রক্ত অমিল, সমস্যা মেটাতে তাই এ বার পঞ্চায়েত স্তরে রক্তদান শিবিরের কথা ভাবছে প্রশাসন।
গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের আর পাঁচটা হাসপাতালের মতোই বোলপুর মহকুমা হাসপাতালেও দেখা দিল রক্তের আকাল। ব্লাড ব্যাঙ্কের হিসাব বলছে, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের একাধিক গ্রুপের রক্তের টান রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে ‘ও’ নেগেটিভ, ‘বি’ নেগেটিভ গ্রুপ্রের রক্ত একেবারে অমিল। চার দিন ধরে নেই ‘এ’ পজিটিভ গ্রুপের রক্তও। এ ক’দিন এক ইউনিট করে ছিল ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। শুক্রবার যা অমিল!
রক্তের এই আকাল মেটাতে শুক্রবার বোলপুর ব্লকের বিডিও-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রক্তের সঙ্কট কাটাতে, দ্রুত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির আয়োজনের কথা বলেন তাঁরা। বিডিও শমীক পাণিগ্রাহী আশ্বাস দেন, সংশ্লিষ্ট ব্লকের পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার রক্তের সঙ্কট মেটাতে জন সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতেও দ্রুত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজনের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন উদ্যোক্তারা।
বোলপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক তীর্থঙ্কর চন্দ্র বলেন, ‘‘রক্তের এই আকালে হাসপাতালে রোগীর পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে অবিলম্বে দ্রুত রক্তদান শিবিরের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’’
রক্তের এই আকাল নতুন নয়। ফি বছর রাজ্যের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই দেখা যায় এই সমস্যা। গরম পড়ার পর থেকে রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতাল গুলির মতো এই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতেও ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। সঙ্কট মেটাতে কোথাও কোথাও হাসপাতালের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়। আবার কোথাও খোদ হাসপাতালের কর্মীরা নিজেরাই রক্ত দান করেন। জরুরীকালীন অবস্থায় থাকা রোগী, অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা রোগী এবং থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের অবস্থা সর্বত্র সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে ওই সব রোগীদের আত্মীয় পরিজনদের দাবিও তেমনই। কখনও কখনও তাঁরা ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখান। এবারও ওই সকল রোগীদের রক্তের যোগান দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের পরিবারের লোকদের।
এক রোগীর আত্মীয় জানালেন, ‘‘আতঙ্কে দিন কাটছে। এই বুঝি রক্তের অভাবে সব শেষ হয়ে যাবে। অবস্থাপন্ন রোগীর পরিবারের লোকেরা টাকার বিনিময়ে রক্তের যোগানের জন্য যে ব্যাবস্থা নিচ্ছেন তা সকলের কপালে জুটছে না। ফলে স্বাভাবিক কারণে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’’ এমন সংকটজনক এবং মরণাপন্ন পরিস্থিতিতে রক্তের আকাল মেটাতে রক্তদাতা খুঁজে পেতে নাজেহাল হচ্ছেন রোগীর পরিবার।
বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রীষ্মকালে রক্তের সঙ্কট কোনও নতুন ঘটনা নয়। হাসপাতালে প্রতি মাসে চাহিদা ৫০০ ইউনিট রক্তের। কিন্তু গরম পড়ার সময় ২০০ থেকে ২৫০ ইউনিট স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে পাচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্ক। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বোলপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের একাধিক গ্রুপের রক্তের তালিকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শূন্য রয়েছে রক্ত মজুতের পরিমাণ। এমন অবস্থায় জরুরিকালীন রোগীদের নিয়ে নাজেহাল যেমন পরিবারের লোকজন তেমনই সমস্যায় পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। কারণ রক্তের অভাবে কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের ওই সমস্ত রক্তের যোগান সম্পর্কিত পরিষেবা।” কেমন ভাবে চলছে রক্তের যোগান?
ব্লাড ব্যাঙ্ক সুত্রে জানা গিয়েছে, কিডনি, অস্ত্রোপচার ছাড়াও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়মিত ব্যবধানে রক্তের প্রয়োজন। রক্ত মজুতের পরিমাণ ফুরিয়ে গেলে, রক্তদাতার খোঁজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে রোগীর পরিবারকে বলে দেওয়া হচ্ছে রক্তদাতা নিয়ে আসতে। পরিস্থিতি এমনই, রক্তদাতার যদি সন্ধান না মেলে সেক্ষেত্রে রোগীদের ফেরানো ছাড়া অন্য কোন রাস্তা থাকে না ব্লাড ব্যাঙ্কের।
বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অমিত মজুমদার বলেন, “আমরা সবরকম ভাবে চেষ্টা করছি প্রয়োজন মতো রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ক্লাবগুলির কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। রক্তদান সম্পর্কিত জনসচেতনতা বাড়াতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদের যাতে এই অভিযানে সামিল করা যায় এবং তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সমাজের সকলস্তরের কাছে রক্তদানের গুরুত্ব পৌঁছানো যায় সে নিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে।’’
ঘটনা হল, বোলপুরের মহকুমা হাসপাতালের রক্ত ভাণ্ডার এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে থেকে রক্তের যোগান মেটানোর জন্য নির্ভর করতে হয় স্থানীয়দের। ওই সমস্ত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির আয়োজনকারী সংগঠন জানায়, জরুরীকালীন অবস্থার রোগী থেকে শুরু করে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য প্রায় নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁদের পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করেন। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে তো রক্তের মজুত প্রয়োজন মতো নেই। কী ভাবে তাহলে ওই রোগীরা বা তাঁদের আত্মীয়রা রক্তের যোগান পাবেন।
বোলপুরের বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী বলেন, “রক্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতের প্রধান ও ব্লকের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে।”