Skin Care Tips

বাজারে এসেছে হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন এবং সানস্ক্রিন পিল! সাধারণ সানস্ক্রিনের থেকে তা কিন্তু আলাদা

ত্বকের সমস্যা যত বাড়ছে, ততই নতুন সব প্রসাধনী আসছে। লিপস্টিক, লোশন এমনকি সানস্ক্রিন নিয়েও চলছে নানা পরীক্ষা। সম্প্রতি বাজারে এসেছে হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন, সানস্ক্রিন পিল। সাধারণ সানস্ক্রিনের থেকে কতটা আলাদা এগুলি? ব্যবহার করা আদৌ কি নিরাপদ?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২৬
Share:

সানস্ক্রিন লোশান মাখার বদলে ক্যাপসুল খাওয়া কি নিরাপদ? ছবি: সংগৃহীত।

ঝড়বৃষ্টি কিংবা রোদকে উপেক্ষা করে কাজে তো বেরোতেই হবে। এই ভ্যাপসা আবহাওয়ায় শরীর চাঙ্গা রাখতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে ব্যাগে জলের বোতল, ছাতা, রুমাল, সানগ্লাসটি রাখতেই হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ শুনে সে নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনেও চলছেন কেউ কেউ। কিন্তু শরীরের যত্ন নিলেও ত্বকের প্রতি অবহেলা করছেন না তো? শীত-গ্রীষ্ম হোক কিংবা বর্ষা, ব্যাগে সানস্ক্রিন রাখতে ভুললে কিন্তু চলবে না।

Advertisement

সারা বছর বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে মেকআপ করুন আর না-ই করুন, সানস্ক্রিন মাখতেই হবে। ত্বকের জন্য কেন এত জরুরি সানস্ক্রিন? চিকিৎসক শুভম সাহা বলেন, ‘‘সানস্ক্রিন অনেকেই ব্যবহার করেন না। অথচ ত্বক ভাল রাখার ক্ষেত্রে এই প্রসাধনীটি ব্যবহার করা ভীষণ জরুরি। কেবল মেয়েদেরই নয়, ছেলেদেরও মেনে চলতে হবে এই নিয়ম। সানস্ক্রিন কেবল ট্যান পড়ার হাত থেকে রেহাই দেয় এমনটা নয়, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি ইউভিএ এবং ইউভিবি-র ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করাই কিন্তু সানস্ক্রিনের মূল কাজ। সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে, এ ছাড়া ত্বকে অকালে বয়সের ছাপও পড়ে না।’’

বাজারে গিয়ে সানস্ক্রিন কেনার সময় অনেকেরই মাথায় হাত পড়ে যায়। এত রকম সংস্থা, কোনটি ভাল আর কোনটি ভাল নয়, সেটা ঠিক করতেই মুশকিলে পড়তে হয়। অন্যান্য জগতের মতো প্রসাধনী দুনিয়াতেও নিত্যনতুন ফর্মুলা আসছে বাজারে। ত্বকের সমস্যা যত বাড়ছে, ততই নতুন সব প্রসাধনীও আসছে। লিপস্টিক, লোশন এমনকি সানস্ক্রিন নিয়েও চলছে নানা পরীক্ষা। সম্প্রতি বাজারে এসেছে হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন। এই সানস্ক্রিনের মসৃণতা সাধারণ সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশনের থেকে একেবারেই আলাদা। তফাতটা কোথায়?

Advertisement

১) সাধারণ সানস্ক্রিন বা লোশন ব্যবহার করলে যাঁদের চটচটে লাগে কিংবা ঘাম হয়, তাঁদের জন্য হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন বেশ উপকারী।

২) হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন বেশ হালকা হয়। এর মসৃণতা ঠিক মুজ় ক্রিমের মতো। ত্বকে ব্যবহার করা পর কয়েক সেকেন্ডেই একেবারে ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে যায় এই হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন।

৩) এমন অনেক সানস্ক্রিন লোশন কিংবা ক্রিম আছে যা ব্যবহার করলে ত্বক সাদাটে লাগে, ত্বকে ব্যবহার করার পর বাইরে বেরোনোর আগে আধ ঘণ্টা সময় হাতে রাখতে হয়। ব্যবহারের পর ত্বকের সঙ্গে মিশতে অনেকটা সময় লেগে যায় সাধারণ সানস্ক্রিন লোশনের। কিন্তু হুইপ্‌ড সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে সেই সময়টুকু অপচয় করার প্রয়োজন নেই। হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া যায়, অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।

হুইপ্‌ড সানস্ক্রিন বেশ হালকা হয়। ছবি: শাটারস্টক।

৪) স্পর্শকাতর কিংবা তৈলাক্ত ত্বকে অনেক সময় সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করলে উন্মুক্ত রন্ধ্র (ওপেন পোর্‌স), ব্রণর সমস্যা হয়। তবে হুইপ্‌ড সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা হওয়ার কথা নয়, এমনটাই দাবি করছে প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি।

৫) যে প্রসাধনী ব্যবহার করেও মনে হবে না যে কিছু ব্যবহার করা হয়েছে, এমন প্রসাধনীরই চাহিদা বাড়ছে বাজারে। আর সে কারণেই হুইপ্‌ড সানস্ক্রিনের জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

