ছোটদের মনে তো অনেক জিজ্ঞাসা। কিন্তু উত্তর মেলে কই? প্রতীকী ছবি।
বব ডিলান কবেই লিখেছিলেন, ‘...দি আনসার মাই ফ্রেন্ড ইজ় ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড...’। সেই হাওয়ায় উড়ে বেড়ানো প্রশ্নদেরই সম্প্রতি ধরে ফেলা হল শীতের এক ওম-মাখা দুপুরে। পাম অ্যাভিনিউয়ের পাঠভবন স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে।
ছোটদের মনে তো অনেক জিজ্ঞাসা। কিন্তু উত্তর মেলে কই? কেউ কি তোমার টিফিন খেয়ে নেয়? তুমি কিছু বলতে পার না? স্কুল থেকে এসেই কি তোমায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে চলে যেতে হয়? বিশ্রাম নেওয়ার সময়ই পাও না? মা কি তোমাকে প্রিয় কার্টুন দেখতে দেন না? ছবি আঁকলে বাবা-মা বলেন এটা এঁকো না? রোবটের ছবি আঁকলে বাবা-মা বারণ করেন? মোবাইল চাও, অথচ পাচ্ছ না? এ রকম হাজারও না-মেলা প্রশ্নের উত্তর দিতেই পাম অ্যাভিনিউয়ের পাঠভবন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে হয়ে গেল অন্য ধারার অনুষ্ঠান। আনন্দমেলা পত্রিকা ও হামি ২ ছবির যৌথ প্রয়াসে এই অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল ‘ছোটদের মন পড়া’। অর্থাৎ, ছোটদের মনকে পড়ে ফেলাই এই অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু, কারণ পড়তে পারলে তবেই তো তাকে শুশ্রূষা করে ভাল করা যাবে।
পাঠভবনের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা ও অন্য শিক্ষিকারা-সহ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হামি ২ ছবির পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী, ছবির খুদে কলাকুশলীরা এবং মনোবিদ অভিরুচি চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আনন্দমেলার সম্পাদক সিজার বাগচী। ছোটদের থেকে প্রশ্নগুলি খুঁড়ে বার করে তিনি কখনও ‘মনোবিদ কাকু’, কখনও ‘গার্গী আন্টি’ বা ‘শিবপ্রসাদ কাকু’কে অনুরোধ করছিলেন সহজ সমাধানের জন্য। কখনও নিছক মজার খুনসুটি মাখা, কখনও আবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে উঠে এল সমাধানের পথ। সাত বছরের এক শিশু মোবাইল পেয়েছে শুনে তাঁকে দেখতে চাইলেন শিবপ্রসাদ। আবার ‘বন্ধুরা টিফিনে আনা মাংস খেয়ে ফেলেছে’— এই অভিযোগ শুনে পরের দিন মাংস আনলে তাকেই খবর দিতে বললেন। গার্গী আবার এই স্কুলেরই প্রাক্তনী। তিনি বলেই ফেললেন, ‘‘এখন ছোটরা অনেক শান্ত। আমরা কিন্তু এতটা ছিলাম না।’’
শুধু ছোটরাই নয়, অভিভাবকেরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানে। উঠে এল, লকডাউনে অত্যধিক মোবাইল-আসক্তির ফলে ছোটদের কিছু বিপজ্জনক প্রবণতার কথাও। তার মধ্যে রয়েছে অভিভাবকের মোবাইলের পাসওয়ার্ড হ্যাকিংয়ের অভিযোগও।
তবে বড়রা হাজির থাকলেও অনুষ্ঠানের মুখ্য বক্তা ছিল ছোটরাই। টিফিনে আনা মাংস বন্ধুরা খেয়ে ফেলেছে— এর সহজ সমাধান হিসেবে উঠে এল, পরের দিন টিফিনে সবচেয়ে প্রিয় খাবার আনা এবং তা সকলে মিলে ভাগ করে খাওয়ার কথা। এ ভাবেই গল্পে-আড্ডায়-খুনসুটিতে নির্মল বন্ধুতাপূর্ণ সহমর্মিতার পাঠ ছোটদের মনে চারিয়ে দিল ছোটদের মন পড়া। রেখে গেল ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক শুশ্রূষাদায়ী অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার।