অ্যালঝাইমার্স নিয়ে আলোচনা মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্য়োপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সকালেই আলমারি থেকে পোশাক বার করেছিলেন, অথচ দুপুর গড়াতে না গড়াতেই চাবিটি খুঁজে হয়রান। কিছুতেই মনে পড়ছে না কোথায় রেখেছেন আলমারির চাবি। দৈনন্দিন জীবনে এমন ভুলে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হয় অনেককেই। বিশেষ করে বয়স্কদের সঙ্গে এমনটা মাঝেমধ্যেই হয়। মনে করতে না পারলে একটা অস্বস্তিও কাজ করে। তা ছাড়া, ভুলে যাওয়া সংক্রান্ত অসুবিধা নিয়ে বড় কোনও অসুখের ভয়ও দানা বাঁধে মনের মধ্যে। ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই হয়। তবে আপনিও কি অ্যালঝাইমার্সের শিকার? বুঝবেন কী করে? মনে রাখতে না পারার অসুখ অর্থাৎ, অ্যালঝাইমার্স নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব পেজে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বে অনুত্তমা একা নন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন মনোরোগ চিকিৎসক আবির মুখোপাধ্যায়। কোন উপসর্গ দেখলে অ্যালঝাইমার্সের বিষয়ে সতর্ক হবেন, স্পষ্ট জানালেন চিকিৎসক।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। আলোচনার বিষয় ভুলে যাওয়া হলেও প্রতি সপ্তাহের এ পর্বে ই-মেলে তেমন মনোবিদকে প্রশ্ন পাঠাতে ভোলেননি কেউ। শাশ্বতী লিখেছেন, ‘আমার বয়স ৫৩। এক বছর যাবৎ আমি লক্ষ করছি আমার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু পুরনো কোনও কথা, যেমন কারও জন্মদিন, ছেলেবেলার স্মৃতি ভুলে যাই না। তবে এখন এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গিয়ে মনে করতে পারি না, ঠিক কেন এসেছি। এখন নিজের উপরেই বড্ড বিরক্ত লাগে। আমার স্মৃতিশক্তি কিন্তু খুব ভাল ছিল। তবে এটা কি ভবিষ্যতের ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই হয়। আপনিও কি অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ?’
অনেকেই আপার আপনজনকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে চিঠি লিখেছেন। নাম প্রকাশ না করে এক জন লিখেছেন, ‘আমার মা বরাবরই বড্ড ভুলো মনের। দুধ গ্যাসে চাপিয়ে ভুলে যান, দরকারি কাগজ কোথায় রেখেছেন, ভুলে যান। মায়ের বয়স এখন ৭২। মায়ের ভুলে যাওয়ার অভ্যাস কিন্তু আরও বাড়ছে। মায়ের ধারণা, ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই হয়।’ তবে কি তিনিও অ্যালঝাইমার্সের শিকার? এর কি কোনও পূর্ব লক্ষণ থাকে?
অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ ও উপসর্গ ঠিক কী, তা বুঝিয়ে বললেন চিকিৎসক। আবির বললেন, ‘‘কগনিটিভ ডিসফাংশন কেবল স্মৃতির সঙ্গেই জডিয়ে নেই। স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি ভাষা, অ্যাটেনশন স্প্যান, এগ্জিকিউটিভ ফাংশন অর্থাৎ, পরিকল্পনা করা, যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা, সমাজে মেলামেশা করার ক্ষমতা— এই সবটা নিয়েই কগনিটিভ ডিসফাংশন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোনা যায় ভুলে যাওয়ার বিষয়টি। তবে তার মানে অন্যগুলি হয় না, এমনটা কিন্তু নয়। অনেক অ্যালঝাইমার্স রোগীর ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার আগেই কথা বলতে সমস্যা হওয়া শুরু হয়, আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। তাই স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়াই অ্যালঝাইমার্সের একমাত্র লক্ষণ নয়। এ ছাড়া কিন্তু উদ্বেগ, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও কগনিটিভ ডিসফাংশন হতে পারে। মানসিক উদ্বেগের সঙ্গে ভুলে যাওয়া ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। পরীক্ষার হলে গিয়ে উত্তর ভুলে যাওয়ার মতোই বিষয়টা। তাই সব ভুলে যাওয়াকেই অ্যালঝাইমার্স ভেবে বসা ঠিক নয়। কারণ, যত আপনি অ্যালঝাইমার্সের কথা ভাববেন, তত চিন্তিত হয়ে পড়বেন। আর চিন্তা বাড়লে ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। তাই বেশি বয়সে ভুলে যাওয়াকে অ্যালঝাইমার্স বলে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এমনটা হলে সবার আগে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। চিকিৎসকই যাচাই করে বলতে পারেন, আপনি কি সত্যিই অ্যালঝাইমার্সের শিকার না কি কোনও কারণে মানসিক চাপে রয়েছেন কিংবা কোনও কিছু নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।’’