COVID-19

সুস্থ হওয়া কোভিড রোগীর একাংশের মস্তিষ্কে ডিমেনশিয়ার ছাপ, বলছে গবেষণা

এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সমস্যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘ব্রেন ফগিং’ (কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক)। এটি মস্তিষ্কের এমন অবস্থা যা চিন্তা করা, লক্ষ্যে স্থির থাকা, মনোনিবেশ করা, মনে রাখার কাজকে কঠিন করে তোলে।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২১
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মস্তিষ্কে কতটা প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯? দেখা গিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পরেও ভুলে যাওয়া, মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ না করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা তৈরির মতো ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, অনেকে সেই সব সঙ্কট কাটিয়ে উঠলেও অনেকের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার বছর দেড়েক পরেও নানা সমস্যা থেকে যাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তবে কি কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনও কোনও ব্যক্তির মস্তিষ্কের এই ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী? বছর দেড়েক আগে সেই উত্তর খুঁজতে নামেন শহরের এক দল গবেষক।

Advertisement

ওই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। দেড় বছর ধরে সেই গবেষণার জন্য সমীক্ষা চলেছিল। সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন যে ৩৭৬ জন, তাঁরা প্রত্যেকেই কোভিড থেকে সেরে উঠেছিলেন এক থেকে দেড় বছর আগে। শহরের তিনটি সরকারি হাসপাতাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, এম আর বাঙুর ও বেলেঘাটা আইডি-তে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা ওই ৩৭৬ জনকে নেওয়া হয়েছিল এই সমীক্ষায়।

এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সমস্যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘ব্রেন ফগিং’ (কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক)। এটি মস্তিষ্কের এমন অবস্থা যা চিন্তা করা, লক্ষ্যে স্থির থাকা, মনোনিবেশ করা, মনে রাখার কাজকে কঠিন করে তোলে। বিভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া এবং মানসিক স্বচ্ছতার অভাব অনুভব করতে পারেন কোনও ব্যক্তি। ব্রেন ফগ কোনও চিকিৎসাগত অবস্থা নয়, এটি বিভিন্ন কারণের লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা বয়স্ক অথবা কোমর্বিডিটি আছে, এমন মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্রেন ফগিংয়ের উপসর্গ দেখা যাচ্ছিল।

Advertisement

বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসের স্নায়ুরোগ চিকিৎসক তথা গবেষকদলের প্রধান অতনু বিশ্বাসের কথায়, ‘‘নতুন এই ভাইরাসের নিত্যনতুন উপসর্গ সেই সময়ে নজরে আসছিল আমাদের। ভাইরাসকে মারতে শরীরে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে উঠলে, অর্থাৎ, ‘হাইপার অ্যাক্টিভ ইমিউন স্টেট’-এ ধ্বংস হচ্ছিল মস্তিষ্কের অংশ।’’ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে ‘কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট’ বা স্মৃতিশক্তির সমস্যাও। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া, কোভিড থেকে সেরে ওঠা মানুষের চার শতাংশের মধ্যে প্রথম বার ডিমেনশিয়া দেখা গিয়েছে। ‘মাইল্ড কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট’ পাওয়া গিয়েছে ছয় শতাংশের মধ্যে। এই গবেষণায় এমনও পাওয়া গিয়েছে, একটু জটিল বাক্য, উপমা, দ্ব্যর্থে কথা, গভীর চিন্তার প্রকাশ ঘটে যে সব সিনেমায়, সে সব বুঝতে সমস্যা তৈরি হয়েছে অনেকের। এই সব সমস্যা তাঁদের কোভিড হওয়ার আগে ছিল না। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া, কোভিড থেকে সেরে ওঠাদের মধ্যে মোট ৪৪.৯৫ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ধরা পড়েছে গবেষণায়।

গবেষক দলের তরফে অতনু বিশ্বাস জানাচ্ছেন, এই গবেষণা দেখাচ্ছে, কোভিড আক্রান্তের ব্রেন ফগ-ই শুধু সমস্যা নয়। সুস্থ হওয়ার পরেও তাঁদের অনেকের মস্তিষ্কে গঠনগত পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ এমআরআই-এ ধরা পড়েছে স্নায়ুকোষ শুকিয়ে যাওয়া বা স্নায়ুকোষের গঠনে বদল। যার ফলে ভুলে যাওয়া, অ্যাংজ়াইটি, ডিপ্রেশনের মতো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাও দেখা গিয়েছে। ওই গবেষণায় এখনও পর্যন্ত যা বিশ্লেষণ করে পাওয়া যাচ্ছে, তা হল কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে ডিমেনশিয়ার মতো রোগের সূত্রপাত ঘটেছে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে। যা চিরস্থায়ী বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোগের শুরুতেই চিকিৎসা যাতে আরম্ভ করা যায়, সব তরফে সেই সতর্কতা প্রয়োজন বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement