নীতা অম্বানী। ছবি : ইনস্টাগ্রাম।
নীতা অম্বানী দামি শাড়ি পরবেন, সেটাই স্বাভাবিক। দেশের ধনীশ্রেষ্ঠের ধর্মপত্নী বলে কথা! তবে দামি শাড়ি মানেই কি শিল্পের নিরিখে ভাল শাড়ি! কাপড়ের ভাল গুণমান, কারিগরের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম দিয়েও কি শিল্পের শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে পৌঁছনো যায়? উঁহু। কিন্তু ফ্যাশন দুনিয়ায় নীতার খ্যাতি সুক্তির ভিতর থেকে সেরা মুক্তোটি খুঁজে বার করার জন্যই। তিনি যখনই যে শাড়ি পরেন তা থেকে চোখ ফেরানো যায় না। সম্প্রতি অম্বানীদের স্কুলের অনুষ্ঠানে একটি বেনারসি পরে হাজির হয়েছিলেন নীতা। প্রায় গোটা বলিউডই হাজির ছিল সেখানে। সেই শাড়ির বুনন দেখে ফ্যাশন জগতের তারকারা বলছেন, শাড়িখানা বারাণসীর ‘ওয়ার্ক অফ আর্ট’!
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
নীতার শাড়িটি ‘কোবাল্ট ব্লু’ রঙের। তাতে ব্রোঞ্জরঙা জরির পেটাই পাড়। আর শাড়ির জমিতে মোগল জাফরি কাজের ফুলকারি নকশার ঠাসা কাজ। বারাণসীর ওই ধরনের শাড়ির কাজকে বলা হয় জাল নকশা। জাল নকশার কাজের বিশেষত্ব হল শাড়িতে ঠাসা জরির কাজ থাকলেও শাড়ির নকশাকে উচ্চকিত মনে হয় না। ওই শাড়ির কারিগরেরাও আলাদা। তবে নীতার শাড়ির জাল নকশা সাধারণ জাল নকশার থেকে অনেকটাই আলাদা। ঘন বুনটের শাড়িটির জমিতে ফুলকারি জরির কাজে রয়েছে মিনা করা তিনরঙা ফুলের নকশাও।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
ওই শাড়িতে নীতার ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন বলিউডের তারকা মেকআপ শিল্পী মিকি কন্ট্রাক্টর। তিনিই নীতার মেকআপ করেছেন। মিকি লিখেছেন, ‘‘আবার বারো হাতের বুননে মুগ্ধ করলেন নীতা অম্বানী। ভারতীয় কারিগরদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য।’’ অর্থাৎ, শাড়িটি কোনও পোশাকশিল্পীর থেকে কেনেননি নীতা। যেমনটা সচরাচর তিনি কিনে থাকেন। ফ্যাশন দুনিয়ার কেউ কেউ বলছেন, ছোট ছেলে অনন্ত অম্বানীর বিয়ের আগে এক বার বারাণসীতে গিয়ে সেখানকার কারিগর থেকে সোনা-রুপোর জরি দেওয়া প্রচুর শাড়ি কিনে এনেছিলেন নীতা। ওই শাড়িটি সেই সংগ্রহেরও হতে পারে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বারাণসীর বেনারসি শাড়ির ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। ইতিহাস বলছে, বেনারসি শাড়ি বুনন শিল্পও অতি প্রচীন। সোনা অথবা রুপোর সুতোয় বোনা ওই শাড়ির উল্লেখ রয়েছে ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ বেদে। সেই সময়ের সবচেয়ে দামি বস্ত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘হিরণ্য বস্ত্র’কে। যা আদতে সোনার তৈরি কাপড়। যা কিনা ঈশ্বরের পরিধেয়। ঋষি পতঞ্জলির লেখা শাস্ত্রেও খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে উল্লেখ রয়েছে ‘কশিকা বস্ত্রের’। সেই বস্ত্রও বেনারসি বলেই বিশ্বাস। মোগল আমলে সেই বেনারসি শাড়িতে জরির কাজে মোগল স্থাপত্যের নকশা এসে মেশে। বারাণসী ছাড়াও চান্দৌলি, ভাদোহি, মির্জাপুর এবং আজমগড়ে বেনারসি শাড়ি বোনা হতে থাকে। পরে বেনারসি শাড়ি ২০০৯ সালে জিয়োগ্রাফিকাল ইন্ডিকশন ট্যাগও পায় সরকারের কাছ থেকে। নীতা অবশ্য শাড়ি কিনতে বারাণসীতেই গিয়েছিলেন। তাঁর বেছে আনা সেই শাড়ি দেখে মুগ্ধ বলিউডের তারকারাও। মিকির দেওয়া নীতার ছবিটি পছন্দ করেছেন বলিউডের নায়িকা থেকে শুরু করে মণীশ মলহোত্রের মতো পোশাকশিল্পীও।