে করলে বেশি মজা লাগবে।
আরও পড়ুন: করোনা আটকাতে এই সব নিয়ম পালন করছেন তো? নইলে বিপদের ঝুঁকি থাকছে
• নিজের রাগ, দুঃখ, হতাশা নিয়ে আলোচনা করার মতো কেউ যেন থাকেন।কারণ মাঝেমাঝে হতাশা আসতেই পারে।
• প্রেম বা বিবাহিত সম্পর্কে নিজস্ব ভালবাসার আলাপচারিতাও থাকুক যোগাযোগে।
মনে রাখবেন, সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন বেড়েছে বলে আপনি কিন্তু একা হয়ে যাননি। বরং সম্পর্কগুলোকে নতুন রঙে রাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলুন। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিন।