হাতে তিন সপ্তাহের একটু বেশি সময় পড়ে রয়েছে নিট পরীক্ষার জন্য। এই ক’টা দিন বায়োলজি বিষয়টা পরিকল্পনা করে ঝালিয়ে নিতে হবে।
বায়োলজিতে দু’ধরনের অধ্যায় থাকে। এক ধরনের অধ্যায় থেকে শুধু তথ্যমূলক প্রশ্ন আসে। যেমন, জীবের বৈচিত্র, উদ্ভিদ ও প্রাণীর গঠনতন্ত্র, কোষ, মানুষের রোগসমূহ, খাদ্য উৎপাদনে উন্নতিসাধন, মানব উন্নয়নে অণুজীব ও বিবর্তন।
দ্বিতীয় ধরনের অধ্যায় থেকে কনসেপচুয়াল প্রশ্ন আসে। যেমন, সজীব কোষের রাসায়নিক উপাদান, কোষ বিভাজন, উদ্ভিদ শারীরবিদ্যা, মানব শারীরবিদ্যা, জনন, বংশগতি, জৈব প্রযুক্তিবিদ্যা, অনাক্রম্যতাবিদ্যা এবং বাস্তুবিদ্যা ও পরিবেশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রথম ধরনের অধ্যায়গুলি থেকে শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক ও ছবি দিয়ে প্রশ্ন থাকে। দ্বিতীয় ধরনের অধ্যায়গুলি থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকে। যেমন, স্তম্ভ মেলানো, পর্যায়ক্রমে সাজানো, সত্য বা মিথ্যা নির্বাচন করতে দেওয়া ইত্যাদি।
ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য এখানে কয়েকটি প্রশ্ন আলোচনা করা হল যাতে পরীক্ষার সময় তারা ঠিকমতো প্রশ্নোত্তর বাছাই করতে পারে।
অনাক্রম্যতাবিদ্যা থেকে বিভিন্ন অনাক্রম্যতা গঠনকারী কোষ, অ্যান্টিবডির গঠন, টিকার প্রকারভেদ দেখে রাখবে। যেমন,
প্রশ্ন: নীচের কোনটি সত্য নয়?
ক) প্রথম জেনারেশন টিকা— OPV, MMR, কলেরা
খ) দ্বিতীয় জেনারেশন টিকা— পারটিউসিস, অ্যানথ্রাক্স, ডিপথিরিয়া
গ) তৃতীয় জেনারেশন টিকা— ইবোলা, ইউফ্লুয়েঞ্জা, ক্যান্সার
ঘ) রিকম্বিন্যান্ট টিকা— HPV, HSV, রোটা ভাইরাস
উত্তর: (গ)
জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা থেকে রেসট্রিকশন এন্ডোনিউক্লিয়েজ (RE) উৎসেচকের কাজের ক্ষেত্রে মনে রাখবে—
ক) যারা ডিএনএ-র রেসট্রিকশন সাইটে গুয়ানিন ও অ্যাডেনিনের মধ্যবর্তী অংশ কাটে, তারা আঠালো প্রান্ত তৈরি করে।
যেমন, ECoRI, HPaII, BamHI
খ) যারা রেসট্রিকশন সাইটে গুয়ানিন ও সাইটোসিন অথবা অ্যাডেনিন ও থাইমিনের মধ্যবর্তী অংশ কাটে, তারা ভোঁতা প্রান্ত তৈরি করে।
যেমন, HPaI
হার্ডি ওয়েনবার্গের মূল নীতির উপর প্রশ্নগুলি উত্তর দেওয়ার সময় মনে রাখবে—
নির্দিষ্ট জিনের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন অ্যালিলের ফ্রিকোয়েন্সির সমষ্টি সর্বদা ১, অর্থাৎ (p + q = 1) এবং p2 + 2pq + q2 = 1
প্রশ্ন: যদি কোনও পপুলেশনে কালো মথ (প্রচ্ছন্ন) ফ্রিকোয়েন্সি ১৬ শতাংশ হয়, তা হলে ওই পপুলেশনে হোমোজাইগাস প্রকট (সাদা মথ) জীবের শতকরা ভাগ কত হবে?
ক) ১৬ শতাংশ খ) ৩৬ শতাংশ গ) ৬০ শতাংশ
ঘ) ৪ শতাংশ
উত্তর: খ)
ব্যাখ্যা: q2 = 16%
q = √0.16 = 0.4
p = 1 – 0.4 = 0.6
p2 = 0.6 x 0.6 = 36%
সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক অংশ থেকে এ রকম প্রশ্ন আসে—
প্রশ্ন: ১০০টি বীজ গঠন করতে কতগুলি ডিম্বক, পরাগরেণু চতুষ্টয়, মিয়োসিস এবং পুংগ্যামেট প্রয়োজন?
ক) ১০০, ২৫, ২৫, ২০০
খ) ১০০, ২৫, ১০০, ২০০
গ) ১০০, ২৫, ২৫, ১০০
ঘ) ১০০, ২৫, ১২৫, ১০০
উত্তর: ঘ)
ব্যাখ্যা: মনে রাখবে, একটা পুংজনন কোষ + একটা ডিম্বাণুর নিষেক = একটি বীজ। আর মনে রাখবে, a সংখ্যক পুংজনন কোষ তৈরিতে যতগুলি মিওসিস বিভাজনের প্রয়োজন, তা হল a/4;
তবে a সংখ্যক ডিম্বাণু তৈরিতে লাগে a সংখ্যক মিয়োসিস বিভাজন। অর্থাৎ, a সংখ্যক বীজ তৈরিতে মিওসিস বিভাজনে অংশ নেয় (a + a/4) সংখ্যক।
মানব প্রজনন অংশ থেকে রজঃচক্রের
বিভিন্ন দশার উপর প্রশ্নের উত্তর করতে হলে,
মনে রাখবে—
১) রজঃস্রাবীয় দশায় জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের রক্তজালক বিদীর্ণ হয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ডিম্বাশয়ে কর্পাস লিউটিয়াম নষ্ট হওয়ায় প্রোজেস্টেরনের ক্ষরণ কমে।
২) ক্রমবর্ধনশীল দশায় জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর স্বাভাবিক হয়। ডিম্বাশয়ে পরিণত গ্রাফিয়ান ফলিকল গঠিত হয়। ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়।
৩) ডিম্বাণু নিঃসরণ দশাতে জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের বৃদ্ধি ঘটে। ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল বিদীর্ণ হয়ে গৌণ পরডিম্বাণু নির্গত হয়।
৪) প্রাক রজঃস্রাবীয় দশায় জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি হয় ও রক্তজালকগুলি অধিক কুণ্ডলিত হয়। ডিম্বাশয়ে বিদীর্ণ গ্রাফিয়ান ফলিকল পরিবর্তিত হয়ে কর্পাস লিউটিয়াম গঠন করে।
এই অংশের প্রশ্নে রজঃচক্রের বিভিন্ন দশায় জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের পরিবর্তনগুলির উপর এমসিকিউ থাকে।
অমরা থেকে কাজের উপর প্রশ্ন আসে এবং সেগুলি মূলত বিভিন্ন পদার্থের আদানপ্রদান ও ক্ষরিত হরমোনের উপর। এ ক্ষেত্রে এই ছকটি মনে রাখবে—
বংশগতি অধ্যায় থেকে কনসেপচুয়াল প্রশ্ন এমসিকিউ আকারে থাকবে। মনে রেখো —
• জননকোষের প্রকারভেদ: 2n
• জাইগোটের সংখ্যা: (জননকোষ)n
• ফিনোটাইপের সংখ্যা: 2n
• জিনোটাইপের সংখ্যা: 3n
[সকল ক্ষেত্রে n = বৈশিষ্ট্য সংখ্যা]
• মাল্টিপল অ্যালিলিজমের ক্ষেত্রে ফিনোটাইপ সংখ্যা: n + 1 এবং জিনোটাইপ সংখ্যা: (n/2)(n +1) [এখানে n হল অ্যালিল সংখ্যা]
• পলিজিনের ক্ষেত্রে n যদি পলিজিন যুগ্মকে বোঝায়, তবে ফিনোটাইপ সংখ্যা (2n + 1) এবং জিনোটাইপ সংখ্যা 3n হবে।
সালোকসংশ্লেষ অধ্যায়ের ক্ষেত্রে মনে রাখবে—
১) এমারসনের পরীক্ষা থেকে জানা যায়,
এক অণু অক্সিজেন উৎপন্ন করতে আট অণু
ফোটন লাগে।
২) এক অণু অক্সিজেনের জন্য চারটি ইলেকট্রন অংশ নেয়। এতে Mn++, Ca++ ও Cl- আয়ন বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৩) C3 চক্রে এক অণু CO2 আবদ্ধকরণে তিন অণু ATP ও দুই অণু NADPH2 প্রয়োজন।
৪) C4 চক্র সম্পন্নকারী উদ্ভিদরা মূলত ট্রপিকাল অংশে হয়। তিনটি একবীজপত্রী গোত্রের প্রায় ছ’শো এবং পনেরোটি দ্বিবীজপত্রী গোত্রের তিনশো প্রজাতি C4 চক্র সম্পন্ন করে। এরা উচ্চ উষ্ণতাযুক্ত অঞ্চলে এবং লবণাক্ত মৃত্তিকায় জন্মায়। এক অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড আবদ্ধকরণে পাঁচ অণু ATP প্রয়োজন হয় C4 উদ্ভিদের। কম উষ্ণতায় সালোকসংশ্লেষের মাত্রা বৃদ্ধিতে এই সব উদ্ভিদ সক্ষম।
প্রশ্ন: সালোক সংশ্লেষ হার নিয়ন্ত্রক কোনটি?
ক) কার্বন ডাইঅক্সাইড আবদ্ধকরণে 10% সূর্যালোক আলোক সম্পৃত্তি ঘটায়
খ) বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্বের 0.05% বৃদ্ধি অঙ্গার আত্মীকরণকে প্রভাবিত করে।
গ) গ্রিন হাউস শস্যমাত্রেই উচ্চ ঘনত্বের কার্বন ডাইঅক্সাইডে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
ঘ) C4 উদ্ভিদে নিম্ন উষ্ণতা খাদ্য তৈরির মাত্রাকে বৃদ্ধি করে।
উত্তর: ঘ
কেমিঅসমোটিক তত্ত্বের উপর প্রশ্ন আসে। যেমন—
প্রশ্ন: কেমিঅসমোটিক তত্ত্ব কোন ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য নয়?
ক) যখন ATP-এজ উৎসেচকের কাজ উভমুখী।
খ) যখন ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট শৃঙ্খল প্রোটনকে মাইটোকন্ড্রিয়ার বাইরে স্থানান্তরিত করে।
গ) যখন কেবলমাত্র প্রোটন পরিবহন ব্যাহত হয় অথচ অন্যান্য ধনাত্মক আহিত আধান মাইটোকন্ড্রিয়ার পর্দার মধ্যে দিয়ে মুক্ত ভাবে স্থানান্তরিত হয়।
ঘ) মাইটোকন্ড্রিয়ায় প্রোটন প্রবাহ নির্ভর করে ADP এবং ফসফেটের উপস্থিতির উপর।
উত্তর: গ
ব্যাখ্যা: কেমিঅসমোটিক তত্ত্বের উপর কোনও প্রশ্নের উত্তর করার সময় মনে রাখবে—
১) মাইটোকন্ড্রিয়ার বহিঃপ্রকোষ্ঠে প্রোটনের ঘনত্ব, ধাত্র অপেক্ষা বেশি থাকে। প্রোটন অধিক ঘনত্বের স্থান থেকে F0 (অক্সিজোমের) অংশের মধ্যে দিয়ে ধাত্রে আসে।
২) প্রোটন প্রবাহকালে মুক্তশক্তি ATP সিন্থেটেজ উৎসেচক দ্বারা ATP-তে আবদ্ধ হয়।
৩) এই সময় ইলেকট্রনের স্থানান্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের হরমোনের ক্রিয়াকৌশলের ক্ষেত্রে কিছু তথ্য মনে রাখা দরকার—
১) ফ্যাটে অদ্রাব্য অথচ জলে দ্রাব্য হরমোন (যেমন, অ্যাড্রিনালিন, অগ্ন্যাশয়ের হরমোন) কোষ বহিঃস্থ গ্রাহক ছাড়া কোষ অভ্যন্তরে প্রবেশে অক্ষম। ক্যাটেকোলামাইন হরমোন কোষবহিঃস্থ গ্রাহক G-প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং অ্যাডিনাইলেট সাইক্লেজকে সক্রিয় করে দ্বিতীয় মেসেঞ্জাররূপে c-AMP গঠন করে। c-AMP দ্বারা সক্রিয় ফসফোরাইলেজ কাইনেজ উৎসেচক প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ রক্তে মুক্ত করে।
কয়েক মিনিটের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২) ফ্যাটে দ্রাব্য হরমোনের (যেমন, থাইরক্সিন, টেস্টোস্টেরন) ক্ষেত্রে মনে রাখবে— এরা গ্রাহক ছাড়াই সরাসরি কোষপর্দার মধ্য দিয়ে কোষের ভিতর প্রবেশ করে। কোষের ভিতর উপস্থিত গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জটিল যৌগ তৈরি করে। এই জটিল যৌগ নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে ট্রান্সক্রিপশন এবং ট্রান্সলেশন পদ্ধতিতে প্রোটিন গঠন করে। এই প্রোটিন গঠিত উৎসেচকের সাহায্যে নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়। অর্থাৎ, ফ্যাটে দ্রাব্য হরমোনের কাজ অনেক সময় ধরে চলে।
লেখক হুগলি ব্রাঞ্চ গভর্নমেন্ট স্কুল-এর শিক্ষক