হুইপ্‌ড হোক বা লোশন, সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এসপিএফ, অর্থাৎ ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’। নির্দিষ্ট সানস্ক্রিনটি কত ক্ষণ আপনার ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করবে, তা-ই বোঝানো হয় এসপিএফ-এর মাধ্যমে। চর্মরোগের চিকিৎসক অভীক শীল বলেন, ‘‘এসপিএফ ৩০ ব্যবহার করবেন না কি ৫০, তা নিয়ে খুব বেশি ভাবার কারণ নেই। এসপিএফ ৫০ সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে ৯৪.৫ শতাংশ সুরক্ষা দেয়, অন্য দিকে এসপিএফ ৩০ সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে ৯২ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। তাই দুটির মধ্যে খুব বেশি ফারাক নেই। আমাদের দেশের যা আবহাওয়া, তাতে এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।’’

হুইপ্‌ড সানস্ক্রিনের মতোই বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে সানস্ক্রিন পিল বা ট্যাবলেট। অর্থাৎ, গায়ে মাখার প্রয়োজন নেই, ওষুধ খেলেই সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাবে ত্বক। সাধারণ সানস্ক্রিনের থেকে আলাদা কোথায়?

১) সানস্ক্রিন ক্রিম, স্প্রে, লোশন যা-ই ব্যবহার করা হোক না কেন, যে জায়গায় প্রয়োগ করা হবে, শুধু সে অংশটুকুই সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে সানস্ক্রিন পিল সারা শরীরকেই সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে বাঁচাবে।

২) সানস্ক্রিন পিল এক ধরনের সাপ্লিমেন্ট, যা ত্বককে অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে ত্বকের ক্যানসার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

হুইপ্‌ড সানস্ক্রিনের মতোই বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে সানস্ক্রিন পিল বা ট্যাবলেট। ছবি: সংগৃহীত।

সানস্ক্রিন পিল কি ব্যবহার করা আদৌ সুরক্ষিত?

অনলাইনে খোঁজ করলে বিভিন্ন সংস্থার সানস্ক্রিন পিল চোখে পড়বে আপনার। সেগুলির দামও যথেষ্ট। কিন্তু সেগুলি আদৌ কি ঠিক মতো কাজ করে? চর্মরোগ চিকিৎসক সন্দীপন ধর বলেন, ‘‘আমরা তো দীর্ঘ দিন ধরে ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ভিটামিন সি ক্যাপসুল, বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রোগীদের প্রেসক্রাইব করে আসছি। তবে অবশ্যই প্রয়োজন বুঝে, নির্দিষ্ট ডোজ় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাজারে যে সব সানস্ক্রিন পিল বিক্রি হচ্ছে, সেগুলি আদতে এই সব ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মিলিত রূপ বলা চলে। তবে এইগুলি ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে কতটা রক্ষা করতে পারে, সে বিষয়টি এখনও কোনও গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। বড় বড় ওষুধ বিপণন সংস্থাগুলি সাধারণ ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের ক্যাপসুলগুলিকেই নতুন নামে বিক্রি করছে গ্রাহকদের কাছে। আর অনেকেই সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন। সেই ক্যাপসুলগুলি হয়তো সরাসরি শরীরের তেমন কোনও ক্ষতি করছে না, তবে কোনও ওষুধ, ক্যাপসুলই চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে খেয়ে যাওয়াও কোনও কাজের কথা নয়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ওষুধ বা পিলের ভরসায় না থেকে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করারই পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা।’’

সানস্ক্রিন পিল খাওয়া কি আদৌ স্বাস্থ্যের জন্য ভাল?

সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রেহাই পেতে সানস্ক্রিন পিল নয়, লোশান বা ক্রিমই ব্যবহার করার কথা বলছেন পুষ্টিবিদেরা। পুষ্টিবিদ ও জীবনধারা সহায়ক অনন্যা ভৌমিক বলেন, ‘‘আমরা তখনই কোনও রোগীকে সাপ্লিমেন্ট দিই, যখন তাঁর শরীরে সেই নির্দিষ্ট জিনিসটির ঘাটতি রয়েছে। সানস্ক্রিন লোশন যখন বাজারে আছে, তখন আলাদা করে কাউকে সানস্ক্রিন পিল খাওয়ানোর তো কোনও অর্থই হয় না। অযথা সাপ্লিমেন্ট নেওয়াকে আমি কখনওই সমর্থন করি না। যাঁদের ত্বকে সত্যিই সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির কারণে সমস্যা হচ্ছে, তাঁদের বাজার থেকে পিল বা ক্যাপসুল কিনে খাওয়ার বদলে একজন চর্মরোগ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তিনিই একমাত্র আপনার সমস্যার সঠিক সমাধান করতে পারবেন। কোনও সানস্ক্রিন পিল প্রস্তুতকারক সংস্থা যতই দাবি করুক তাতে এসপিএফ ৩০, ৪০ আছে, সেই প্রলোভনে গা না ভাসানোই ভাল।’’

অনেকেই আছেন, যাঁদের সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে নানা রকম সমস্যা হয়। কারও ত্বক অতিরিক্ত ঘেমে যায়, কারও আবার ত্বকে র‌্যাশ বেরিয়ে যায়। এ রকম কোনও ধরনের সমস্যা হলে হয়তো আপনি সানস্ক্রিনটি ঠিক মতো ব্যবহার করছেন না, কিংবা যে সংস্থার সানস্ক্রিন ব্যবহার করছেন, তা আদৌ খুব বেশি কাজের নয়। তাই লোশন হোক বা ক্রিম, হুইপ্‌ড হোক বা মুজ়— সানস্ক্রিন কিনতে হবে বুঝেশুনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement