মারণ রোগ ক্যানসারকে দূরে রাখুন। ফাইল ছবি।
চরিত্রগত দিক থেকে থেকে কোভিড-১৯-এর সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। রুপোলি পর্দার নায়ক থেকে খেলোয়াড় কিংবা রাজনৈতিক নেতা, কাউকেই পরোয়া করে না কর্কট নামক মারণ রোগ। নভেল করোনা ভাইরাসের সঙ্গে তার প্রধান তফাত এটি ছোঁয়াচে নয়। অসুখটির নাম ক্যানসার। সঞ্জয় দত্ত থেকে শুরু করে ঋষি কপূর কিংবা সেই মানুষটি, যিনি প্রযুক্তিকে হাতের মুঠোয় করে রেখেছিলেন সেই স্টিভ জোবসও ক্যানসারের কাছে হার মেনেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০১৮ সালে বিশ্বের ৯.৬ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারের কবলে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যেক বছর নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন তিন লক্ষ মানুষ।
কিন্তু রোজের জীবনযাত্রায় কিছুটা রদবদল করতে পারলে দূরে সরিয়ে রাখা যায় ক্যানসারকে। এই মারাত্মক অসুখ প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে বরাবর সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন ক্যানসার চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কর্কট রোগের কাছে হেরে যান তিনি নিজেও।
আরও পড়ুন: কী ভাবে শুরু হয়েছিল হাত ধোওয়া, কতটা জরুরি এখন
কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, অন্য দিকে বেশ কিছু খাবার ক্যানসারের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
প্রাচীন ধারণা, নিরামিষ খাবার শরীর সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। পুষ্টি বিজ্ঞানীরাও আজ সে কথা মানেন। ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন, উদ্ভিজ্জ খাবারে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস। টাটকা ফল সবজিতে থাকা এই সব উপকারি উপাদান ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্যানসার রুখে দিতে পারে বলে জানালেন ইন্দ্রাণী। তবে বোতলবন্দি ফলের রস বা প্যাকেটজাত মিষ্টির রসে ভরা ফল না খেয়ে টাটকা তাজা ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। পেয়ারা, আম, জাম, আপেল, কলা-সহ যে কোনও টাটকা ফলমূল ও বিট, কুমড়ো, টোম্যাটো, ঢেঁড়সের মত সব্জি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: কোমরের ব্যথায় ইচ্ছে মতো ওষুধ খান? কতটা ক্ষতি করছেন জানেন
ক্যানসার প্রতিরোধ সহ আমাদের সামগ্রিক ভাবে ভাল রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু ফল ও সবজি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। অবশ্য তালিকা মিলিয়ে নিয়ম করে প্রত্যেক দিনই যে এসব সবজি ও ফল খেতে হবে তা নয়, চেষ্টা করবেন রোজের খাবারের তালিকায় মরসুমি সবজি ও ফল রাখার।
যেমন-
কলা- বছরভর পাওয়া যায়। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ কলা খাওয়া যেতে পারে। সেলেনিয়ামের সক্রিয় যৌগের এক শক্তিশালি উৎস এই ফল। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করার পাশাপাশি ক্যানসার কোষ বিনষ্ট করতে পারে ।
আপেল- দাম বেশি হলেও সারা বছরই এই ফল বাজারে মিলবে। এতে আছে প্রোসায়ানিডিনস, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে কার্যকর।
আরও পড়ুন: করোনা হয়নি, প্রবল জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি, আর কী বললেন সেরে ওঠা রোগী
ডালিম বা বেদানা- থাকে ফলিফেনল নামে এক যৌগ, যা ক্যানসার সৃষ্টকারী কোষ ধ্বংস করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।
কালো আঙুর- আছে রেসভেরাট্রল, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
কমলালেবু- একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যানসার ফাইটার। কমলালেবুর কোয়ায় থাকা ২_হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড (২_এইচএফ) স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা নেয়।
অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যুক্ত খাবারে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। ফাইল ছবি
কমলালেবুর রস নয়, লেবুর কোয়া চিবিয়ে খেলে তবেই ২_হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড পাওয়া যাবে। সারা বছর কমলা লেবু পাওয়া যায় না। তাই যে কোনও লেবু, তা সে বাতাবি লেবু হোক বা পাতিলেবু, খেলে সামগ্রিক ইমিউনিটি জোরদার হয়।
আরও পড়ুন: শুধু পান করবেন কেন, কফি ব্যবহার করুন এ ভাবেও
টোম্যাটো- লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের মহা শত্রু। তাই রোজকার ডায়েটে টোম্যাটো রাখতে ভুলবেন না।
ব্রকোলি- আদতে বিলিতি এই সব্জি এখন আমাদের দেশেও সুলভ। এই সবুজ রঙের সব্জিটি ইনডোল-৩ কারবিনোল নামক ফাইটোকেমিক্যালসের এক অন্যতম ভাণ্ডার। এই উপাদানটি ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে।
বিট- এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা সায়ানিন। যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
নটে শাক- যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যামারান্থাস ভিরিডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যানসাররোধক।
বিট বা ব্রকোলি না পেলেও সুলভে বাজারে লাল বা সবুজ নটে শাক পাবেন । সপ্তাহে ৩/ ৪ দিন এই শাক খেলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হবে।
তবে শুধু ক্যানসার রোধক খাবার খেলেই চলবে না, সিগারেট সহ তামাককে জীবন থেকে বিদায় জানাতে হবে। ওজন ঠিক রাখতে নিয়ম করে শরীরচর্চা করা জরুরি, মন ভাল রাখতেই হবে। মানসিক চাপ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। মন ভাল রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যানসার ও নভেল করোনা সহ অসুখ-বিসুখ দূরে সরিয়ে রেখে সুস্থ ভাবে বাঁচুন।