Fitness

ডায়েট করুন বয়স মেপে

বয়স অনুযায়ী কী ভাবে বদলে যাবে আপনার ডায়েট চার্ট, রইল তার গাইডলাইনবয়সভেদে কিছু অতিরিক্ত পুষ্টির জোগানও জরুরি, যা সাপ্লিমেন্টের আকারে নেওয়া যায়।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৬:৩৯
Share:

স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা আমরা সব সময়েই বলি, শুনি বা পড়ে থাকি। ডায়েট চার্টে পুষ্টিকর খাবার থাকাটা আবশ্যিক হলেও কোন বয়সে কোন ধরনের পুষ্টি শরীরে প্রয়োজন আর কতখানি, তা জেনে ডায়েট চার্ট তৈরি করা জরুরি। বয়স, ওজন ও কায়িক পরিশ্রমের ধরন অনুযায়ী ডায়েট তৈরির সময়ে প্রধানত মাথায় রাখা দরকার, ক্যালরি ইনটেক আর বার্নের হিসেব। এ ছাড়া বয়সভেদে কিছু অতিরিক্ত পুষ্টির জোগানও জরুরি, যা সাপ্লিমেন্টের আকারে নেওয়া যায়। সেই প্রয়োজনীয়তাগুলি আগে শনাক্ত করে নেওয়া দরকার।

Advertisement

বয়সের সঙ্গে বাড়ন্ত সমস্যা

Advertisement

শিশুদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পুষ্টি হচ্ছে কি না, এই ভাবনা থেকে অনেক অভিভাবকেরাই তাঁদের সন্তানকে অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তোলেন। আবার এর উল্টোটাও দেখা যায়, যেখানে হয়তো সন্তান ফল কিংবা আনাজপাতি দেখলেই মুখ ফেরায়। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও সব রকমের খাবারের অভ্যেস তৈরি করতে হবে ছোট থেকেই, যাতে অ্যালার্জি ছাড়া অন্য কোনও খাবারে সে ‘না’ বলতে না শেখে।

সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর ঝোঁক কমে যায়, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বাইরের জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা। তার সঙ্গে যুক্ত হয় খেলাধুলোর অভাব ও দিনের বেশির ভাগ সময়ে শারীরিক পরিশ্রম না করার অভ্যেস। এর ফলে যে রোগের লক্ষণ তিরিশোর্ধ্ব মহিলাদের শরীরে একটু একটু করে দেখা দিত আগে, এখন তা থাবা বসাচ্ছে টিনএজেই। এ প্রসঙ্গে ডায়াটিশিয়ান হিনা নাফিস বললেন, ‘‘লাইফস্টাইল সমস্যা এখন অনেক কম বয়স থেকেই। মুভমেন্ট কম হওয়ায় অল্প বয়সে পেটে চর্বি জমার প্রবণতা, মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে স্ক্রিন টাইম বাড়ার ফলে ঠিক সময়ে না ঘুমোনো— এই সবই প্রভাবিত করে টিনএজারদের গ্রোথ হরমোনকে। আরও একটু বয়স বাড়লে যা ডেকে আনতে পারে ইনসমনিয়া, অ্যাংজ়াইটি, টাইপ টু ডায়াবিটিস, ফ্যাটি লিভার (নন-অ্যালকোহলিক) কিংবা পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যাকে।’’

ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পরে মেয়েদের রক্তাল্পতায় ভোগার সম্ভাবনাও দেখা দেয়। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর চাহিদাও অপরিহার্য। তাই বেড়ে ওঠার সময়ে মেয়েদের ডায়েটে আয়রন ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত রাখা জরুরি। আবার পঞ্চাশ-ষাটোর্ধ্ব বয়সিদের পেশিক্ষয়ের হার বৃদ্ধি পায়। তাই সেই সময়ে প্রোটিনের জোগান জারি রাখতে হবে। পাশাপাশি বয়স বাড়ার ফলে খিদে-তেষ্টা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে বেশি করে জল ও ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে রাখলে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা এড়ানো যায়।

ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ডায়েট নয়

অনেকেরই ধারণা, প্রোটিন শুধুমাত্র বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই প্রোটিন ইনটেক কমিয়ে দেন অনেকে। বহু মানুষ চল্লিশ কিংবা পঞ্চাশের পরে নিরামিষাশী হয়ে যান, কেউ প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করে দেন। কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে এই অভ্যেস চোখে পড়ে আরও বেশি। গুড ফ্যাট কোনগুলি, তা-ও অনেকে চিহ্নিত করতে পারেন না। তবে বয়স হয়ে গেলে প্রোটিনের প্রয়োজন কমে আসে, এ ধারণা ভ্রান্ত। কারণ, প্রোটিন শুধু ‘গ্রোথ’-এ নয়, সাহায্য করে ‘রিপেয়ারিং’-এও। অর্থাৎ বয়সকালে পেশিক্ষয়ের মোকাবিলা করতে পারে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারই। ‘‘আমাদের আশপাশে পেটের অংশ স্ফীত ও হাত-পা সরু হয়ে যাওয়া বয়স্ক মানুষ প্রায়ই দেখতে পাই। তুলনায় একই বয়সি পশ্চিমি মানুষদের চেহারা দেখুন, যাঁরা প্রোটিন-সমৃদ্ধ ডায়েট মেনটেন করেন। তফাতটা বুঝতে পারবেন। মোট প্রোটিন ইনটেকের ৫০ শতাংশ হাই বায়োলজিক্যাল ভ্যালু, বাকি ৫০ শতাংশ লো বায়োলজিক্যাল ভ্যালু থেকে গ্রহণ করা দরকার। তাই বয়স হলেই প্রাণীজ ও দুগ্ধজাত প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত নয়,’’ বললেন হিনা।

যাঁদের শরীরে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে, তাঁরা হয়তো কোলেস্টেরলের জন্য ডিমের কুসুম কিংবা ব্লাড সুগারের জন্য ভাত খাওয়া এড়িয়ে চলছেন। এ দিকে সারা দিনে অজস্র বার চা-বিস্কিট খাওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে কিন্তু অজান্তেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত শর্করা কিংবা কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার যাঁদের সারা দিন বসে কাজ, তাঁরা সকালে এক ঘণ্টা ওয়র্কআউট করেই সারা দিনের জন্য নিশ্চিন্ত হচ্ছেন। অথচ টানা ৮-৯ ঘণ্টা বসে কাজ করলে এবং মাঝেমধ্যে ন্যূনতম বডি মুভমেন্ট না হলে কিন্তু সকালের ঘাম ঝরানো অর্থহীন হয়ে যাবে। কাজেই শুধু ব্যালান্সড ডায়েট নয়, সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত এ প্রজন্মের ক্যালরি বার্ন করার দিকে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। প্রতি আধঘণ্টা অন্তর মিনিট তিনেকের হাঁটাচলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ডায়েট ফলো করার সময়ে মাথায় রাখা জরুরি, সাপ্লিমেন্ট কখনও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারের পরিবর্ত হতে পারে না। সাপ্লিমেন্টের অর্থই হল অতিরিক্ত। তাই প্রয়োজনমতো ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন বা অন্য সাপ্লিমেন্ট নিলেও খাবারের মাধ্যমে স্বাভাবিক পুষ্টির জোগান যেন ব্যাহত না হয়, তা খেয়াল রাখা জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement