অনেকেই খাবারে রসুনের গন্ধ একেবারে সহ্য করতে পারেন না। অনেকের আবার ধারণা, রসুন খেলে শরীর গরম হয়, যা আদতে খারাপ। তাই রসুন খাওয়া উচিত কি না, এ বিষয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। সত্যিটা কী?
হরেক গুণ
রসুনের মধ্যে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। শরীর ভাল রাখা ছাড়াও বিশেষ কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে রসুন প্রায় বিকল্পহীন।
• রসুন রক্ত পরিষ্কার রাখার কাজ করে। তাই মুখে বা ত্বকে নানা র্যাশ, চুলকানি প্রায়শই যদি ব্লাড ইমপিয়োরিটির কারণে হয়, তা হলে রোজ রসুন খেতেই পারেন। রোজ দু’কোয়া রসুনই এর জন্য যথেষ্ট। সকালে এই কাঁচা রসুনের সঙ্গে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে জল।
• শরীরের টক্সিন বার করতেও সাহায্য করে রসুন। এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে অর্ধেক পাতিলেবুর রস আর দু’কোয়া রসুন কুচি গুলে খেলে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ক্ষতিকর টক্সিন।
• যাঁদের ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে, তাঁদের জন্য রসুন খুবই উপকারী। এর জন্য গার্লিক টি বানিয়ে খেতে পারেন। গরম জলে থেঁতো করা রসুন ফুটিয়ে নিয়ে, তার পরে ছেঁকে পান করতে হবে। আবার প্রথম পাতে গরম ভাতের সঙ্গে ঘিয়ে ভাজা রসুন খেতে পারেন। ঠান্ডা লাগা তো কমবেই, সাইনাসাইটিসের কষ্ট থেকেও রেহাই মিলবে। রোজ রসুন খেলে নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা যেমন নিয়ন্ত্রণে আসে, তেমনই পুরো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে।
• কাঁচা খাওয়া হোক কিংবা রান্না করা... রোজকার তালিকায় রসুন থাকলে তা কোলেস্টেরল কমায়। ভাল থাকে হার্ট।
• রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি প্যারাসাইটিক গুণাগুণ। শরীরে খারাপ ব্যাকটিরিয়া, ফাঙ্গাস আর প্যারাসাইটের মোকাবিলা করতে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে রসুন খাওয়ার ইতিহাস বেশ পুরনো। এমনকি টেপওয়র্ম জাতীয় কৃমি থেকে রেহাই পেতেও খাওয়া যেতে পারে রসুন।
• ইদানীং কালের নানা সমীক্ষা বলছে, রোজ রসুন খেলে বিশেষ কিছু ধরনের ক্যানসারের মোকাবিলা করা যায়। স্টম্যাক ও কোলোরেকটাল ক্যানসারের আশঙ্কাও কমায় রসুন।
• ব্রণ বা বড় পিম্পলের মুখে রসুন কেটে খানিকক্ষণ ধরে রাখলে জ্বালা কমে। আবার ত্বকের কোলাজেন রক্ষা করতে সাহায্য করে বলে রসুনকে বলা যেতে পারে অ্যান্টিএজিংয়ের অন্যতম দাওয়াই।
• ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘রসুনের মধ্যে নানা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায়, রোজ অল্প রসুন খাওয়াই যায়। কোলেস্টেরল ছাড়াও এটি নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে সুগারের মাত্রা। এতে রয়েছে হাই সালফারও। তবে বেশি রান্না করলে রসুনে থাকা অ্যালিসিন নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও লোকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, রসুন খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়। এর কোনও সত্যতা এখনও অবধি জানা যায়নি।’’
মনে রাখা প্রয়োজন তবে রসুন খেতে হলে তার রয়েছে কিছু বিধিনিষেধ।
• রসুন খেলে তা কাঁচা কিংবা অল্প রোস্ট করে খাওয়াই ভাল। রান্নার মশলায় বেটে দেওয়া রসুনে খাবারের স্বাদ খোলে ঠিকই, কিন্তু তাতে পুষ্টিগুণ তেমন থাকে না বললেই চলে।
• রসুন খেতে হলে দিনে দু’-তিন কোয়ার বেশি না খাওয়াই ভাল। এর চেয়ে বেশি পরিমাণে রসুন খেতে হলে চিকিৎসক এবং ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
• যে কোনও সার্জারি বা অপারেশনের আগে অনেক সময়ে চিকিৎসকেরা রসুন খেতে নিষেধ করেন। ফলে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
• রসুন শরীর গরম রেখে ঠান্ডা লাগার ধাত কমায় ঠিকই। তবে হাঁপানির সমস্যা থাকলে রসুন খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
তাই ঠান্ডার মরসুমে শরীর ভাল রাখতে অল্প পরিমাণে রসুন হতেই পারে আপনার নিত্যসঙ্গী।