হৃদপিণ্ডে ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে মন থেকেও! ছবি: আইস্টক।
বুকে ব্যথা হওয়া মানেই হার্ট অ্যাটাকের শঙ্কা তাড়া করে বেড়ায় প্রায় সকলকেই। তড়িঘড়ি হাসপাতালে পাঠানো, জীবনদায়ী ওষুধ জিভের তলায় রাখা, এগুলোই বুকে ব্যথার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রেখেছি আমরা। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, সব বুকে ব্যথাই হৃদরোগের ইঙ্গিতবাহী নয়। বরং হৃদপিণ্ডে ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে মন থেকেও!
কিন্তু হৃদয়ের সঙ্গে মনের সম্পর্ক কী? কার্ডিওসার্জন ভবতোষ বিশ্বাসের মতে, “হৃদরোগের ব্যথা আর মানসিক চাপ থেকে হওয়া ব্যথার ধরন আলাদা। এটা না বুঝেই রোগীর পরিজন অনেক সময় হার্ট মাসাজ, হৃদরোগ ঠেকানোর জীবনদায়ী ওষুধ-সহ নানা ব্যবস্থা নিয়ে ফেলেন। অনেক সময় উল্টো প্রতিক্রিয়াও হয়। এতে হার্টের ক্ষতি হয়। মানসিক টানাপড়েন থেকে যে সব ব্যথা জন্মায় তার ধরন দেখেই তাদের আলাদা করা যায়। সাধারণত, সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু থেকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। হৃদযন্ত্রেও এর প্রভাব পড়ে।’’
তা হলে কোন কোন লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে ব্যথার কারণ আসলে মানসিক চাপ? ভবতোষ বিশ্বাস জানালেন তেমন ক’টি দিক।
আরও পড়ুন: বসন্তে হানা দিতে পারে নানা সংক্রামক অসুখ, রুখে দিন এ সব উপায়ে
স্পন্ডিলাইটিস খুব ভোগাচ্ছে? ব্যায়ামে কব্জা করুন অসুখ
হৃদরোগের ব্যথা আর মানসিক চাপ থেকে হওয়া ব্যথার ধরন আলাদা।
হৃদযন্ত্রের যে কোনও ব্যথাই সাধারণত, পরিশ্রমের সঙ্গে সমানুপাতিক। শ্রম বাড়লে ব্যথা বাড়ে, শ্রম কমলে কমে। যদি কোনও ব্যথা এমন না হয়ে একটানা একই রকম ভাবে হতে থাকে, শ্রমের বাড়া-কমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হয়, তা হলে সে ব্যথা একেবারেই হৃদযন্ত্রগত সমস্যার ব্যথা নয় বরং মানসিক চাপ থেকে হওয়া হৃদপেশীর ব্যথা। হৃদযন্ত্রের ব্যথায় অবশ্যই বিজবিজে ঘাম হবে, বুক ধড়ফড় থাকবে। শ্রম ও কষ্ট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সব উপসর্গও বাড়বে। মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকে হওয়া ব্যথায় ঘাম বা বুক ধড়ফড়ানি ভাব থাকে না। ভয় পাওয়া থেকে ঘেমে যান অনেকে। তাই ঘাম যদিও বা দেখা যায় তা ব্যথা বাড়ার সঙ্গে বা শ্রম বাড়ার সঙ্গে বাড়ে না। বুক ধড়ফড়ানিও থাকে না। হৃদযন্ত্রের ব্যথা সবসময় জানান দিয়ে আসে না। তবে কখনও কখনও হৃদযন্ত্রগত ব্যথায় পিন ফোটার মতো কষ্ট থাকে, ব্যথা নির্দিষ্ট এক জায়গায় না হয়ে সারা বুক, পিঠ, হাতেও ছড়িয়ে পড়ে। মানসিক উদ্বেগের ব্যথা তেমন নয়। নির্দিষ্ট ভাবে হৃদপেশীতে চাপ পড়ে যে ব্যথা ছড়ায় তা এমন পিন ফোটার মতো ব্যথা হয় না, ব্যথা অন্যত্র ছড়িয়েও পড়ে না। সময়ও একটা ফ্যাক্টর। টেনশন কমা, উদ্বেগ দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। হৃদযন্ত্রের কারণে ব্যথা হলে, সে বেদনা এ ভাবে কমে না। উল্টে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়তে থাকে।