উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই জেই টিকা চান স্বাস্থ্যকর্তারা

উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রতিষেধক টিকাকরণ জরুরি বলে দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে সুপারিশ জানাল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রবিবার ওই প্রতিনিধি দলটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০২:০১
Share:

বিশেষ ওয়ার্ডে শুশ্রুষায় ব্যস্ত পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রতিষেধক টিকাকরণ জরুরি বলে দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে সুপারিশ জানাল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রবিবার ওই প্রতিনিধি দলটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছয়। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট, কেন্দ্রের এক জন পতঙ্গবিদ এবং অল ইন্ডিয়া ইন্সস্টিটিউ অব হাইজিনের ডিরেক্টর। প্রতিনিধি দলটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে আক্রান্ত এবং মৃতদের ব্যাপারে তথ্যও সংগ্রহ করেছেন। সন্ধ্যার দিকে তাঁরা জলপাইগুড়ি রওনা হন। দু’দিন ধরে তাঁরা জলপাইগুড়ি, আলিপুদুয়ার কোচবিহারের পরিস্থিতি ঘুরে দেখবেন।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সব সময়ই কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছিল। পুনের ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউ অব ভাইরোলজিতে নিয়মিত নমুনা পাঠানো হয়। সেই মতো কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল এসেছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও এই প্রতিনিধি দলের মতামত সহায়তা করবে বলে আশাবাদী।’’

দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া জানান, তিনি দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধি দল পাঠাতে আর্জি জানান। সেই মতো রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে নোডাল সেন্টার করে ওই কাজ করার বিষয়টি ঠিক হয়। সাংসদ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন রোগ নিয়ন্ত্রণে রাজ্যকে সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে।’’

Advertisement

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এসে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও।

এ দিন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক জন রোগীর মৃত্যু হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার রাতেই তিনি মারা যান। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মৃতের নাম পুষ্পা রায় (৭৫)। জলপাইগুড়ি থানা এলাকার দেউনিয়াপাড়া এলাকায়। ২৩ জুলাই খিঁচুনি জ্বর নিয়ে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ২৩ জন জেই-তে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। গত চার দিনে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে এইএস-এ মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। তাদের মধ্যে একজন অসমের বাসিন্দা। হাসপাতালের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে মারা যান এক জন পুরুষ এবং এক জন মহিলা। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করার সময় মৃত্যু হয় এক মহিলার। শনিবার দুপুরে অসমের ফকিরাগ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীবালা বর্মন (৪৫) এবং কুমরাগ্রামের সমীর তিরকে (২২)-র মৃত্যু হয়েছে। যে সমস্ত রক্তের নমুনা বিভিন্ন জেলা থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যেও জেই রয়েছেন অনেকের। যাদের শরীরে প্রথমে জেই ভাইরাস মেলেনি, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষায় জেই মিলেছে। তাই চিকিৎসকদের একাংশের দাবি এইএস-এ কী কারণে রোগী অসুস্থ হয়েছে সেই জীবাণু শনাক্ত করা না গেলেও উত্তরবঙ্গে জেই-র সংক্রমণই বেশি।

গত তিন বছরে জেই এবং এইএস-এ প্রতি বার শতাধিক করে রোগী মারা গিয়েছেন। গত বছর ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞরাও সে বছর ঘুরে গিয়েছিলেন। জেই ছাড়া, জলের থেকেও রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা তাঁরা জানিয়েছিলেন। এর পরেই এ বছর দেশের মধ্যে প্রথম জেই টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয় উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলার মোট ৯টি ব্লকে। তবে ৫৪টি ব্লকের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি প্রতিষেধকের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায়। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জেই টিকা সরবরাহ করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement