বিয়েবাড়ির সাজগোজ বলতে প্রথমে মহিলাদের কথাই মনে হয়। তবে পুরুষেরাও আজকাল সাজগোজের বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। তা যদি হয় অম্বানী বাড়ির বিয়ে, তা হলে তো কথাই নেই। সেই অনুষ্ঠান যে আর পাঁচটা বিয়েবাড়ির চেয়ে আলাদা হবে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাজগোজ, গয়নার কথা বললে অম্বানী বাড়ির মেয়ে-বৌরা সব দিক থেকে এগিয়ে। তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা দেশ। তবে পুরুষদেরও তো কিছু শখ-শৌখিনতা থাকে। আংটি, গলার হার, ব্রেসলেট নয়, মুকেশ এবং নীতা অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্তের শখ ব্রোচের।
পোশাক যেমনই হোক, তার সঙ্গে চাই মানানসই ব্রোচ। অনন্তের ব্রোচের সংগ্রহ দেখলে রীতিমতো তাক লেগে যেতে পারে সকলের। প্রাক্-বিবাহ, বিয়ে এবং বিবাহ-পরবর্তী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বহুমূল্য পাথর, রত্ন এবং ধাতু দিয়ে তৈরি একাধিক ব্রোচ পরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
তবে সেই সব ব্রোচেরএকটি বিশেষত্ব রয়েছে। সব ক’টি ব্রোচেই রয়েছে কোনও না কোনও প্রাণীর মোটিফ। অনন্ত পশুপ্রেমী। পশু সংরক্ষণ ও তাদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে ‘বনতারা’ উদ্যোগ চালু করেছেন অনন্ত। পশুদের প্রতি তাঁর এই ভালবাসার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয় ব্রোচগুলি।
দ্য প্যান্থার ডি কার্টিয়ার ব্রোচ: রাধিকার সঙ্গে বাগ্দানের দিন ভাই আকাশ অম্বানীর দেওয়া একটি ব্রোচ পরেছিলেন অনন্ত, যা তৈরি হয়েছিল ১৯১৪ সালে। রাজস্থানের শ্রীনাথজি মন্দিরে রাধিকার সঙ্গে ‘রোকা’ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় অনন্তের। সেই অনুষ্ঠানে অনন্তের কালো গলাবন্ধ পোশাকের উপর শোভা পেয়েছিল এই ব্রোচটি।
সোনা এবং প্ল্যাটিনাম দিয়ে তৈরি এই ব্রোচে রয়েছে ৬০৫টি হিরে, ৪টি পান্না এবং ৫১টি পোখরাজ। কালো রঙের গোলাকৃতি অনিক্স পাথরের উপর বসে রয়েছে প্যান্থার। যার চোখে বসানো রয়েছে পান্না।
এই ব্রোচটির বিশেষত্ব হল, এটিকে যেমন খুশি ব্যবহার করা যায়। প্যান্থারের ঘাড় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ কায়দায় ঘুরিয়ে নিলেই ব্রোচটিকে হারের সঙ্গে লকেট, কানের দুল কিংবা আংটি হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। ভারতীয় মুদ্রায় ব্রোচটির দাম প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
টাইগার ব্রোচ উইথ পিঙ্ক ফেদার: দীর্ঘ প্রাক্-বিবাহ পর্ব শেষে ১২ জুলাই চার হাত এক হয়েছে অনন্ত-রাধিকার। রবিবার, অর্থাৎ ১৪ তারিখ ছিল বৌভাত বা ‘মঙ্গল উৎসব’। সেই অনুষ্ঠানেও অনন্তের বুকে দেখা গেল বিশেষ একটি ব্রোচ।
ক্রিস্টাল বসানো ফুলেল নকশা করা ঘন নীল রঙের শেরওয়ানি পরেছিলেন অনন্ত। সোনা দিয়ে তৈরি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, গায়ে বসানো কালো এবং সাদা বহুমূল্য পাথর। সঙ্গে গোলাপি রঙের পাথর বসানো একটি পালকের প্রতিকৃতি। নয় নয় করে সেই ব্রোচটির দামও কয়েক কোটির উপর।
লর্ড গণেশ ব্রোচ: চলতি বছর মার্চ মাসে গুজরাতের জামনগরে প্রাক্-বিবাহের একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে হবু বর অনন্ত পরেছিলেন প্যাস্টেল কমলা রঙের পাঞ্জাবি। তার উপরে ওই রঙেরই জমকালো নেহরু জ্যাকেট।
সেই পোশাকের উপর বসানো ছিল গণেশ মূর্তির আকারে তৈরি ব্রোচটি। রুপোলি রঙের গণপতি মূর্তির অবয়ব জুড়ে ছিল হিরের চূর্ণ।
লর্ড শ্রীনাথ ব্রোচ: বিবাহ অনুষ্ঠানে সম্পন্ন হওয়ার পর নবদম্পতির জন্য ছিল ‘শুভ আশীর্বাদ’ পর্ব। সেই অনুষ্ঠানে পরার জন্যেও অনন্ত বিশেষ একটি ব্রোচ তৈরি করিয়ে রেখেছিলেন।
কালচে লাল রঙের শেরওয়ানির উপর সোনার জরির নকশায় ক্রিস্টাল বসানো শেরওয়ানি পরেছিলেন তিনি। সেই পোশাকের বাঁ দিকে ছিল শ্রীনাথজি ব্রোচটি। মূর্তির মুকুট এবং হারে বসানো হিরে, পান্না। শ্রীনাথজির গায়ের উত্তরীয়টি গোলাপি রঙের বহুমূল্য পাথরখচিত।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ব্রোচ: অনন্ত-রাধিকার সঙ্গীতের অনুষ্ঠানও ছিল চোখধাঁধানো। নীল রঙের গলাবন্ধ পোশাকের উপর আসল সোনা দিয়ে তৈরি জরির ঠাসবুনোট কাজের জ্যাকেট পরেছিলেন তিনি। বুকের বাঁ পাশে দেখা গিয়েছিল এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ব্রোচটি।
আকারে অনেকটা পায়রার ডিমের মতো, চুনির উপর সোনা এবং প্ল্যাটিনাম দিয়ে তৈরি বাংলার বাঘ বসানো হয়েছে ব্রোচটির উপর। তার চারদিকে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য হিরে। দাম কয়েক কোটি তো বটেই।
দি এলিফ্যান্ট ব্রোচ: বিয়ের দিন কমলা রঙের যে শেরওয়ানি পরে অ্যান্টিলিয়া থেকে ‘লগন’ উৎসবের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন অনন্ত, সেই পোশাকের উপরেই ছিল হাতির ব্রোচটি। যার দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি টাকার মতো।
হাতিটি সোনালি রঙের। তার সারা গায়ে বসানো রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য হিরে। গজরাজের মাথায় রয়েছে চোখের মণির আকারের একটি হিরের টুকরো।
ব্রোচের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় সকলের নজরে পড়েছে। সেটি হল অনন্তের মাথার কলগি। প্রায় একশো ক্যারেট হীরকখণ্ড বসানো রয়েছে সেই কলগিতে। লাল এবং সোনালি কাজের ‘সাফা’র উপর বসানো ছিল ওই বহুমূল্যের কলগিটি।
এমারেল্ড প্যান্থার ব্রোচ: বিয়ের সময়ে অনন্তের পোশাকে দেখা গিয়েছিল সবুজ রঙের পান্না বসানো ব্রোচটি। প্রায় ৭২০ ক্যারেট জ়াম্বিয়ান পান্নার উপর বসানো হয়েছে একটি প্যান্থার। বিশেষ এই ব্রোচটি দাদার থেকে উপহার হিসাবে পেয়েছেন অনন্ত।
লরেন স্কোয়ার্টজ় ইয়েলো লায়ন ব্রোচ: ব্রোচে হলুদ হিরের দ্যুতি। সারি সারি হলুদ হিরে বসিয়ে তৈরি হয়েছে সিংহের অবয়ব। ঠিক যেন বিশ্রামরত পশুরাজ। তার দুই চোখে বহুমূল্য পান্না বসানো। মুখ থেকে ঝুলছে বিশাল হীরকখণ্ড।
এমন ব্রোচ ভারতে আর কারও নেই। একমাত্র রয়েছে ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর ছোট ছেলে অনন্তের সংগ্রহে। প্রাক্-বিবাহ পর্বে ‘হস্তাক্ষর’ অনুষ্ঠান পর্বে অনন্তের সাজে এই ব্রোচই সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল।
এই ব্রোচ তৈরি করেছেন বিশ্বখ্যাত মার্কিন জহুরি লরেন শোয়ার্টজ়। গোটা ব্রোচটিই তৈরি হয়েছে হলুদ রঙের হিরে দিয়ে। লরেন জানিয়েছেন, অনন্ত অম্বানীর পশুপ্রেমের কথা মাথায় রেখেই সিংহের আদলে ব্রোচটি তৈরি করা হয়েছে।
সিংহের দুই চোখে তিনি বসিয়ে দিয়েছেন দামি পান্না। সিংহের মুখ থেকে ঝুলছে বিশাল একটি হিরে। ব্রোচটি প্রায় ৫০ ক্যারাট হিরে দিয়ে তৈরি।