গয়না পরতে ভালবাসেন নীতা অম্বানী। ছবি : সংগৃহীত।
কখনও তাঁর গলায় প্রায় পাউরুটির মাপের পান্না ঝোলে। কখনও তাঁর হাতে শোভে বিরলের মধ্যে বিরলতম চুনি। ঝলমলে মুক্তো, চোখধাঁধানো হিরে বসানো সব গয়না পরে এক একটি অনুষ্ঠানে অবতীর্ণ হন নীতা অম্বানী! যে সব গয়নার কথা শুধু রাজারাজড়াদের গল্পেই শুনেছেন আমজনতা, ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর ঘরনি সেই গয়না পরে হেলায় চোখের সামনে হেঁটে চলে বেড়ান। তিনি কোন অনুষ্ঠানে কী সাজলেন, তা জানার থেকেও বেশি আগ্রহ থাকে তিনি কী গয়না পরলেন তা নিয়ে। নীতার ওই বিরল গয়নার সংগ্রহে কিছু এমন গয়নাও রয়েছে, যা ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি, মোগল বাদশাহ শাহজাহানের গয়নাও নিজের সংগ্রহে রেখেছেন ধনকুবের-জায়া।
কী কী ঐতিহাসিক গয়না রয়েছে নীতার সংগ্রহে?
নীতার সংগ্রহে থাকা ঐতিহাসিক গয়নাগুলির একটি অবশ্যই তাঁর মোগল জমানার বাজুবন্ধটি। তবে এ ছাড়াও আরও সাবেকি গয়না রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।
বাজুবন্ধ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত নীতা একটি কালো জংলা বেনারাসি শাড়ির সঙ্গে পরেছিলেন হিরে আর চুনি বসানো বাজুবন্ধ। কালো রঙের ব্লাউজের প্রান্তে নীতার বাম বাহুতে শোভা পাচ্ছিল সেই অলঙ্কার। পরে জানা যায়, সেই বাজুবন্ধ মোগল জমানার। শুধু তা-ই নয়, সেটি আদতে বাজুবন্ধই নয়। কলগি অথবা শরপেঁচ নামের ওই অলঙ্কারটি মোগল সম্রাট শাহজাহানের পাগড়িতে শোভা পেত সপ্তদশ শতকে। বাজুবন্ধের পাথরেই খোদাই করা রয়েছে তার প্রমাণ। তাতে লেখা আছে, ‘‘১২/শাহজাহান ইবন জহাঙ্গির শাহ/ ১০৪৯’’ অর্থাৎ খোদাইটি করা হয়েছে ইসলামি বর্ষ ১০৪৯ হিজরায়। যা কিনা ১৬৩৯-৪০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়। পরে ওই শরপেঁচকে নতুন ভাবে গড়া হয় উনবিংশ শতকে। আরও বিশদে বললে ১৮৭৫ সাল থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে। আপাতত সেটি নীতার গয়নার বাক্সে সুরক্ষিত।
আংটিতে ‘স্বর্গের আয়না’
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানীর বিয়েতে বৃহৎ মাপের দু’খানি পান্নার লকেট পরে চমকে দিয়েছিলেন নীতা। তবে তার সঙ্গে যে হাতে যে হিরের আংটিটি পরেছিলেন, সেটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যে কিছু কম যায় না। নীতার পরা আংটিতে যে হিরেটি জ্বলজ্বল করছিল, তার নাম ‘মিরর অফ প্যারাডাইস’। ৫২.৫৮ ক্যারাটের ওই হিরে গোলকোন্ডার খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল ১৮০০ সালের কিছু আগে। পরে তা মোগল সম্রাটদের রত্নভান্ডারে গচ্ছিত ছিল। ২০১৯ সালে সেটি ক্রিস্টির নিলামঘরে নিলামে ওঠে। বিক্রি হয় ৬৫ লক্ষ ডলারে। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায়। এখন সেটিও নীতার সংগ্রহেই এবং সম্ভবত নীতার প্রিয় গয়নাগুলির একটি। কারণ নীতাকে গয়না বা সাজ এক বারের বেশি দু’বার সচরাচর ব্যবহার করতে দেখা যায় না। তিনি অনন্তের বিয়ের পরেও আরও বেশ কিছু অনুষ্ঠানে ওই আংটি পরেছেন।
টিয়া লকেট
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ উপলক্ষে একটি ব্যক্তিগত স্তরের রিসেপশন পার্টি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে আয়োজিত সেই পার্টিতে নীতা গিয়েছিলেন সোনালি আর রুপোলি জরির নকশা করা কালো রঙের কাঞ্চিপুরম সিল্ক পরে। তার সঙ্গে যে গয়নাটি তিনি পরেছিলেন, সেটি তিন নহর পান্নার মালা। আর তার সঙ্গের লকেটটি দেখতে একটি ডানা মেলা টিয়াপাখির মতো। সেই লকেটটি হিরে-পান্না-চুনি-মুক্তোর মিনাকারি কারুকাজে ভরা। লকেটটি না হোক ২০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ ভারতে।